Advertisement
১০ মে ২০২৪
coronavirus

ছাত্রছাত্রীরা শাস্তি পেল কেন

অনেকেরই প্রশ্ন, দোকান-বাজার, অফিস, সিনেমা হল, যানবাহন যখন সচল, তখন বোর্ড ও কাউন্সিলের পরীক্ষা হলে কি আরও বেশি ভিড় হত?

তূর্য বাইন
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২১ ০৫:১৯
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পর এ বার কাঠগড়ায় সিবিএসই। পরীক্ষাহীন মূল্যায়ন নিয়ে অসন্তোষ ও বিক্ষোভের ধারা অব্যাহত। এ বছর নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ও দশম শ্রেণির অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে ঘোষিত মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল নিয়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভকে খুব অন্যায্য বলা যায় না। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই জানেন, একটু নামী স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অপেক্ষাকৃত কঠিন হয়। উপরন্তু স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোনও সার্বিক নির্দেশিকা না থাকায় নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও স্কুলভেদে উত্তরপত্রের বিচার-বিশ্লেষণ ভিন্ন হয়। অনেক নামী স্কুলের ছাত্রছাত্রীরই অভিযোগ, নবম শ্রেণিতে তাদের কম নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেই নম্বরের ভিত্তিতে ঘোষিত মাধ্যমিকের ফলে তাদের প্রতি সুবিচার হয়নি। তা ছাড়া, দশম শ্রেণির অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের সময় পরীক্ষার্থীরা জানত না, মাধ্যমিকের চূড়ান্ত ফলের ক্ষেত্রে এই নম্বর এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। লকডাউনের কারণে বিদ্যালয় থেকে দূরে বসবাসকারী বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে পারেননি। অনেক স্কুলই সব ছাত্রছাত্রীকে সব বিষয়ে গড় নম্বর দিয়েছে। স্কুলভেদে এই গড় নম্বরেরও তারতম্য ঘটেছে।

নবম শ্রেণির পরীক্ষায় যে সব মেধাবী ছাত্রছাত্রী কোনও কারণে দু’একটা বিষয়ে আশানুরূপ ফল করতে পারে না, সাধারণত তারা জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আগের বছরের ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ বারের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই তার ব্যত্যয় হয়নি। অথচ, পরীক্ষা না নিয়ে ফল ঘোষণার অদ্ভুত নিয়ম মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পরিশ্রমে যে জল ঢেলে দিয়েছে, বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে, অল্পবয়সি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কিছু মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। সমাজমাধ্যমে নিরন্তর ‘ট্রোল’ ছাড়াও আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের বক্রোক্তিতে বিপর্যস্ত বহু ছাত্রছাত্রীই মুখ ফুটে নিজের মাধ্যমিকের ফল বলতে সঙ্কোচ বোধ করছে। এ যেন অনেকটা চুরি না করেও চোর প্রতিপন্ন হওয়ার মতো। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার পরেই রাজ্য জুড়ে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের যে বিক্ষোভ দেখা গেছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন। পথ অবরোধ থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া, ভাঙচুর, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সামনে ধর্না, সংসদ সভানেত্রীর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ, কিছুই বাদ যায়নি।

উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতকার্য হয়েও আশানুরূপ ফল করতে পারেনি যারা, তারা চূড়ান্ত ফলাফলে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রতিটি বিষয়ে ৪২ শতাংশের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি। অনেকেরই দাবি, একাদশ শ্রেণিতে স্কুলভেদে মূল্যায়নের ভিন্নতার কারণে নামী স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছে। তাদের এই দাবি ও ক্ষোভ যে খুব অমূলক নয়, তা ধরা পড়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রীর কথাতেও। তিনি বলেন, “আমরা খতিয়ে দেখেছি, কিছু কিছু স্কুল পড়ুয়াদের একাদশে অতিরিক্ত বেশি নম্বর দিয়েছে। সেই সব স্কুলের প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। পরে সেই নম্বরগুলির সঠিক মূল্যায়ন করা হয়েছে।” কিন্তু তা করতে গিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে নতুন বিপত্তি ঘটেছে, রাতারাতি বেশ কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নম্বর সংশোধন থেকে তা স্পষ্ট। ডেকে পাঠানো, খতিয়ে দেখা, সতর্ক করা, এই সবই সু-পদক্ষেপ। কিন্তু মাঝখান থেকে যে ছাত্রছাত্রীরা বৈষম্যের শিকার হল, তাদের অবস্থা কি আমরা আন্দাজ করতে পারছি?

অনেকেরই প্রশ্ন, দোকান-বাজার, অফিস, সিনেমা হল, যানবাহন যখন সচল, তখন বোর্ড ও কাউন্সিলের পরীক্ষা হলে কি আরও বেশি ভিড় হত? সম্প্রতি হওয়া সর্বভারতীয় জয়েন্ট এনট্রান্স পরীক্ষা কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে, ঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থাকলে এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া অসম্ভব নয়।

‘যা গেছে, তা গেছে’ বলে হাত ধুয়ে না ফেলে, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে গুরুতর ভাবনাচিন্তার সময় এসেছে। কোভিড-অতিমারি সহজে যাওয়ার নয়, তাই শিক্ষায়তনগুলো অনির্দিষ্ট কাল বন্ধ না রেখে বরং কী ভাবে খোলা যায়, সেই বিকল্প পন্থা অন্বেষণ করা প্রয়োজন। এ রাজ্যের অফিসগুলোকে ২৫ বা ৫০ শতাংশ উপস্থিতির মাধ্যমে সচল রাখা হয়েছে, স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে তা কি নিতান্ত অসম্ভব? ক্লাসভিত্তিক রোটেশন-এর মাধ্যমে ছাত্রদের অন্তত সপ্তাহে দু’দিন ক্লাস করার ব্যবস্থা হলে হয়তো কোভিড-বিধি মেনে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই স্কুলগুলো ফের ছাত্রমুখর হয়ে উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলিতেও স্কুল খোলা রেখে পৃথক পৃথক দিনে শিক্ষকদের জন্যও রোটেশনাল ছুটির কথা ভাবা যেতে পারে। স্কুলগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণির জন্য একাধিক শিফটের কথাও ভাবা যেতে পারে। সদর্থক পর্যালোচনায় আরও নানা বিকল্পের খোঁজ মিলতে পারে। তবে, বিনা পরীক্ষায় ফল নির্ধারণের পুনরাবৃত্তি এড়াতে এখনই স্কুলগুলোর দরজা খুলে দেওয়া প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE