সেদিন ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খবর ছড়িয়ে পড়ল ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার সরাসরি আগ্রাসনের খবর, ছবি। যুদ্ধ শুরুর আগে দেশটা সম্পর্কে পৃথিবীর ঠিক কত সংখ্যক মানুষ কী খবর জানতেন, বোঝা শক্ত। কিন্তু ২৫ তারিখ থেকে দেখা গেল, সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন শ্রেণি, জাতি, ধর্ম, ভাষা এবং রাজনৈতিক মতামত সম্পর্কিত মানুষরা রাশিয়ার এই অকারণ আগ্রাসী যুদ্ধ-ঘোষণার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউক্রেনের পতাকার ব্যবহার করে মানুষ এক দিকে ইউক্রেনের প্রতি সহানুভূতি বা সমর্থন এবং অন্য দিকে পুতিন ও তাঁর সমর্থনকারীদের প্রতি বিরোধিতা ও অসহযোগিতার বার্তা দিয়েছেন। ইউএনএইচসিআর বা বিশ্ব-উদ্বাস্তু সংস্থার কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি মার্চের শেষে মন্তব্য করেন, যুদ্ধ শুরুর এক মাসের মধ্যে ইউক্রেনের মোট এক-চতুর্থাংশ মানুষ গৃহহারা এবং দেশছাড়া হয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি, যেখানে এত অল্প সময়ে কয়েক মিলিয়ন মানুষকে অন্যান্য দেশ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, সাময়িক আশ্রয় দিতে বাধ্য হচ্ছে।
‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজ়েশন ফর মাইগ্রেশন’ নামে এক সংস্থার মতে, ইউক্রেন থেকে খুব কম করে ৬৫ লক্ষ জন এসেছেন, যার মধ্যে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন মহিলারা। মোট ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ এখনও ইউক্রেনে আটকে আছেন। সরকার ৯০টি সরকারি বাসের মাধ্যমে রোজ কিভ এবং অন্যান্য শহর থেকে শরণার্থীদের বর্ডার অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ তাঁদের চুক্তিভুক্ত ২৭টি সদস্য দেশে ইউক্রেন থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের তিন বছর থাকার এবং কাজ করার অধিকার দিয়েছে। তাঁদের সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি চিকিৎসা, বাসস্থান এবং বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছে। যাঁরা তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে বাস করছিলেন, তাঁদের সাহায্যের জন্য ‘দ্য রিজিয়োনাল রিফিউজি রেসপন্স প্ল্যান’ নামে এক সংস্থা বিভিন্ন এনজিও-কে এক ছাতার তলায় এনে তাঁদের দেশে ফিরে যেতে সাহায্য করছে। শুধুমাত্র বাস্তুহারাদের উৎকণ্ঠা এবং যুদ্ধের আতঙ্ক থেকে তৈরি মানসিক ট্রমার চিকিৎসা খাতে ৯ মিলিয়ন ইউরো বাজেট তৈরি করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
ঠিক কত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন? ইউএনএইচসিআর প্রদত্ত হিসাবে ইউক্রেন থেকে সংখ্যাটা এই ১০ মে অবধি ৫,৯৮১,৩৫৮। এর মধ্যে সারা বিশ্বে নথিভুক্ত ইউক্রেনের আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা ২০২১ সালের জুন অবধি যেখানে ছিল ৫৩,৪৭৪, এই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ৬১ লক্ষ। এ ছাড়া শুধু ইউরোপে যাওয়া ইউক্রেনের বাস্তুচ্যুত মানুষদের সংখ্যা আগে যেখানে ছিল ৩৫,৪৯২, বর্তমানে তা ৫০ লক্ষের বেশি। এর মধ্যে কিন্তু অভ্যন্তরীণ ভাবে বাস্তুচ্যুত এবং যাঁরা একই সঙ্গে দুই দেশের নাগরিক, এই দুই ধরনের মানুষদের হিসাব নেই। অভ্যন্তরীণ ভাবে বাস্তুচ্যুত ইউক্রেনের নাগরিকদের মধ্যে ৩০ শতাংশ কিভের বাসিন্দা, ৩৬ শতাংশ পূর্ব ইউক্রেন, ২০ শতাংশ উত্তর ইউক্রেন এবং ৪০ শতাংশ পশ্চিম ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা মানুষ। অভ্যন্তরীণ ভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষদের মধ্যে খাদ্য, নগদ অর্থ, তাঁবু, ফোল্ডিং বিছানা ও শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাপ নিয়ন্ত্রণকারী কম্বলের মতো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। যাঁদের বাড়ি বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের জন্য রিসেপশন সেন্টার তৈরি করেছে।