Advertisement
৩১ মার্চ ২০২৩
Union Budget 2023

জনদরদি বাজেট কাকে বলে

আয়করের হার কমে একটু সাশ্রয় হলে তা যেমন মধ্যবিত্তকে খানিক বাড়তি খরচ করতে উৎসাহ দেবে, তেমনই সেই খরচ থেকে পরোক্ষ কর সংগ্রহ বাড়বে।

Picture of Nirmala Sitharaman.

দায়িত্ব: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।

অনির্বাণ দত্ত
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:১১
Share: Save:

শোনা যাচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই বাজেট নাকি জনমোহিনী হতে চলেছে। প্রশ্ন হল, বাজেট থেকে মানুষ কী চান? এত দিনে সাধারণ মানুষ জানেন যে, তেল বা গ্যাসের দাম, অথবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়া-কমা আজ আর সাধারণ বাজেটের উপর নির্ভর করে না। তাই মানুষের কাছে কিছুটা হলেও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে বাজেট। তাও মধ্যবিত্ত চায় একটু কর ছাড়ের সুরাহা। অপর দিকে, সরকারের রাজস্বের অন্যতম উৎস এই কর। মধ্যবিত্তকে সুরাহা দিতে গিয়ে রাজকোষ খালি করা কাম্য নয়। কিন্তু এটাও ঠিক যে, সরকারের কাছে বিকল্প পথে আয় বাড়ানোর সুযোগ থাকলে কেনই বা সাধারণ মানুষ কর ছাড় থেকে বঞ্চিত হবেন? বিত্তশালীদের থেকে অতিরিক্ত কর সংগ্রহ করে যদি এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়, তবে তো কল্যাণরাষ্ট্রের সেই পথেই হাঁটা উচিত। আয়করের হার কমে একটু সাশ্রয় হলে তা যেমন মধ্যবিত্তকে খানিক বাড়তি খরচ করতে উৎসাহ দেবে, তেমনই সেই খরচ থেকে পরোক্ষ কর সংগ্রহ বাড়বে। এর সঙ্গে সঙ্গে কর হারের পরিবর্তন, কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো, ৮০সি ধারার ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো বা গৃহঋণে ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোও মধ্যবিত্তের প্রত্যাশার মধ্যে পড়ে।

Advertisement

গত তিন বছরের বাজেট থেকে মধ্যবিত্তের প্রাপ্তি বিশেষ উৎসাহব্যঞ্জক নয়। অন্য দিকে, অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন সমস্যা কোভিড-পরবর্তী ভারতে বেড়েছে, যা সরকারও অস্বীকার করতে পারছে না। তাই মাননীয়া অর্থমন্ত্রীকেও প্রমাণ করতে হয় যে, তিনি মধ্যবিত্ত সমাজেরই প্রতিনিধি, এবং তিনি এই সমস্যা সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধিকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশু পরিকল্পনা সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই এ বারের বাজেট সরকারের কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। শুধুমাত্র মোট কর সংগ্রহের ঊর্ধ্বগতি বা জিএসটি আদায়ের পরিসংখ্যান বা শেয়ার বাজারের সূচকের ঊর্ধ্বগতি দিয়ে যে ভারতের যথার্থ আর্থিক অবস্থাকে চিহ্নিত করা যায় না, তা পরিষ্কার।

ভোটসর্বস্ব বাজেট আজ ভারতের কাছে কাম্য নয়। ভারতের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন আনতে চাই এক যথাযথ পরিকল্পনা, যা একাধারে সরকারের আয় বাড়াবে এবং সাধারণ মানুষের আয়কে সুনিশ্চিত করবে। তাই এই বাজেটের কিছু সার্বিক অভিমুখ বা দিশা থাকতে হবে, যা ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সুদূরপ্রসারী আর্থিক বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে।

সিএমআইই-র সাম্প্রতিক রির্পোট বলছে যে, দেশে বেকারত্ব বেড়েছে; কিন্তু অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঠিক পরিসংখ্যান আজ কারও জানা নেই। গত বাজেটে গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনের অধীনে প্রকল্পের ব্যয়বরাদ্দে বিপুল কাটছাঁট করা হয় যা গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে দ্রুত চাঙ্গা করতে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো ছাড়া গতি নেই। শ্রমের বাজারে অস্থিরতার কারণে পরিযায়ী শ্রমিকদের এক বড় অংশ আজ ১০০ দিনের কাজকে আঁকড়ে বাঁচতে চাইছেন। এমন প্রান্তিক মানুষদের ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করাও যে সরকারের অবশ্যকর্তব্য, সরকার সে কথাটা প্রায়শই ভুলে যায়। শুধুমাত্র বিনাপয়সার রেশন দিয়ে তাঁদের দুর্দশা ঘোচানো যাবে না, তাঁদের আয় বাড়ানোর পথ তৈরি করাও প্রয়োজন।

Advertisement

সরকারের ঘোষিত কর্মসূচিতে ভারী শিল্পের প্রসারের কথা থাকলেও গত আট বছরে সেই অর্থে দেশব্যাপী তার প্রভাব দেখা যায়নি। অতীতে দেশীয় সংস্থাগুলিকে শর্তসাপেক্ষে কর ছাড়ের সুযোগ দিলেও দেশীয় উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি সেই অর্থে উৎসাহী হয়নি। অপর দিকে, ক্রমাগত বেড়ে চলা সুদের হার শিল্পোদ্যোগীদের পিছিয়ে আসতে বাধ্য করেছে। বিগত এক বছরে লাগাতার সুদ বৃদ্ধির পরেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আবার যে সুদ বাড়বে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সে ক্ষেত্রে নতুন কোনও কারখানা বা চাকরি তৈরির পরিকল্পনা কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। বিগত কয়েক মাসে দেখা যাচ্ছে যে, খুব কমসংখ্যক শিল্পপতিই ভারী শিল্পের বিকাশে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। মানুষের হাতে কর ছাড়ের অতিরিক্ত টাকা যদি না চাহিদা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, তবে ভারী শিল্পের উৎপাদন বিলম্বিত হবে। আশঙ্কা যে, এই প্রবণতা ভারতের আমদানি-নির্ভরতা আরও বাড়াবে।

বিশ্বের প্রধান অর্থব্যবস্থাগুলির তুলনায় ভারতে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে বাজেটবরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। কোভিডের পরে স্বাস্থ্যখাতে কিছু বরাদ্দ বাড়লেও আজও জনস্বাস্থ্য, অপুষ্টি, শিশুমৃত্যুর হারের পরিসংখ্যান আশাব্যঞ্জক নয়। প্রকৃত অর্থে জনদরদি বাজেট তৈরি করলে এই দু’টি খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.