Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Union Budget 2023

সব মধ্যবিত্তের কি সুবিধা হবে

বর্তমান বাজেটে আয় এবং লভ্যাংশের উপর কর আদায়ের সম্ভাবনা পনেরো শতাংশ করে মোট ত্রিশ শতাংশ ধরা হয়েছে; জিএসটি থেকে সতেরো শতাংশ আয় হবে মনে করা হচ্ছে।

Picture of Nirmala Sitharaman.

ভারতে আয়কর দেন জনসংখ্যার এক নগণ্য অংশ। ফাইল চিত্র।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:২৪
Share: Save:

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ভারতের ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেটে বিভিন্ন উৎস থেকে সম্ভাব্য আয় দেখিয়েছেন ২৩.৩ লক্ষ কোটি টাকা, যা আগের বছরের (২০২২-২৩) তুলনায় ১১.৭ শতাংশ বেশি। এই আয়ের একটা বড় অংশ আসে কর থেকে। সাধারণ ভাবে করদাতা বলতে আয়কর যাঁরা দেন তাঁদের কথাই মনে আসে। আয়কর হচ্ছে প্রত্যক্ষ কর— এ ছাড়াও প্রত্যক্ষ করের আওতায় আসে কর্পোরেট কর, যা লভ্যাংশের উপর আদায় করা হয়। পরোক্ষ করের আওতায় আসে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি), উৎপাদন শুল্ক, আমদানি শুল্ক এবং অন্যান্য। বর্তমান বাজেটে আয় এবং লভ্যাংশের উপর কর আদায়ের সম্ভাবনা পনেরো শতাংশ করে মোট ত্রিশ শতাংশ ধরা হয়েছে; জিএসটি থেকে সতেরো শতাংশ আয় হবে মনে করা হচ্ছে।

ভারতে আয়কর দেন জনসংখ্যার এক নগণ্য অংশ। কিন্তু, পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের ভূমিকা আছে। জীবনযাপনের জন্য যা কিছু কিনতে হয়, সবার উপরেই কিছু না কিছু কর দিতেই হয়। ফলে, অতিদরিদ্র মানুষও করের আওতায় চলে আসেন। যাঁর কোনও রকম কর দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তাঁর থেকেও কর আদায় করা অর্থশাস্ত্রের ভাষায় ‘রিগ্রেসিভ’ বা পশ্চাদ্‌গামী।

ব্যক্তিগত আয়করে গত তিন বছর ধরে এক বিকল্প নতুন করকাঠামো চালু হয়েছে। এই বাজেটে সেই নতুন করকাঠামোর আওতায় আগামী বছর আয়করে বেশ কিছু ছাড়ের কথা বলা হয়েছে। আপাত ভাবে দেখানো হচ্ছে যে, নতুন ব্যবস্থায় কর দিতে হবে কম— সাড়ে সাত লক্ষ টাকা অবধি আয়ে কর ছাড়। মধ্যবিত্তের মন রাখার চেষ্টা। দেড়-দু’দশক ধরে মধ্যবিত্তের মধ্যে তিনটে ভাগ হয়ে গিয়েছে— নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্য-মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত। এর প্রধান কারণ নিম্নবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক বিশাল ব্যবধান। যদিও দুই বিত্তেরই আয় বৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু নিম্নের থেকে উচ্চের আয়বৃদ্ধির হার অনেক গুণ বেশি। এক বিপুল জনসংখ্যার আয় করের আওতায় না এলেও যদি ধরে নেওয়া যায় যে, আড়াই বা তিন লক্ষ টাকা বার্ষিক আয় পর্যন্ত নিম্ন-মধ্যবিত্তের ঊর্ধ্বসীমা, তা হলে বার্ষিক সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিম্ন-মধ্যবিত্তের সর্বোচ্চ আয় যাঁদের, নতুন কর-কাঠামোয় তাঁদের কর দিতে হবে না। আট কোটি আয়করদাতার মধ্যে এক কোটি এর আওতায় পড়েন বলে আয়কর সমীক্ষায় জানা গেল। উচ্চ-মধ্যবিত্তের বার্ষিক আয় শুরু পনেরো লক্ষ টাকা থেকে অর্থাৎ যাঁরা ৩০% করের আওতায় পড়েন। ত্রিশ লক্ষ টাকা বার্ষিক আয় পর্যন্ত উচ্চ-মধ্যবিত্তের গণ্ডি ধরা যায়। মাঝখানে মধ্য-মধ্যবিত্তের বাস। তা হলে যে দাবি করা হচ্ছে এই বাজেটে নতুন কর ব্যবস্থায় মধ্যবিত্তের সুবিধে হল, তা আংশিক সত্যি। মনে রাখা প্রয়োজন, আয় ও ব্যয়ের মতো সঞ্চয়ও মধ্যবিত্তের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। দেশের আয়, ব্যয় এবং সঞ্চয়ের প্রায় অর্ধেক মধ্যবিত্তের অবদান। তাই এ বছরেও কর বাঁচানোর প্রবণতার তাড়নায় লোকে কর-বাঁচাও প্রকল্পে টাকা জমাবেন। সে ক্ষেত্রে পুরনো কর-কাঠামোই বেছে নেবেন। কারণ, সেখানে এমন কিছু ব্যবস্থা আছে যা সামাজিক সুরক্ষারও কথা ভাবে।

আমাদের দেশে বর্তমান সরকার সামাজিক সুরক্ষার প্রতি সব দায় থেকে নিজেকে নিষ্কৃতি দিতে সক্ষম হয়েছে। বহু উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেই এই সুরক্ষার ব্যবস্থা করাকে রাষ্ট্রের ‘ধর্ম’ বলে গণ্য করা হয়। এর মধ্যে আছে প্রবীণ, অতিপ্রবীণ, বিশেষ ভাবে সক্ষম, দুরারোগ্য ও মারণব্যধিতে আক্রান্ত, নির্ভরশীল মহিলাদের কথা আলাদা করে ভাবার বিষয়টিও। অন্যান্য অনগ্রসর জাতিভুক্ত জনগোষ্ঠীর জন্য নামমাত্র মাসোহারা এবং সাময়িক ভাবে কম দামে বা বিনামূল্যে রেশন দিয়ে দায় সেরেছে সরকার, যেমন করেছে অতিদরিদ্র প্রবীণ ও অক্ষম ব্যক্তিদের জন্যে। প্রবীণ ও অক্ষম ব্যক্তিদের ট্রেনের ভাড়ায় ছাড় করোনার অজুহাতে আগেই তুলে দিয়েছে। নতুন কর-কাঠামোয় এদের যাবতীয় ছাড়, এমনকি চিকিৎসা বিমা এবং প্রতিবন্ধকতার জন্য সেই ব্যক্তিদের এবং সেই সব সন্তানের চিকিৎসা ও প্রতিপালনের জন্যে অভিভাবকদের আয়করে ছাড় আর নেই। সাধারণ ব্যক্তিদের চিকিৎসা বিমায় ছাড় তুলে দিয়ে নির্ভরশীল বৃদ্ধ পিতা-মাতাদের অসহায় করেছে। প্রবীণদের আয়ে ব্যাঙ্কের সুদ সমেত অন্যান্য আয়ে ছাড় আর নেই। এই ব্যবস্থাগুলো করছাড়ের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন অসরকারি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দিন সংগ্রাম করেছিল। এই ছাড়গুলো শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তার জন্যে নয়, তা এক শ্রেণির মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান। সিনিয়র সিটিজ়েন সেভিংস স্কিমে ৩০ লক্ষ টাকা জমা রাখতে সক্ষম একমাত্র উচ্চবিত্ত এবং সদ্য অবসর নেওয়া উচ্চ-মধ্যবিত্ত নব্য-প্রবীণেরা।

চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য ব্যয় দান নয়, সাংবিধানিক অধিকার। নতুন কর ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করতে এই ছাড়গুলো পুনর্বহাল করার জন্য আবেদন রইল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE