Advertisement
E-Paper

প্রবঞ্চিত ‘বেটি’

নির্বাচন আসিলেই গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ও স্বরূপ লইয়া টানাটানি পড়িয়া যায়। এ দিকে ভারতে গণতন্ত্রের দশা শতছিন্ন কাঁথার ন্যায়, মেলিয়া ধরিলেই ছিদ্রগুলি প্রকট হইয়া পড়ে। বিশেষত মেয়েদের প্রসঙ্গ উঠিলে মুখ লুকাইতে হয়।

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৯ ০০:০১

নির্বাচন আসিলেই গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ও স্বরূপ লইয়া টানাটানি পড়িয়া যায়। এ দিকে ভারতে গণতন্ত্রের দশা শতছিন্ন কাঁথার ন্যায়, মেলিয়া ধরিলেই ছিদ্রগুলি প্রকট হইয়া পড়ে। বিশেষত মেয়েদের প্রসঙ্গ উঠিলে মুখ লুকাইতে হয়। ‘বেটি বঁচাও, বেটি পঢ়াও’ প্রভৃতি মহান বার্তা প্রচারে বিরাম নাই। তবু কন্যা কম পড়িয়াছে। কন্যাসন্তান বাস্তবিক বাঁচিয়া থাকিলে মহিলা ভোটদাতার সংখ্যা যা হইত, তাহার তুলনায় অন্তত দুই কোটি কম ভোট দিবেন। পুত্রের আকাঙ্ক্ষা এমনই তীব্র, যে জন্মের পূর্বেই অন্তর্হিত হইয়াছে ভারতের এই বিপুল সংখ্যক কন্যা। অপর দিকে, মহিলাদের সক্ষমতা বাড়াইবার বিবিধ প্রকল্পের প্রচার করিতেছে যে সকল রাজনৈতিক দল, কাজের বেলায় তাহারা ক্ষমতার চাবি মেয়েদের আঁচলে বাঁধিতে রাজি নহে। কংগ্রেস ও বিজেপি, দুই প্রধান দলই সংসদে মেয়েদের তেত্রিশ শতাংশ আসন সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়াছে ইস্তাহারে। কিন্তু তাহাদের দলীয় প্রার্থীদের তেরো শতাংশও মহিলা নহে। অতএব সপ্তদশ সংসদ নারীপুরুষের সংখ্যায় অধিকতর সাম্য আনিয়া নজির সৃষ্টি করিবে, তাহার সম্ভাবনা অঙ্কুরে বিনষ্ট। এত উপেক্ষা সত্ত্বেও মেয়েদের ভোট দিবার হার ক্রমাগত বাড়িতেছে। ২০০৯ হইতে ২০১৪ সালের নির্বাচন, এবং তাহার তুলনায় এই বৎসরের নির্বাচনের প্রথম দুই পর্বে মহিলাদের ভোটদানের হার বাড়িয়াই চলিয়াছে। নির্বাচনের গতিপ্রকৃতির বিশ্লেষণ করিয়া বিশেষজ্ঞদের মত: পুরুষ ভোটদাতার সংখ্যা মহিলাদের তুলনায় অধিক, কিন্তু ভোটদানের হারে মহিলারা সম্ভবত এই বার ছাড়াইবেন পুরুষদের। মহিলারাই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করিবেন। অসম্ভব নহে। কিন্তু মহিলাদের জন্য কী করিবে গণতান্ত্রিক ভারত?

তাহার উত্তর সাংবাদিকরা কখনও পাইতেছেন উন্নাওয়ের ধর্ষিতা তরুণীর ঘরে, কখনও কানহার আদিবাসী-অরণ্যবাসী প্রৌঢ়ার বিপন্নতায়। রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়প্রাপ্ত নেতা-আধিকারিক কত স্বচ্ছন্দে মেয়েদের ধর্ষণ-নির্যাতন করিয়া, বাস্তু হইতে উৎখাত করিয়া, মিথ্যা মামলায় ফাঁসাইয়া পর্যুদস্ত করিতে পারে, সংবাদে উঠিয়া আসা শঙ্কিত, ক্লান্ত মুখগুলি তাহার দৃষ্টান্তমাত্র। কত বিচিত্র উপায়ে মেয়েদের নির্যাতন ও বঞ্চনা চলিতেছে, এবং রাজনৈতিক দল কত নির্লজ্জ উপায়ে সকল প্রতিশ্রুতিতে পদাঘাত করিয়া অত্যাচারীকে সুরক্ষা জুগাইতেছে, তাহার ব্যাপকতা কে আন্দাজ করিতে পারে? নির্বাচন আসিলে প্রকাশ হইয়া পড়ে, নেতার মুখে সক্ষমতার বাণী শূন্য আস্ফালনমাত্র। রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে বিজেপি প্রার্থী প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন, তিনি জিতিলে নাবালিকা বিবাহে বাধা দিতে পারিবে না পুলিশ। শোভা চহ্বাণ জিতিয়াছিলেন, দল তাঁহার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই করে নাই।

এহ বাহ্য, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্তদের প্রার্থী করিতে কখনও দ্বিধা করে নাই কোনও দল। গত পাঁচ বৎসরে বিভিন্ন নির্বাচনের পূর্বে দাখিল করা প্রার্থীদের হলফনামার একটি বিশ্লেষণ দেখিয়াছে, নারী নির্যাতনে অভিযুক্ত দুইশো চুরানব্বই জন ব্যক্তি বিধানসভার, এবং আরও চল্লিশ জন প্রার্থী সংসদের প্রার্থিপদ পাইয়াছিলেন। সর্বাধিক প্রার্থিপদ দিয়াছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তাহাদের স্লোগান ও কর্মপদ্ধতির মধ্যে এতটাই দূরত্ব। ভারতে মেয়েদের অমর্যাদা এবং বঞ্চনা এতটাই ‘স্বাভাবিক’ যে শাসক দলের ঘোষিত লক্ষ্য এবং গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে দূরত্বও নেতাদের বিব্রত করিতে পারে না। তাঁহারা ভুলিয়াছেন, ইহা দেশের মেয়েদের বিশ্বাসভঙ্গ। সরকার সংবিধানের প্রহরী, রাজনৈতিক দলগুলি সংসদ এবং বিবিধ বিধানসভায় সরকারি কার্যের শরিক। সাংসদ, বিধায়ক, ও দলীয় নেতারা অক্লেশে নারীর বঞ্চনা ও নিপীড়ন সমর্থন করিবেন, অথচ রাষ্ট্র মহিলাদের সুরক্ষা দিবে! যাহা চলিতেছে, তাহা চলিতে পারে না।

Beti Bachao Beti Padhao India Women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy