Advertisement
E-Paper

দুর্ঘটনা নহে

এত দিন যে সেখানে এমন ঘটনা ঘটে নাই, তাহাই বরং যথার্থ দুর্ঘটনা। ওই সংকীর্ণ ফুটব্রিজ ধরিয়া যাঁহাদের নিত্য আনাগোনা, তাঁহারাও জানিতেন যে কোনও দিন পদপিষ্ট হইবার আশঙ্কা। রেল প্রশাসনেরও তাহা অজানা ছিল না। না জানিবার উপায়ও ছিল না— বারংবার তাহাকে এই আশঙ্কা সম্পর্কে সচেতন করা হইয়াছে, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য উদ্যোগ করিতে বলা হইয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৫
Share
Save

দুর্ঘটনা কাহাকে বলে? যাহা ঘটে অকস্মাৎ, কোনও পূর্বাভাস ছাড়াই, যাহার উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। প্রস্তুতির সুযোগবিহীন আকস্মিকতাই যাহার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য। তাহা হইলে, মধ্য মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন রোড স্টেশনে নবমীর দিন যাহা ঘটিয়া গেল, তাহা দুর্ঘটনা হইবে কেন? তাহাতে তো আকস্মিকতার নামগন্ধ নাই! বস্তুত, তাহা তো প্রত্যাশিতই ছিল। এত দিন যে সেখানে এমন ঘটনা ঘটে নাই, তাহাই বরং যথার্থ দুর্ঘটনা। ওই সংকীর্ণ ফুটব্রিজ ধরিয়া যাঁহাদের নিত্য আনাগোনা, তাঁহারাও জানিতেন যে কোনও দিন পদপিষ্ট হইবার আশঙ্কা। রেল প্রশাসনেরও তাহা অজানা ছিল না। না জানিবার উপায়ও ছিল না— বারংবার তাহাকে এই আশঙ্কা সম্পর্কে সচেতন করা হইয়াছে, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য উদ্যোগ করিতে বলা হইয়াছে। টনক নড়ে নাই। কারণ, এই দেশে কিছু প্রাণের বলি না চড়িলে কর্তাদের টনক নড়ে না। মুম্বইয়েও তাহাই হইয়াছে। তেইশটি প্রাণ চলিয়া যাইবার পরে অবশেষে নূতন ফুটব্রিজের টেন্ডার ডাকা হইয়াছে। ঘটনাটিকে রেল প্রশাসনের অমার্জনীয় অপদার্থতা বলা যাইতে পারে, দুর্ঘটনা নহে।

ভারতীয় রেলের এমন অপদার্থতার নজির অবশ্য সুলভ। যাত্রীদের দুর্গতি পরিব্যাপ্ত, অন্তহীন, প্রাণহানি যাহার চূড়ান্ত রূপ। এক রেলমন্ত্রী যান, আর এক রেলমন্ত্রী আসেন, পরিষেবা সেই নিকষ অন্ধকারেই। লাইনচ্যুত ট্রেন, জীর্ণ সিগনাল ব্যবস্থা, বেহাল ফুটব্রিজ, অ-খাদ্য পরিবেশন— অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। যাত্রীদের প্রতি ঔদাসীন্যের কোনও সীমা নাই। অহরহ ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তন হয়, যাত্রীরা তাহা সময়ে জানিতে পারেন না, পারিলেও অপরিসর, জনাকীর্ণ পথে অন্য প্ল্যাটফর্মে যাইবার মতো পর্যাপ্ত সময় হাতে থাকে না। ব্যস্ত সময়ে দুই-তিনটি ট্রেন একসঙ্গে আসিয়া পড়িলে ভিড় সামাল দিবার সুব্যবস্থা নাই। বিশৃঙ্খলাই রেলের অপর নাম। শুধুমাত্র দূরপাল্লা বা লোকাল ট্রেনই নহে, এই কুখ্যাতির তালিকায় সম্প্রতি নাম তুলিয়াছে কলিকাতার মেট্রো রেলও। তাহার অহংকারের দিন বহু আগেই অস্তমিত। এখন বিলম্বে চলা, ভিড়ের চাপে দরজা বন্ধ না হওয়া, ঘোষণা ছাড়াই ট্রেন বাতিল হওয়া ইত্যাদি বিপদ প্রাত্যহিকতায় পরিণত। ব্যস্ত সময়ে সেখানেও পদপিষ্ট হইবার আশঙ্কা থাকে।

মূল সমস্যা একটিই: সদিচ্ছার ঘোর অনটন। সেই কারণে একের পর এক বিপর্যয় দেখিয়াও তাৎক্ষণিক কিছু পরিবর্তন ছাড়া কোনও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা লওয়া হয় না। অথচ, ভারতে যে প্রশাসন চেষ্টা করিলে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করিতে পারে না, তেমনটা আদৌ নহে। কলিকাতা পুলিশের দুর্গাপূজার ভিড় সামলাইবার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত কার্যত বার্ষিক ঐতিহ্যে পরিণত। মহারাষ্ট্র পুলিশও প্রতি বৎসর গণেশ চতুর্থীর বিসর্জন অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে উতরাইয়া দেয়। যথেষ্ট প্রশংসাও কুড়ায়। কিন্তু সমস্যা হইল, এই প্রশংসা, হাততালি মাত্র কিছু দিনের, সারা বৎসরের জন্য নহে। অন্য সময় নজরদারির ফাঁস আলগাই থাকে। অথচ সারা বৎসর শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হইলে, তাহাই নিয়ম হইয়া দাঁড়াইত। তাহাতে হয়তো উৎসব-পরবর্তী পিঠচাপড়ানি মিলিত না, কিন্তু ভিড়ের চরম বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক চেহারাটি এমন বেআব্রু হইয়া পড়িত না। ‘দুর্ঘটনা’র সংখ্যাও হয়তো কিছু কমিত।

Elphinstone Road Stampede Accident এলফিনস্টোন রোড Railway Station Footbridge

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}