Advertisement
E-Paper

ক্ষমতার অঙ্ক

উন্নয়নশীল দুনিয়া বিনা লড়াইয়ে জমি ছাড়ে নাই। ২০২০ সালে প্যারিস চুক্তি কার্যকর হইবার পূর্বে যাহাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশ্নটি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়, তাহার জন্য বন যে লড়াই প্রত্যক্ষ করিল, ভারত তাহার প্রথম সারিতেই ছিল।

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০

আরও একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্মেলন শেষ হইল। ক্রমে সংশয় হইতেছে, এই গোত্রের সম্মেলনের আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কি? একটি উদাহরণেই এই সংশয়ের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত হইবে। ২০০৯ সালে সিদ্ধান্ত হইয়াছিল, উন্নত দেশগুলি উন্নয়নশীল দুনিয়াকে প্রতি বৎসর মোট ১০,০০০ কোটি ডলার দিবে, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিপদের সহিত লড়িবার জন্য সবুজতর প্রযুক্তির পথে হাঁটিবার জন্য। ২০১৭ সালের সম্মেলনে উন্নয়নশীল বিশ্ব ক্ষোভ জানাইয়া বলিল যে এখনও এই খাতে কানাকড়িও মিলে নাই। কিয়োটে প্রোটোকলের অন্তর্নিহিত ঐতিহাসিক দায়িত্বের প্রসঙ্গটি যবে হইতে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনার পরিসর হইতে সরিয়া গিয়াছে, এই বৈঠকটিও তাহার গুরুত্ব হারাইয়াছে। বস্তুত, এই দফায় বহুলাংশে নিষ্ক্রিয় মার্কিন প্রতিনিধি দল কার্যত দাবি করিয়াছে, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ফারাকটিই পরিবেশ আলোচনা হইতে মুছিয়া দেওয়া হউক। গত জুন মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস অ্যাকর্ড না মানিবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে বহু ধাপ পিছাইয়া দিয়াছিলেন। বন-এর বৈঠক হইতে অতঃপর বিশেষ কিছু আশা ছিল না। সেটুকুও পূরণ হইল না। কথার মিছিল, ভাবিয়া দেখিবার প্রতিশ্রুতি, ২০২০ সালের মধ্যে নূতন আন্তর্জাতিক নীতিতে উপনীত হইবার শপথ, সবই পুরাতন কথার পুনরাবৃত্তি। তাহাতে নূতন মোড়ক যে একেবারেই ছিল না, তাহা নহে— কিন্তু বিপদের জল যতখানি বাড়িয়াছে, তাহাতে শুধু মোড়কে শেষরক্ষা হইবে না।

উন্নয়নশীল দুনিয়া বিনা লড়াইয়ে জমি ছাড়ে নাই। ২০২০ সালে প্যারিস চুক্তি কার্যকর হইবার পূর্বে যাহাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশ্নটি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়, তাহার জন্য বন যে লড়াই প্রত্যক্ষ করিল, ভারত তাহার প্রথম সারিতেই ছিল। ন্যাশনালি ডিটারমাইনড কনট্রিবিউশন বা জাতীয় স্তরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা বিষয়েও যৌথ আলোচনার পথ খোলা হইয়াছে। কিন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আদি দেশের প্রকৃত অবস্থান না বদলাইলে এইগুলি কথামাত্রসারই থাকিয়া যাইবে, তেমন আশঙ্কা অতি তীব্র। বন সম্মেলনের একটি ইতিবাচক দিক বরং লিঙ্গভিত্তিক আলোচনা। মহিলাদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে পৃথক ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হইয়াছে। জরুরি পদক্ষেপ, কারণ প্রাত্যহিকতার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব পড়ে, তাহার ধাক্কা মূলত মহিলাদেরই সামলাইতে হয়। পানীয় জলের উৎস ক্রমে দূরে সরিয়া যাওয়া হইতে বিপর্যয়ে সাংসারিক ক্ষতি, সব কিছুই শেষ অবধি মহিলাদের সমস্যা। এবং, সবুজতর প্রযুক্তির পথে হাঁটিতে হইলেও তাহাতে মহিলাদের অংশীদারি গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, লিঙ্গভিত্তিক আলোচনার অবকাশ অবশ্যই আছে। বস্তুত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশ্নটি সব অর্থেই ক্ষমতার প্রশ্ন। উন্নত দুনিয়ার সহিত উন্নয়নশীল দুনিয়ার ক্ষমতার উচ্চাবচতা যেমন পরিবেশ নীতিকে প্রভাবিত করে, ধনী ও দরিদ্রের উচ্চাবতা যেমন ছাপ ফেলে পরিবেশের অভ্যন্তরীণ নীতিতে, তেমনই লিঙ্গভিত্তিক উচ্চাবচতাও জরুরি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ক্ষমতার বিপ্রতীপে থাকা গোষ্ঠীকে অনেক বেশি সমস্যার সম্মুখীন হইতে হয়। এক অর্থে ইহাও একটি ঐতিহাসিক দায়।

Developing world Developing world opportunity opportunity Power Power Developed World Climate Change
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy