Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
earthquake

সতর্ক না হলে বিপদ

সাম্প্রতিক কালে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ধরা পড়েছে ৪.৩-৭.০— ভারতের মেঘালয়ে ৪.৩, নিউ জ়িল্যান্ডে ৭.০।

Earthquake.

ভূমিকম্প কোনও নতুন ঘটনা নয়, কিন্তু তার মধ্যেও এসেছে অনেক রকম পরিবর্তন। ফাইল চিত্র।

বিকাশ সিংহ
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৩ ০৫:৪৬
Share: Save:

আমাদের পৃথিবী এখন অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই বছর ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ মার্চ— এই সময়ের মধ্যে ২১ দিনে বিশ্ব অনেক ছোট-বড় ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়েছে। এই সময় কিছু দেশে দু’বারও ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্প কোনও নতুন ঘটনা নয়, কিন্তু তার মধ্যেও এসেছে অনেক রকম পরিবর্তন। যেমন, সাম্প্রতিক কালে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ধরা পড়েছে ৪.৩-৭.০— ভারতের মেঘালয়ে ৪.৩, নিউ জ়িল্যান্ডে ৭.০। ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং তীব্রতা, দু’-দিক থেকেই কিন্তু এটি বিধ্বংসী অভিজ্ঞতা।

মনে রাখতে হবে, সাম্প্রতিক কালে পৃথিবী আগের চেয়ে বেশি গরম হয়ে গিয়েছে। বিশ্ব জুড়ে যে উষ্ণায়ন দেখছি আমরা, তারই আর একটা প্রকাশ এটা— বাস্তবিক, বলা যেতে পারে, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে নাটকীয় প্রকাশ। পরিস্থিতি এখনও চরমসীমা ছাড়িয়ে যায়নি বলেই পৃথিবী এখনও বসতযোগ্য— তা না হলে পৃথিবীও অন্যান্য গ্রহের মতোই জীবনহীন হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত, ১৮০০ সালে যখন গ্রিনহাউস আবিষ্কার হয়, তখন একটা কথা প্রথম বার পরিষ্কার বোঝা গেল। বোঝা গেল যে, এই বলয় বাইরের তাপ এবং প্রচণ্ড শৈত্য থেকে পৃথিবীটাকে একটা কম্বল পরিয়ে রাখবে।

এখন আমরা জানি, ধীরে ধীরে অবস্থা কতখানি পাল্টে গিয়েছে। শত শত বছর ধরে পৃথিবী থেকে টন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং মিথেন উৎপন্ন হচ্ছে, কিন্তু পৃথিবীর উপরিভাগে তা আটকে যাচ্ছে। এর ফলে ‘গ্রিনহাউস এফেক্ট’ সৌর বিকিরণকে প্রায় ৩০০ গুণ বেশি আটকে রাখছে, যার প্রভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সমুদ্র। তাপমাত্রার পার্থক্য শুনে সংখ্যায় খুব কম ডিগ্রি মনে হলেও আসলে সমুদ্রের জলের বিশাল ভরের কারণে এর প্রভাব কিন্তু রীতিমতো বিধ্বংসী হতে পারে।

কী ভাবে? সমুদ্রের জল উত্তপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নীচের মহাদেশীয় প্লেটগুলি (যাকে বলা যেতে পারে ‘সমুদ্র-শয্যা’) সামান্য হলেও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে প্লেটের প্রসারণ অ-স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করে, এবং সেই অস্থিরতা পৃথিবীর ভূত্বককে ছোট বা বড় মাপে বিচলিত করে। পৃথিবী জুড়ে নিয়মিত ঘন ঘন ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির ঘটনাগুলি ইঙ্গিত করে যে সঞ্চিত তাপশক্তি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের জলের স্তর বাড়তে চলেছে।

এই জলস্তর বৃদ্ধির ফলে মহাসাগরে কত দ্বীপ ডুবে গিয়েছে। আরও কত দ্বীপ ডুবে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আবার উত্তর বা দক্ষিণ মেরুতে উষ্ণতা বাড়ার ফলে ক্রমশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হিমশৈলগুলি। এগুলি আবার সমুদ্রের জলের উচ্চতা বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি বৃদ্ধি করতে পারে— অতিরিক্ত গ্রিনহাউস নির্গমনের বিপদের এটি একটি সতর্কতা নির্দেশ। মারাত্মক এই গ্যাস আজকের দিনে আগের তুলনায় অনেক বেশি বেরোনোর ফলে পৃথিবীর বুকের উপরে বাতাসের অবস্থা ভাল থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। যেমন, শহর থেকে বাইরে গেলেই এটা পরিষ্কার বোঝা যায়।

সাম্প্রতিক কালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো হল সিরিয়া-তুরস্ক (৬.৩), নেপাল (৫.৬), নিউ জ়িল্যান্ড (৪.৮), মেঘালয়, ভারত (৪.৩), মেক্সিকো (২.৯), চিন (৪.৮), আফগানিস্তান এবং তাজিকিস্তান (৬.৮), ইন্দোনেশিয়া (৬.৩), তুরস্ক (৫.২), নিউ জ়িল্যান্ড (৬.৯), কলম্বিয়া (৫.৪), মাদাং, অস্ট্রেলিয়া (৬.৩), নিউ জ়িল্যান্ড (৭.০), কলম্বিয়া (৬.৮), হিন্দুকুশ, আফগানিস্তান (৬.৫), জুজুয়া প্রদেশ, আর্জেন্টিনা (৬.৫), তাজিকিস্তান (৫.৮), ফিলিপিন্স (৫.৬), নিউ গিনি (৫.৭), তুরস্ক (৫.৬)। (বন্ধনীর সংখ্যা রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা নির্দেশ করে)।

উল্লেখ্য, হিমালয়ের পাদদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। হিমালয় হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভূতাত্ত্বিক ফাটল। হিমালয়ের নরম পাথর একটি বড় ভূমিকম্প ঠেকাচ্ছে, কিন্তু চিনের ঠান্ডা বাতাস থেকে ভারতকে রক্ষা করেছে। তবে যদি এমন ঘটে যে কোনও কারণে হিমালয়ে একটা বিরাট ভূমিকম্প হল, তা হলে সহজেই বলা যায় যে উত্তর ভারতের সভ্যতার সব স্থাপত্য একেবারে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। কী ভাবছে, ভারতের মানুষ? সত্যি বলতে, ভারত এবং পৃথিবী যদি এমন ভাবেই চলতে থাকে, তা হলে ভবিষ্যতের কথা ভাবলেও শিহরিত লাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

earthquake Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE