Advertisement
০২ মে ২০২৪
Crisis Of The Mental Patients

ব্যক্তিকেন্দ্রিক বোঝাপড়ার গোলমালে জীবন সহায়তা কেন্দ্র এখন কার্যত একটা অশ্লীল রসিকতা হয়ে উঠছে

যে সংখ্যক মানুষ, যে হারে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হন, তার থেকে অনেক কম সংখ্যায় মানুষ অনেকটাই কম হারে চিকিৎসার প্রয়োজন ফুরোলে হাসপাতাল থেকে নিয়মমাফিক ভাবে ছাড়া পান।

Hospitals, Rehabilitation Homes & the crisis of the Mental Patients

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রত্নাবলী রায়
রত্নাবলী রায়
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:০৫
Share: Save:

প্রায় অনন্তের কাছাকাছি অপেক্ষার পর বাসব ঘাড় ঘুরিয়ে জানালেন, সবেমাত্র আত্মা তাঁর দেহে পুনঃপ্রবেশ করেছে। এখন তাঁর স্নানের ইচ্ছা নেই। আর স্নান করার আগে সখীদের খোঁজ পাওয়াও তো দরকার! না হলে স্নানটা হবে কী করে? অতএব নার্স তাঁকে বোঝাতে বাধ্য হলেন যে, ওষুধটা খেয়ে নিলে সখীদের খুঁজে পেতে সুবিধা হতে পারে। এই সম্ভাবনাটা যে বিচার করা হয়নি, সে জন্য জিভ কেটে লজ্জা পেয়ে ওষুধটা খেয়ে নিলেন বাসব।

আপাতত বাসবকে সরকারি মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তিনি ‘ফিট ফর ডিসচার্জ’। অর্থাৎ, হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার মতো সুস্থ। এটা বোঝার মাপকাঠি কী, সেটা অবশ্য কেউই পরিষ্কার করে বলেন না। হতে পারে, হাসপাতালে রেখে সূক্ষ্মদেহে বাসবের নিজ শরীরে যাতায়াত এবং সখীর খোঁজ— কোনওটারই প্রশমন আর সম্ভব নয়। এর পরে নিয়মিত ওষুধ ও পথ্য খাওয়ানো, নিজে উদ্যোগী না হলেও তাঁর শরীরের খেয়াল রাখা— এগুলিই প্রয়োজন। কিন্তু তা হলে তো ওষুধ এবং পথ্য খাওয়ানো, নিয়মিত স্নান করানো— এগুলি করার মতো কাউকে প্রয়োজন। সেই দায় বর্তায় পরিবারের উপর। অর্থাৎ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে থাকবেন। অথবা তাঁর দেখভাল করার মতো কেউ থাকবেন। তা হলেই তিনি ‘ফিট ফর ডিসচার্জ’।

Hospitals, Rehabilitation Homes & the crisis of the Mental Patients

—প্রতীকী চিত্র।

বাসবের নাম ‘ফিট ফর ডিসচার্জ’ ক্যাটেগরিতে রেকর্ড হল। কিন্তু কোন কোন শর্তে তাঁর ‘ডিসচার্জ’ হয়েছে, সেটা গোটা নথিকরণের প্রক্রিয়া থেকে উবে গেল। ফলে সরকারি প্রক্রিয়ার অমোঘ অঙ্গুলিহেলনে কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি খুঁজে স্বনির্ভর হওয়ার তালিকায় বাসবের নাম নথিবদ্ধ হল। সে জন্য সময় নির্ধারিত হল ১১ মাস।

সকাল থেকে বাসবের দাঁত-মাজা, প্রাতঃকৃত্য ইত্যাদি থেকে শুরু করে কাজের প্রশিক্ষণের আগে হাত-পা নাড়ানোর অভ্যাস ফিরিয়ে আনার যে দৈনিক রুটিন— সখীরা এসে না পৌঁছলে তাঁর জন্য তার কোনওটাই সম্ভব নয়। ফলে বাসবের মতো প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে স্বাধীন জীবনযাপন করবেন বলে তালিকাভুক্ত এমন ১০০ জনের জন্য সরকারি ভাবে বরাদ্দ দু’জন ‘কেয়ার গিভার’-এর এক জনকে বাসবের সঙ্গে অপেক্ষা করতে হয়। বাসবের সখীরা কখন প্রতিযোগী বাসুদেব কৃষ্ণকে ফাঁকি দিয়ে তাঁর কাছে এসে পৌঁছবেন তার জন্য। এমন নয় যে বাসব ‘কেয়ার গিভার’-এর সমস্যাটা বোঝেন না। বরং উল্টো। প্রায় রোজই সেই দিনের ডিউটিতে থাকা ‘কেয়ার গিভার’কে তিনি অন্তত বার তিনেক জানান, তাঁকে যে এখানে কেন নিয়ে আসা হয়েছে, সেটা তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি হাসপাতালেই ভাল ছিলেন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে সখীদের আগমনের প্রতীক্ষা করাটাও অনেক সুবিধেজনক ছিল। বাসব কোনও দিন যে সত্যিই সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন, তার একমাত্র লক্ষণ এটাই। তিনি অন্তত এটা বুঝতে পারছেন যে, হাসপাতালই তাঁর সঠিক ঠিকানা। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা এবং চিকিৎসকেরা এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে দ্বিমত হলে তাঁর কিছু করার থাকে না।

Hospitals, Rehabilitation Homes & the crisis of the Mental Patients

—প্রতীকী চিত্র।

মইদুলকে পুলিশ সরকারি মানসিক হাসপাতালের গেটে নামিয়ে দিয়ে যখন চলে গেল, তখন অনেক রাত। অত রাতে যাওয়ার আর কোনও ঠিকানার কথা না জানাতে পারায় বেশ কিছু সপ্তাহ যে হাসপাতালে কাটাতে বাধ্য হয়েছেন মইদুল, গুটিগুটি সেখানেই ফিরে গেলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আতান্তরে পড়লেন। আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীকে নিয়ে দল পাকিয়ে মইদুলকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য হাসপাতাল থেকে পালান। বাড়ি গিয়ে মাকে খুঁজে পাননি। থানায় যান। থানা মইদুলের মায়ের খোঁজ করার বদলে তাঁকে হাসপাতালের গেটে নামিয়ে দিয়ে যায়। হাসপাতালকেও ঢেঁকি গেলার মতো নিয়ম বাঁকিয়ে মইদুলকে আশ্রয় দিতে হয়। কারণ, সুস্থ মইদুলের যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। তাঁর পকেটে কোনও পয়সা নেই।

উপরের দু’টি ঘটনাই সত্যি। নামগুলি শুধু বদলে দেওয়া।

মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। সরকারি মানসিক হাসপাতালগুলির সব থেকে বড় সমস্যা— বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কোনও ব্যক্তি যত দিন হাসপাতালে আছেন, তত দিন ‘রোগী’ই তাঁর পরিচয়। নইলে তিনি হাসপাতালে কেন! অথচ অনেক ক্ষেত্রেই রোগ এখন নেই। বা চিকিৎসার পরে যে অবস্থায় আছেন, তাতে হাসপাতালে থেকে আপাতত কোনও সুবিধা হবে না। হাসপাতালের চিকিৎসার প্রয়োজন ফুরোলে মানুষটি কোথায় যাবেন? সেটা হাসপাতালের বিচার্য বিষয় হওয়ার কথা নয়। কিন্তু নাগরিকদের আশ্রয়ের জন্য রাষ্ট্রের উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে কপর্দকহীন, নিরাশ্রয় ও পরিত্যক্ত মানুষগুলির জন্য হাসপাতালই শেষ আশ্রয় হয়ে ওঠে। কর্তৃপক্ষের পক্ষেও দায় এড়ানো সম্ভব হয় না। ফলে এমন একটা দলা পাকানো অবস্থা তৈরি হয়, যে জট ছাড়ানো দুষ্কর। সরকারি দফতরগুলির মধ্যে চাপানউতর শুরু হয়।

হাসপাতালে কে এলেন, কোন পথে এলেন?

Hospitals, Rehabilitation Homes & the crisis of the Mental Patients

—প্রতীকী চিত্র।

১. অসুস্থ কাউকে আত্মীয়-বান্ধবেরা হাসপাতালে ভর্তি করালেন। ২. ঠিকানাহীন মানুষকে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে আদালতের নির্দেশে পুলিশের মারফত হাসপাতালে পাঠানো হল। ৩. অসুস্থ বোধ করে কেউ নিজে থেকে ভর্তি হলেন বা কারও সহায়তার নিজের দায়িত্বে ভর্তি হলেন।

চিকিৎসার প্রয়োজন মিটলে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় কিছু জটিলতা তৈরি হয়। যেমন, যে মনোরোগীর আত্মীয়-বান্ধবেরা হাসপাতালে ভর্তি করালেন, চিকিৎসার প্রয়োজন ফুরোলে তাঁরা আর তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নেন না। হতে পারে, বাড়িতে দেখাশোনার কেউ নেই। তবে দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করাটাই মূল কারণ। আদালতের নির্দেশে যিনি হাসপাতালে এসেছিলেন, তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য স্থিতিশীল হলেও পুলিশ তাঁর ভাল চেয়েই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলেন। নইলে কোনও অপরাধ না করা সত্ত্বেও তাঁকে থানায় বা জেলে রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে হাসপাতাল সেই মানুষটির বিকল্প বন্দিশালা এবং একমাত্র আশ্রয়। এ ভাবেই এক জন মানুষের মনোরোগের চিকিৎসা-পরবর্তী যত্নের প্রয়োজন এবং তাঁর স্বাধীন জীবনযাপনের অধিকার— একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়ে।

মনোরোগের চিকিৎসায় সমাজবিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠান বেশি কার্যকরী। এই ধারণা এসেছে এক কর্তৃত্ববাদী বোঝাপড়া থেকে। আমাদের মতো দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায় মাথাভারী কেন্দ্রীকৃত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর চেয়ে বিকেন্দ্রীকৃত ছোট ছোট সামাজিক প্রতিষ্ঠান অনেক বেশি কার্যকরী হবে বলে মনে করা হয়। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীকৃত প্রাতিষ্ঠানিক মডেলটিই মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার একমাত্র মডেল হয়ে ওঠে। তার মূল কারণ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ঔপনিবেশিক বোঝাপড়া এবং যে কোনও কর্তৃপক্ষের পক্ষে এই মডেলকে কার্যকরী করা সুবিধাজনক বলে মনে করা। ‘ফিট ফর ডিসচার্জ’ হয়েও হাসপাতালে থেকে যেতে বাধ্য-হওয়া মানুষের ভিড় মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার এই প্রাতিষ্ঠানিক মডেলটিকে চ্যালেঞ্জ করে।

মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকার আন্দোলনের দীর্ঘ চেষ্টায় নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইনে বিকেন্দ্রীকরণের প্রথম ধাপটি অন্তত আদায় করা গিয়েছে। ওই নতুন আইনে রাজ্যভিত্তিক ‘মেন্টাল হেল্থ অথরিটি’ এবং জেলাভিত্তিক ‘মেন্টাল হেল্থ রিভিউ বোর্ড’ তৈরি করতে বলা হয়েছে। রিভিউ বোর্ডগুলি ‘ফিট ফর ডিসচার্জ’ মানুষদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাঁদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে। চিকিৎসার প্রয়োজন ফুরোলেও বেরোতে না পারা মানুষদের দায়িত্ব হাসপাতালের নয়। সেই অপ্রয়োজনীয় দায় থেকে হাসপাতালকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া বিধিবদ্ধ করবে মেন্টাল হেল্থ রিভিউ বোর্ড। পরিবার পরিত্যক্ত, সহায়-সম্বলহীন মানুষদের জন্য কোন নীতি গ্রহণ করা সম্ভব, সেটা খতিয়ে দেখবে স্টেট মেন্টাল হেল্থ অথরিটি। প্রয়োজনে তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করার সুপারিশ করবে। সেই সুপারিশকে কার্যকরী করতে তদ্বির করবে।

জেলা মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি (ডিস্ট্রিক্ট মেন্টাল হেল্থ প্রোগ্রাম)-র মারফত বড় অংশের মানুষের চিকিৎসার বন্দোবস্ত হাসপাতালের আগেই করে ফেলা সম্ভব হবে। ফলে তাঁদের হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে হবে না। নতুন আইনে এই সমস্ত বিধি-বন্দোবস্ত থাকলেও পাঁচ বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও ‘কার্যকরী’ ভাবে স্টেট মেন্টাল হেল্থ অথরিটি, মেন্টাল হেল্থ রিভিউ বোর্ড তৈরি করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু হাসপাতালের উপচে-পড়া ভিড় কমানোর দায় এসে পড়ছে কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য দফতরের সংশ্লিষ্ট আমলাদের উপর।

ফলে আবার কিছু মানুষকে হাসপাতাল থেকে বার করে জীবিকা উপার্জনের মাধ্যমে স্বাধীন জীবনযাপনের উপযোগী করে তোলার যেটুকু উদ্যোগ তৈরি হয়েছে, সেই জীবন সহায়তা কেন্দ্রগুলিও বিপন্ন হয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট মানুষটি আদৌ কর্মক্ষম কি না, জীবিকা উপার্জনের মতো নিয়মিত কাজ করতে পারবেন কি না, তা বিচার না করে, তাঁদের সম্মতির তোয়াক্কা না করে সকলকেই জীবন সহায়তা কেন্দ্রগুলিতে পাচার করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সেখানেই দেখা মিলছে বাসব এবং বাসবের মতো আরও অনেকের। স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামোর মধ্যে কেউ কেউ কোথাও কোথাও ভেবেছেন, বাসব এর পরে কাজ করে রোজগার করবেন। নিজে বাড়ি ভাড়া করে বা মেসে থাকবেন। রান্নাবান্না করে নেবেন। ওষুধ খেয়াল করে খাবেন। এক দিকে, মইদুলের মতো মানুষ কোনও কারণে জীবন সহায়তা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারছেন না বা নিজের দায়িত্বে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না। অন্য দিকে, কেউ মনে করছেন, বাসব তাঁর ওই অবস্থায় রোজগার করে স্বাধীন ভাবে থাকতে পারবেন!

মানসিক রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত বোঝাপড়া অনেকটাই ঠিক হয় চিকিৎসকের বোঝাপড়া দিয়ে। সাইকোলজি-সাইকিয়াট্রির বোঝাপড়া এখনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক। চিকিৎসক এবং চিকিৎসিতের উপর নির্ভরশীল। এমন সম্ভাবনা প্রবল যে, চিকিৎসক বদলালে চিকিৎসাপদ্ধতিও বদলাবে। এই যুক্তিতে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকের ‘সাবজেক্টিভিটি’ স্বাধীন পেশাদার মনোবিদের থেকে বেশি গ্রাহ্য বলে ধরে নেওয়াও সম্ভব। কারণ, এটা ধরে নেওয়া হয় যে, ‘সরকার’ সব সময়েই সব কিছু বেশি বোঝে। ফলে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও আধিকারিকের মনে হতেই পারে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া-পাওয়া এক জন মানুষকে রোজ দাঁতমাজার অভ্যাস করানোই জীবন সহায়তা কেন্দ্রের কাজ। দাঁতমাজার অভ্যাস থেকে রোজগার করে স্বাধীন জীবনে এক জন মানুষকে পুনর্বাসিত করার মেয়াদ ১১ মাস! স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সমস্যাটাও অবশ্য বোঝা দরকার। হাসপাতাল থেকে কেউ যদি নিরুদ্দেশ হন, আদালতের নির্দেশে তাঁদের দরজা এঁটে, তালা দিয়ে পাঁচিল উঁচু করতে দৌড়তে হয়। আবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মানুষ জেলবন্দি আসামি নন, এ নিয়ে যখন মানবাধিকারের প্রশ্ন ওঠে, তখন তাঁদের সব অর্গল খুলে দেওয়ার তোড়জোড় করতে হয়।

এই সমস্ত ব্যক্তিগত বোঝাপড়ার গোলমালে জীবন সহায়তা কেন্দ্র শুধু যে একটা অশ্লীল রসিকতা হয়ে উঠছে তা-ই নয়, ‘ফিট ফর ডিসচার্জ’-এর সার্টিফিকেটটি সম্পর্কেও অযথা সন্দেহ তৈরি করছে।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বরাদ্দ অকিঞ্চিৎকর অর্থের ভগ্নাংশ ধার্য হয় মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য। হাসপাতালের উপচে-পড়া ভিড় কমাতে পারলে তার কিছু সাশ্রয় হবে। কিন্তু সেই অর্থ মানসিক স্বাস্থ্যের বিকেন্দ্রীকৃত চিকিৎসায় কাজে লাগবে বলে কোনও নিশ্চয়তা এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, সেই খরচ যাঁরা করবেন এবং যে প্রয়োজনে করবেন, সেগুলি এখনও পর্যন্ত অনির্দিষ্ট। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি না করে শুধু হাসপাতালের ভিড় কমানোর উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যের ভাগে যে খুদকুঁড়োটুকু জোগাড় হয়েছে, তারও পুরোটা খরচ হবে না।

(লেখক বিশিষ্ট মনোসমাজকর্মী। মতামত নিজস্ব)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mental Health Mental Hospital Rehabilitation centre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE