Advertisement
E-Paper

দলিতের শিক্ষা

সরকার কি ভুলিয়াছে যে বিদ্যালয় কেবল লেখাপড়া শিখিবার কয়খানি ঘরমাত্র নহে? বিদ্যালয় নাগরিক গড়িবার কারখানা। দৈনন্দিন বিধিনিয়ম দিয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বপন করিয়া দেয় স্কুল।

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১৭

ভারতে যে জনগোষ্ঠীগুলি অধিক শিক্ষাবঞ্চিত, তাহাদের স্কুলশিক্ষার সম্পূর্ণতা নিশ্চিত করিবার উপায় কী? জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়া সে বিষয়ে নানা সুপারিশ করিয়াছে। যথা, দলিত-আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় অধিক সংখ্যায় স্কুল প্রতিষ্ঠা, অধিক শিক্ষক নিয়োগ, স্থানীয় শিক্ষকদের নিয়োগ এবং তাঁহাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ, ছাত্রবৃত্তি ইত্যাদি। কোথাও বলা হয় নাই, কেবল দলিত ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুল তৈরি করা প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু সেই নীতিটিই বিবেচনা করিতেছে। সংবাদে প্রকাশ, দেড়শোটি ‘অম্বেডকর নবোদয় বিদ্যালয়’ খুলিবার নীতি গ্রহণ করিতে চলিয়াছে কেন্দ্র। যে সকল অঞ্চলে দলিত জনসংখ্যা অধিক, সেখানে এই আবাসিক বিদ্যালয়গুলি প্রতিষ্ঠিত হইবে, ইহার সকল ছাত্র হইবে দলিত। বাজেট ভাষণে ইহার ঘোষণা হইবে, এমনই ইঙ্গিত দিয়াছেন মানব উন্নয়ন মন্ত্রকের কর্তারা।

সরকার কি ভুলিয়াছে যে বিদ্যালয় কেবল লেখাপড়া শিখিবার কয়খানি ঘরমাত্র নহে? বিদ্যালয় নাগরিক গড়িবার কারখানা। দৈনন্দিন বিধিনিয়ম দিয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বপন করিয়া দেয় স্কুল। তাহার অন্যতম, শ্রেণি-পরিচিতি নির্বিশেষে সকলকে মর্যাদা দান, সকল ব্যক্তির প্রতি সমান ব্যবহার। কিছু জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে অন্যায় বৈষম্য এ দেশের উচ্চবর্ণের ব্যক্তিরা বহু যুগ ধরিয়া করিয়াছে, ‘অস্পৃশ্য’ অপবাদ দিয়া সরাইয়া রাখিয়াছে, একত্র মধ্যাহ্ন ভোজনের দ্বারা তাহা মুছিয়া দিতেছে ভারতের স্কুলগুলি। নূতন ইতিহাস রচনা হইতেছে। তাহা হইলে ‘দলিত বিদ্যালয়’ স্থাপনের ঘোষণা কেন? ইহা কী বার্তা বহন করিতে পারে, মোদী সরকারের কি তাহা বুঝিবার ক্ষমতা নাই? এই সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিই বলিতেছে, সকল গোষ্ঠীর পড়ুয়াদের অন্তর্ভুক্তি এবং সাম্য নিশ্চিত করিবার জন্য বিদ্যালয়গুলিকে নির্দিষ্ট বিধি রচনা করিতে হইবে। তাহার ভিত্তিতে মূল্যায়ন হইবে বিদ্যালয়ের। অথচ কেবল দলিত ছাত্রছাত্রীর জন্য নির্দিষ্ট স্কুল খুলিলে সকলকে গ্রহণ করিবার অভ্যাস তৈরি হইবে কী উপায়ে? ভিন্নতাকে গ্রহণের পাঠই বা মিলিবে কী করিয়া?

কেহ বলিতে পারেন, কেবল আদিবাসীদের জন্য ‘একলব্য মডেল আবাসিক স্কুল’ তো পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ঠিকই, এবং তাহা প্রধানত আদিবাসী এলাকাগুলির প্রত্যন্ত অবস্থানের কারণেই যুক্তিযুক্ত মনে হইয়াছিল। কিন্তু তাহার ফল ভাল হইয়াছে কি না, সে বিষয়ে বিতর্ক রহিয়াছে। পরিকাঠামোর অভাব, শিক্ষকের স্বল্পতা, ছাত্রদের মন্দ ফল, আর্থিক নয়ছয়— নানা রাজ্যের একলব্য বিদ্যালয়গুলি সম্পর্কে এই সকল অভিযোগ বারবার উঠিয়াছে। সকল স্কুলই মন্দ নহে। কিন্তু একলব্য বিদ্যালয় যে উন্নত শিক্ষার ‘মডেল’, এমন দাবিও সঙ্গত নহে। সর্বোপরি, ‘উন্নত মানের শিক্ষা’ দিতে গিয়া আদিবাসী শিশুদের পরিবার, ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করিবার নীতি প্রশ্নের মুখে পড়িয়াছে। ইহা কি সংখ্যাগুরুর সংস্কৃতি ছোট জনগোষ্ঠীগুলির উপর চাপাইবার চেষ্টা নহে? অভিযোগটি গুরুতর। তাই ভাবিতে হইবে, ধর্ম বা বর্ণের পরিচিতির ভিত্তিতে শিশুর শিক্ষার সুযোগ নির্ধারিত হইবে কেন? খসড়া শিক্ষানীতি কেন পশ্চাৎপদ এলাকাগুলিতে ‘বিশেষ শিক্ষা অঞ্চল’ স্থাপন করিতে বলিয়াছে, ‘বিশেষ বিদ্যালয়’ স্থাপন করিতে বলে নাই, তাহা সরকারকে বুঝিতে হইবে।

Dalit Dalit Education Ekalabya vidyalaya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy