Advertisement
E-Paper

দিল্লি ডায়েরি

গর্দানের ফরাসি যন্ত্র নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে চুল ছাঁটাইয়ের ঝাঁ-চকচকে ব্যবস্থা। রাজীব প্রতাপ রুডি থেকে রাজীব শুক্লর মতো বিজেপি, কংগ্রেস নেতারা মিলেমিশে ক্লাব চালান।

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ০০:০০
অভিনব: ‘গিলোটিন হেয়ার স্টুডিয়ো’

অভিনব: ‘গিলোটিন হেয়ার স্টুডিয়ো’

এই গিলোটিন-এ মাথা নয়, কাটা পড়বে চুল

১৯৪৭-এ সংবিধান পরিষদ তৈরি হওয়ার পর তার সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল কনস্টিটিউশন ক্লাব। সংসদের কাছেই এই ক্লাবে এখন সাংসদদের পারিবারিক অনুষ্ঠান, সভা, শারীরচর্চার আয়োজন। সেখানেই খুলেছে নতুন সেলুন ‘গিলোটিন’। গর্দানের ফরাসি যন্ত্র নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে চুল ছাঁটাইয়ের ঝাঁ-চকচকে ব্যবস্থা। রাজীব প্রতাপ রুডি থেকে রাজীব শুক্লর মতো বিজেপি, কংগ্রেস নেতারা মিলেমিশে ক্লাব চালান। কার মাথা থেকে এমন নামের ভাবনা, সে উত্তর কেউ দিতে চাইছেন না। ক্লাবে এসে কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি অবাক। বললেন, রসবোধের জুড়ি নেই। শুধু চুল কাটতে গিয়ে মুন্ডু কেটে না দিলেই হল!

সোনার বিস্কুট

হাসমুখ আঢিয়ার মুখের হাসি অধুনা বিলুপ্ত। কারণ, এক বাক্স সোনার বিস্কুট। কে বা কারা গুজরাত ক্যাডারের এই অর্থসচিবের বাড়িতে উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন, সৎ বলে পরিচিত মানুষটি পাঠিয়ে দেন সরকারি তোষাখানায়। দিল্লিতে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী প্রধানমন্ত্রীকে নালিশ করেন। চিঠি লিখে জানতে চান, কে উপহার দিল, সচিব জানাননি কেন? কেন এই উপঢৌকন, তা নিয়ে সরকার তদন্ত করবে না কেন? এক বাক্স সোনার বিস্কুট তোষাখানায় পাঠালেও আসলে তা এক বাক্স ছিল না বেশি, তার গ্যারান্টি কী? মর্মাহত হাসমুখ। আশা ছিল ক্যাবিনেট সচিব হবেন। হলে কর্মক্ষেত্রে দু’বছর আয়ুষ্কাল বাড়ত। আপাতত প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, অবসর নিয়ে গুজরাতেই ফিরবেন। কর্মজীবনের শুরুতে বই লিখেছিলেন, নোট টু মাইসেল্ফ। ফিরে তার শেষ অধ্যায়টি লিখবেন।

আবার আমিষে

কিছু দিন আগে পর্যন্তও নরেন্দ্র মোদী সরকারের নানা মন্ত্রকের অনুষ্ঠানে নিরামিষই ছিল দস্তুর। আমিষ এক প্রকার নিষিদ্ধই হয়ে গিয়েছিল। রামবিলাস পাসোয়ানের মতো শরিক দলের মন্ত্রীও নিরামিষ খাওয়ানো শুরু করেছিলেন। বেঙ্কাইয়া নাইডু এক বার আমিষ খাইয়েছিলেন বলে বিজেপির অনেকেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর মধ্যাহ্নভোজনের অনুষ্ঠানে অন্ধ্রের চিংড়ি দেখে বিজেপির অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। রাজনাথ সিংহ নিজে মাছ খান, কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেও নিরামিষ চালু হয়েছিল। নির্বাচনের আগে সরকারের শেষ বছরে ফের আমিষের ঢল। পীযূষ গয়াল রেল ও কয়লা মন্ত্রকের চার বছরের সাফল্য শোনাতে আমিষ খাইয়েছেন। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব, বর্তমানে বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজকুমার সিংহও ব্যতিক্রম নন।

মধুর প্রতিশোধ

জামা মসজিদের শাহি ইমাম মৌলানা সৈয়দ অাহমেদ বুখারি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎপ্রার্থী। মসজিদে কিছু বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অনেক দিন ধরে নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে বিবাদ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ইমামকে বলেছে, তিনি কেন দেখা করতে চান, জানিয়ে ই-মেল পাঠাতে। কী সমস্যা, কী সমাধান হতে পারে, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ইমাম চটে লাল। তাঁর ইজ্জতে লেগেছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজয় গোয়েল গিয়েছিলেন ‘সম্পর্ক সে সমর্থন’-এর অঙ্গ হিসেবে শাহি ইমামের সঙ্গে দেখা করতে। ইমাম সরাসরি ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ নিয়ে খোঁচা দিয়ে সংখ্যালঘুদের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সঙ্গে হুঁশিয়ারি: নীতি না শোধরালে তিনি যথাসময়ে মুখ খুলবেন।

দিল্লি-৬

সুস্বাদু: পুরনো দিল্লির পথে খাদ্যসম্ভার

জামা মসজিদের উল্টো দিকের বাজার মাটিয়া মহলে ঢুকতে পুরনো মিষ্টির দোকান। রমজান মাসে সেখানেই মেলে দিল্লির সেরা কিমা সামোসা, পনিরের জিলিপি। একটু দূরে হাজি মহম্মদ হুসেনের ফ্রায়েড চিকেন পাল্লা দিতে পারে নামী ব্র্যান্ডের মুরগিভাজার সঙ্গেও। মসজিদের ১ নং গেটের উল্টো দিকে কুরেশি, লাল্লু কেবাবি, কালে বাবাদের ভাঁড়ারে শামি কাবাবের পাশে সুতলি কাবাব। সুতো দিয়ে না ধরলে পড়ে যাবে, এত নরম মাংস। ১৯৭১-এ ‘মিস্টার দিল্লি’ হয়েছিলেন মহম্মদ ফাজ়িল, এ পাড়াতেই তাঁর ‘চিকেন চাঙ্গেজ়ি’র ঠিকানা। আরও আছে নবাব কুরেশির হাতে তৈরি দুধ, রুহ আফজ়ার উপর তরমুজের টুকরো ছড়িয়ে গ্লাস ভর্তি শরবত, নাম ‘প্যার-মহব্বত-মজা’। শাহি টুকরায় মুখ মিষ্টি করলেও নটেগাছটি মুড়োয় না। পেহেলওয়ান বিরিয়ানিওয়ালে-র গল্প কিন্তু রয়েই যায়। লাটিয়েন্স-এর দিল্লিতে যখন নানান নেতার বাড়িতে রাজনীতির ইফতার, গালিবের পুরনো দিল্লিতে তখন সন্ধ্যার ইফতার থেকে ভোরের সেহ্‌রি পর্যন্ত রাতভর ক্রিকেট, দাবার আড্ডা।

অনুপস্থিত অর্থ

মোদী সরকারের একের পর এক মন্ত্রী যে যাঁর মন্ত্রকের চার বছরের সাফল্যগাথা শোনাতে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন। বাদ শুধু অর্থ মন্ত্রক। অরুণ জেটলি কিডনি প্রতিস্থাপনের পর এখনও কাজে যোগ দেননি, ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী পীযূষ গয়াল জেটলিকে সম্মান দেখিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন না। নিজের রেল ও কয়লা মন্ত্রকের হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন, কিন্তু অর্থ মন্ত্রকে ক’দিনের জন্য এসে সাফল্যের বয়ান শোনাতে তিনি নারাজ। তাই অর্থ মন্ত্রকের চার বছরের সাফল্যের তালিকা তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। শোনাবার লোক মিলছে না।

জয়ন্ত ঘোষাল, অনমিত্র সেনগুপ্ত, প্রেমাংশু চৌধুরী

Delhi Diaries
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy