—প্রতীকী ছবি।
রাজনীতিবিদের বিচরণক্ষেত্রটি শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় আবদ্ধ নহে। তাঁহাদের রাস্তায় নামিতে হয়, মানুষের পাশে দাঁড়াইতে হয়— ইহা রাজনীতির গোড়ার কথা। কিছু দিন পূর্বে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী সেই জরুরি কথাটি আরও এক বার স্মরণ করাইয়া দিয়াছিলেন। আধুনিক ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ার উপযোগিতার কথা তিনি অস্বীকার করেন নাই। কিন্তু শুধুই টুইটারে আগ্রাসী হইয়া যে রাজনীতি করা যায় না, সেই কথাটিও স্পষ্ট এবং দৃঢ় ভাষায় ব্যক্ত করিয়াছেন।
বস্তুত, ইহাই ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রধান চরিত্র— মাঠে নামিয়া রাজনীতি। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটে যে বৈশিষ্ট্যখানি যথেষ্ট ম্রিয়মাণ। মিটিং, মিছিল, বিক্ষোভ প্রদর্শন, সভা-সমাবেশের পরিবর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্য পক্ষকে আক্রমণ করাতেই সর্বভারতীয় নেতৃবৃন্দ যেন এখন অধিক স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। বিরোধী দলের পক্ষে এহেন আলস্যের পরিণাম যে হিতকর হয় না, তাহা সনিয়া অপেক্ষা আর কেহই বা ভাল বুঝিবেন! সুতরাং, বার্তাটি তিনি নিজ দলের প্রতি দিলেও তাহা অন্যান্য সমস্ত বিরোধী দলের ক্ষেত্রে সম ভাবে প্রযোজ্য। কারণ, ভারতীয় গণতন্ত্রে আপাতত বিরোধী রাজনীতির খোঁজ মিলিতেছে না। তাঁহারা কী ভঙ্গিতে রাজনীতি করিবেন, তাহা নিতান্তই তাঁহাদের বিবেচ্য। কিন্তু, বিরোধী রাজনীতি যদি করিতেই হয়, সেই রাজনীতির দাবিদাওয়াও পূরণ করা বিধেয়। সরকারের একের পর এক পদক্ষেপ লইয়া যখন অন্যান্য দলগুলির সক্রিয় ভাবে ময়দানে নামিবার কথা, তখন বিরোধী নেতাগণ সোশ্যাল মিডিয়ায় কথার মারপ্যাঁচে মশগুল। এনআরসি হইতে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারার লোপ— সর্ব ক্ষেত্রেই সরকারের আস্ফালন বিরোধী কণ্ঠস্বরকে অশ্রুত করিয়া রাখিতেছে। অবিলম্বে যে আওয়াজ ফিরাইয়া আনা প্রয়োজন, সেই তাগিদও যেন বিরোধীদের মধ্যে নাই। দেশে আর্থিক দুরাবস্থার ছবি ক্রমশ প্রকট হইলেও বিরোধীদের তুলনায় অর্থনীতিবিদরা সরব হইতেছেন বেশি। নির্বাচনোত্তর পর্বে জনসংযোগের মাধ্যমে সংগঠনকে মজবুত করিবার সময় ও সুযোগ উভয়ই বিরোধী নেতারা পাইয়াছিলেন। তাঁহারা সেই সুযোগকে সোশ্যাল মিডিয়ার্ণবে বিসর্জন দিয়াছেন।
অথচ, ভারতীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোয় বিরোধী দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অপরিহার্য। তাহাদের অস্তিত্ব শুধুই কাগজকলমে সরকারের কাজগুলির সমালোচনা করিবার মধ্যে আবদ্ধ নহে। তাহারা এক দিকে সরকারের স্বৈরতন্ত্রী হইয়া উঠিবার প্রবণতাকে খর্ব করে, অন্য দিকে বিভিন্ন সরকারি নীতির প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণের কাছে তুলিয়া ধরে এবং প্রয়োজনে বিক্ষোভ, প্রতিবাদের মাধ্যমে ভুল নীতির প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আরও জরুরি, নির্বাচনে হারিলেও জনসমাজের যে অংশের ভোট তাঁহারা পাইয়াছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাঁহাদের কণ্ঠস্বর যাহাতে শোনা যায়, তাহা নিশ্চিত করিবার দায়িত্বও বিরোধীদেরই। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনা পরিশ্রমে সরকারের বিরোধিতা করা যায় বটে, কিন্তু প্রান্তিক মানুষের নিকট পৌঁছানো যায় না। তৎপরতর শাসকপক্ষ সেই ফাঁকটি সাগ্রহে পূরণ করেন। বিরোধী রাজনীতিবিদরা যদি মাটির সংযোগ ভুলিয়া ভার্চুয়াল পৃথিবীতে নিজেকে ব্যাপৃত রাখেন, তাহা গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ নহে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy