E-Paper

দিল্লি ডায়েরি: একজোটে লড়াই, ফিরল বিরোধীদের ঐক্য

নির্বাচন কমিশনের দফতরে বিরোধী সাংসদদের মিছিলে তৃণমূলের মিতালি বাগ অসুস্থ হলে রাহুল শুশ্রূষা করেছিলেন। মিতালিকে ধরে গাড়িতে তুলতে সাহায্য করেছিলেন সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ জন ব্রিটাসও।

প্রেমাংশু চৌধুরী, অগ্নি রায়, অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৫ ০৬:১২

গত লোকসভা নির্বাচনেই কেরলের ওয়েনাড় কেন্দ্রে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন অ্যানি রাজা। সিপিআইয়ের মহিলা সংগঠনের নেত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী। রাহুল ওয়েনাড় ও রায়বরেলী জিতে ওয়েনাড় সাংসদ হিসাবে ইস্তফা দিলেন। সেখানে উপনির্বাচনে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার বিরুদ্ধেও সিপিআই প্রার্থী দিয়েছিল। রাহুলের নতুন সরকারি বাসভবনে ইন্ডিয়া জোটের নেতানেত্রীদের নৈশভোজে সেই সিপিআই-এর ডি রাজা দীর্ঘ ক্ষণ রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে গল্প জুড়লেন। প্রিয়ঙ্কাকে শুভেচ্ছাও জানালেন। ভোটার তালিকায় সংশোধনের বিরুদ্ধে লড়াই বিরোধীদের মধ্যে এমন অনেক ভেদাভেদ মুছে দিল। নির্বাচন কমিশনের দফতরে বিরোধী সাংসদদের মিছিলে তৃণমূলের মিতালি বাগ অসুস্থ হলে রাহুল শুশ্রূষা করেছিলেন। মিতালিকে ধরে গাড়িতে তুলতে সাহায্য করেছিলেন সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ জন ব্রিটাসও। বাংলার রাজনীতিতে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের লড়াই চকিতে মুছে গেল। ধন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার! মেলালেন, তিনি মেলালেন।

সৌহার্দ: রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে আলাপরত সিপিআই-এর ডি রাজা।

সৌহার্দ: রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে আলাপরত সিপিআই-এর ডি রাজা।

লজ্জার মানে

রাজপথে ব্যারিকেড টপকানো, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, স্লোগান দিয়ে নির্বাচন কমিশন অভিযান সেরেছেন বিরোধী প্রায় শ’তিনেক সাংসদ। আটকও হয়েছেন পুলিশের হাতে কিছু ক্ষণ। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে তাঁদের চাঙ্গা করতে আয়োজন করেছেন নৈশভোজের। তৃণমূলের তরফে দোলা সেন ঢুকতেই মুখোমুখি প্রিয়ঙ্কা গান্ধী এবং তাঁর মা সনিয়া। প্রিয়ঙ্কা দোলাকে দেখিয়ে মাকে বলেন, “ইনি আমাকে একটা নতুন কথা শিখিয়েছেন! লজ্জা লজ্জা, মোদী সরকার লজ্জা!” সনিয়া হেসে জানান, দোলার দৃপ্তকণ্ঠের সঙ্গে সবাই পরিচিত। তবে সনিয়া যে শব্দার্থটি বুঝতে পারেননি তা দেখা গেল পরে, সংসদ চত্বরে বিরোধী ধর্নার সময়। দোলা স্লোগানে আবার ‘লজ্জা’ শব্দটি ব্যবহার করায় সনিয়া কৌতূহলী হয়ে পাশে দাঁড়ানো নেতাদের কাছে জানতে চান অর্থ! তা বুঝিয়ে দেন এসপি-র রামগোপাল যাদব।

দামের গুঁতো

সংসদে তাঁর হাজিরা নিয়মিত ছিল আগেই। এখন রাজ্য বিজেপি সভাপতি হওয়ায় সংসদ ছাড়াও দলের কাজে বাড়তি সময় দিল্লিতে থাকছেন শমীক ভট্টাচার্য। কাছাকাছি চলাফেরার জন্য চামড়ার চটি কিনতে চাইছিলেন। সভাপতি হওয়ার পর থেকেই শমীকের ঘনিষ্ঠদের বৃত্ত আরও মজবুত। এক শুভাকাঙ্ক্ষী পরামর্শ দেন অভিজাতদের কেনাকাটার জায়গা বলে পরিচিত খান মার্কেটে যেতে। সেখানে গিয়ে চামড়ার চটি পছন্দ হয় শমীকের। কিন্তু দাম ৫৫ হাজার। পত্রপাঠ দোকান থেকে বেরিয়ে আসেন। শমীক-সঙ্গীর পেঁপেও কেনার ছিল। তার দাম প্রায় পাঁচশো টাকা। দোনামোনা করেও শেষে কেবল পেঁপে কিনেই বাড়ি ফেরেন শমীকেরা।

স্মৃতিটুকু থাক

দিল্লির ৩৬ নম্বর পণ্ডিত রবিশঙ্কর শুক্ল লেনের সরকারি বাংলোর মূল ফটকে এখনও নামফলক। সীতারাম ইয়েচুরি, সাধারণ সম্পাদক, সিপিআইএম। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বাংলোটি বরাদ্দ হয় ইয়েচুরির নামে। আগে প্রকাশ কারাটের নামে এই বাংলো বরাদ্দ হয়েছিল। প্রকাশ বা ইয়েচুরি বাংলোয় থাকেননি। কিসান সভা, জনবাদী মহিলা সমিতির মতো সংগঠন ও সিপিএমের নেতা-কর্মীদের বাসস্থান হিসাবেই বাংলো ব্যবহৃত। প্রয়াণের পরে বছর ঘুরতে চলেছে। এখনও সাধারণ সম্পাদকের বাংলোয় ইয়েচুরির নাম কেউ সরায়নি। যদিও নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এম এ বেবির বাংলো বরাদ্দের অনুরোধ গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। সিপিএমের কেউই বিশ্বাস করতে পারেন না, ইয়েচুরি নেই। প্রয়াণের পর তাঁর প্রথম জন্মদিন ছিল ১২ অগস্ট। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ১২ সেপ্টেম্বর। ইয়েচুরি স্মরণে এই এক মাস পালনের সিদ্ধান্ত সিপিএমের।

অমলিন: সীতারাম ইয়েচুরির নামফলক।

অমলিন: সীতারাম ইয়েচুরির নামফলক।

গনতকার অখিলেশ?

সংসদ ভবনে দেখা হলে কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী সাংসদরা মুচকি হেসে অখিলেশকে জিজ্ঞাসা করছেন, আপনি কি ভবিষ্যৎ বলতে পারেন? গত লোকসভা নির্বাচনে অমেঠীতে প্রচারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, স্মৃতি ইরানি ভোটে হারলে মুম্বইতে অভিনয়ে ফিরে যাবেন। এই নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। তবে, স্মৃতি জেতেননি। বিজেপি তাঁকে রাজ্যসভায় জিতিয়ে আনারও উদ্যোগ করেনি। মন্ত্রিত্ব দূর। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী আবার ছোট পর্দায় ধারাবাহিকে ফিরেছেন। ভবিষ্যৎদ্রষ্টার তকমা পেয়ে সমাজবাদী পার্টির ‘মুখিয়া’ অখিলেশ যাদবের মুখে হাসি।

,, অনমিত্র সেনগুপ্ত

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy