জলবায়ু সঙ্কটের দায় মানুষকে নিতেই হবে, এই বিপর্যয়কে স্বীকার করতে হবে ‘অস্তিত্বের সঙ্কট’ বলে। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ-এ ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এর পনেরো জন বিচারপতির সম্মিলিত মন্তব্যে এ কথাটিই উঠে এল। এমন জোর দিয়ে এ কথা বলা হয়েছে যে পরিবেশবিদ, জলবায়ু বিপর্যয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পরেও বিশ্বের দেশগুলি তাতে কান না দিলে তা হবে নিজের পায়েই কুড়ুল মারা। উন্নত ও ক্ষমতাধর দেশগুলি রাষ্ট্রপুঞ্জের পইপই চেতাবনিতেও কথা শুনছে না, জলবায়ু সম্মেলনে যে শর্ত ঠিক করছে পরে নিজেরাই তা ভাঙছে, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারছে না। আইসিজে প্রেসিডেন্ট য়ুজি ইওয়াসাওয়া বলেছেন, এ-হেন গাফিলতি গণ্য হবে আন্তর্জাতিক আইনভঙ্গ হিসাবে। জলবায়ু সঙ্কট সীমান্ত বা কাঁটাতার মানে না, শক্তিধর দেশের অপরাধে ভুগতে হয় অন্য বহু দেশের প্রাণ-প্রকৃতিকে। কেন প্রভাবশালী দেশগুলিকে অপরাধী গণ্য করা হবে না, কেনই বা ভুক্তভোগী দেশগুলি ‘বিচার’ এবং আর্থিক ও অন্যান্য ‘ক্ষতিপূরণ’ চাইবে না— আন্তর্জাতিক মহলে কথা উঠছে তা নিয়েও।
দায়বদ্ধতা: পৃথিবীকে রক্ষা করলে তবে বাঁচবে মানুষ।
আন্দোলনের মুখে
নিজ দেশে গণ-আন্দোলনের মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। পার্লামেন্টে দেশের শীর্ষ দুই দুর্নীতি-বিরোধী সংস্থার ক্ষমতা খর্ব করার বিলে তিনি সায় দেওয়ার পরে পথে নামে জনতা। জ়েলেনস্কির যুক্তি, ওই দুই সংস্থা রাশিয়া-প্রভাবিত, ঠিকমতো কাজ করছিল না বলেই এমন পদক্ষেপ। নিন্দুকরা বলছে, তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই এই চাল। অতীতের ব্যাপক দুর্নীতির জেরে এতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেটো-তেও গৃহীত হয়নি দেশটি।
প্রবালের অসুখ
অস্ট্রেলিয়ার নিঙ্গালু রিফ প্রবাল প্রাচীর এক সামুদ্রিক অরণ্যের ধাত্রীভূমি, চার পাশে সাঁতরায় ‘রিফ শার্ক’, ‘হোয়েল শার্ক’। এ বছর সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের জেরে জল উষ্ণতর। ফলে ‘ব্লিচিং’ প্রক্রিয়ার কারণে প্রবাল সাদা হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রবালের অনেকগুলিই আর বাঁচবে না। স্নরকেলিং-ফেরত পর্যটকেরা বিষণ্ণ: সব ধূসর, নিষ্প্রাণ। বিশ্বের ৮০% প্রবাল প্রাচীরেই ব্লিচিং প্রক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কারণ, কার্বন নিঃসরণে গ্রহ উষ্ণ হচ্ছে, প্রভাব পড়ছে সমুদ্রের জলে। বিপদ বাড়াচ্ছে নিঙ্গালু সৈকতের কাছে অবস্থিত গ্যাসের কারখানা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোন প্রবাল তাপ সইতে পারবে, গবেষণা চলছে। তবে, জৈব জ্বালানিতে রাশ টেনে ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে হবে মানুষকেই। নইলে, বিপদ তাদেরও।
ঘরে ঘরে সিংহ
পাকিস্তানে বাঘ, সিংহ, চিতা, পুমা, জাগুয়ার-কে ক্ষমতার প্রতীক হিসাবে জাহির করার চল। সমাজমাধ্যমের রমরমার যুগে পশুগুলির অবৈধ বিকিকিনি বেড়েছে, লোকে বিয়েতেও সিংহ নিয়ে যাচ্ছে। লাহোরের রাস্তায় এক ‘পোষা’ সিংহ দুই শিশু-সহ মহিলাকে আক্রমণ করেছে। আর এক সিংহ লাহোর ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে ও তাকে গুলি করে মারা হয়। প্রশাসন পশুর তল্লাশে হানা দিয়ে বহু অবৈধ ব্যবসায়ীদের খামার পেয়েছে। এক খামারে ২৬টা বাঘ-সিংহ ছিল, অস্বাস্থ্যকর ভাবে। সন্দেহ, শুধু পঞ্জাবেরই ঘরে ঘরে অন্তত হাজার বাঘ-সিংহ। পশুগুলিকে অর্থ দিয়ে নথিভুক্তি করানো, দুই প্রজাতি মিলিয়ে দশের বেশি পশুতে নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি নিয়ম চালু হচ্ছে। বড় খামারগুলিকে চিড়িয়াখানায় রূপান্তরের নির্দেশ এসেছে। মানুষ ও পশুর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার খাতিরে অভয়ারণ্যের দাবি তুলেছেন পশু-অধিকারকর্মীরা।
বিপদ: পাকিস্তানে ‘পোষা’ সিংহ।
‘মিঠে’ দ্বৈরথ
এত কাল চলছিল ‘কর্ন সিরাপ যুগ’। এ বার সম্ভবত ‘আখের রস জমানা’ আসতে চলেছে আমেরিকায়। কারণ, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিশ্বখ্যাত নরম পানীয় নির্মাতা সংস্থাকে বলেছেন, আর কর্ন সিরাপ নয়, আখের চিনি দিয়ে তাদের পানীয়টি মিঠে করতে। নিজে অবশ্য ওই পানীয়ের চিনি-ছাড়া ধরনটিই খান, তাতে কী। অর্থনীতি-বিশেষজ্ঞদের ইঙ্গিত, ব্যাপার আসলে অন্য— আমেরিকায় আখ তথা চিনির কারবারিরা ‘সংখ্যালঘু’ হলেও মোটা রাজনৈতিক অনুদান দিয়ে ও প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসার আসল খেলা জিতে নিয়েছেন। কর্ন সিরাপ ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত, রাজপাট কি যেতে বসল! ডাক্তাররা অবশ্য গম্ভীর: কর্ন সিরাপই হোক বা চিনি, শরীরের জন্য দুটোই সমান খারাপ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)