Advertisement
E-Paper

বছরের সেরা স্মৃতি!

চুলোয় যাক ক্রিকেটীয় দক্ষতা, স্মৃতি মন্ধানা জীবনের বিশ্বকাপ জিতেছেন। স্মৃতিই ‘বছরের সেরা’। তিনিই বছরের সেরা ‘স্মৃতি’।

অনিন্দ্য জানা

অনিন্দ্য জানা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:০০
Best Person of the Year 2025 is Smriti Mandhana

স্মৃতিরা উইন্ডস্ক্রিন পেরিয়ে সামনের রাস্তার দিকে তাকান। ছবি: গেটি ইমেজেস।

চ্যাম্পিয়নেরা গাড়ির রিয়ার ভিউ মিররে চোখ রাখেন না। তাঁরা উইন্ডস্ক্রিন দিয়ে সামনের রাস্তার দিকে তাকান।

কোথায় যেন বাক্যটা পড়েছিলাম। গত রবিবার রাতে ভারত-শ্রীলঙ্কা টি টোয়েন্টি ম্যাচটা দেখতে দেখতে আবার মনে হল। মনে হল ২৯ বছরের এক তরুণীকে দেখে। যিনি রবিবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ১০ হাজার রান পূর্ণ করলেন। দ-শ-হা-জা-র!

ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল তিরুঅনন্তপুরমের মাঠে গোটা দুয়েক সহজ ক্যাচ গলিয়ে, একটা হাঁকপাঁক করে কোনওমতে ধরে ম্যাচটা শেষমেশ হেসেখেলে জিতল। খুব হেসেখেলেও কি? কে জানে! শ্রীলঙ্কা বিশ্বক্রিকেটে ভারতের কাছে এখনও দুধভাত। তবুও ভারতের ২২১ রান তাড়া করতে নেমে তারা ১৯১ করে তো ফেলল! আশ্চর্য নয় যে, ভারতের জয়ের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য পেয়ে গেল শ্রীলঙ্কার মহিলা ক্রিকেটারদের লড়াই। খেলার পরের যাবতীয় আলোচনা তাদের নিয়েই। কী করে সর্বশক্তিমান ভারতের বিশাল রান প্রায় তাড়া করে বসেছিল তারা!

স্বাভাবিক। ভারত এখন বিশ্বক্রিকেটের দানব। ধ্রুপদী টেস্ট ক্রিকেট চুলোয় যাক। ভারতের সীমাহীন সাফল্য সব ধরনের চটজলদি সাদা বলের ক্রিকেটে। চিরশত্রু পাকিস্তানকে ডেকে ডেকে দুরমুশ করছে পুরুষদের দল। তার উপর কয়েক মাস আগে মহিলাদের ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ জিতেছে। তার পর থেকে হরমনপ্রীত কৌরদের নিয়ে প্রত্যাশা তুঙ্গে। আশ্চর্য নয় যে, ২০২৫ সালে ‘বছরের সেরা’ বাছতে বসে অনেকে হরমনপ্রীতকে বেছে নিয়েছেন।

যদিও আমার মনে হল, হরমন নন, বছরের সেরা চরিত্র হলেন তাঁর সতীর্থ এবং ভারতীয় দলে তাঁর ডেপুটি। স্মৃতি মন্ধানা। এবং কোনও ক্রিকেটীয় কারণে বা ক্রিকেটীয় কীর্তির কারণে নয়। স্মৃতি ২০২৫ সালে বছরের সেরা ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকবেন তাঁর ব্যক্তিজীবনের বিপর্যয়কে শান্ত ভাবে মোকাবিলা করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ায়। ওই যে, চ্যাম্পিয়নেরা রিয়ার ভিউ মিররে চোখ রাখেন না। তাঁরা উইন্ডস্ক্রিন পেরিয়ে সামনের রাস্তার দিকে তাকান।

২০২৫ যে বছর হিসাবে খুব দিব্যি গেল, তা বলা যাবে না। মনে রাখার মতো ভাল ঘটনা প্রায় নেই-ই। খারাপ আছে ভূরি ভূরি। অবশ্য এই দাঁড়িপাল্লাটা প্রতি বছরই বেশি করে খারাপের দিকে ঝুঁকছে। ২০২৫ ব্যতিক্রম হতে যাবে কোন দুঃখে!

আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় অভিঘাতপূর্ণ ঘটনা নিঃসন্দেহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন। দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েই ট্রাম্প কমলবনে মত্ত হস্তীর মতো গোটা দুনিয়ার অধিকাংশ দেশের উপর শুল্ক চাপিয়ে পৃথিবীর অর্থনীতিতে ত্রাহি-ত্রাহি রব ফেলে দিয়েছেন! সেই টানাপড়েন এখনও চলছে। যেমন এখনও চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ২০২৫ সালেও যা থামল না। গাদা গাদা বৈঠকই হল শুধু। ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধ হল। ভ্যাটিকান সিটি শূন্য করে লোকান্তরে চলে গেলেন পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর জায়গায় এলেন পোপ লিয়ো। প্যারিসের ল্যুভ জাদুঘরে দুঃসাহসিক ডাকাতি হল। আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ২,২০০ মানুষের মৃত্যু হল। নেপালে জেন জ়ি-র প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আগুন এবং অরাজকতা দেখা গেল। বাংলাদেশের ঢাকায় স্কুলের উপর ফাইটার জেট ভেঙে পড়ল।

বিমান ভেঙে পড়েছিল ভারতেও। এবং তা প্রায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতোই। জুন মাসের ১২ তারিখে এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী ড্রিমলাইনার বোয়িং অহমদাবাদ থেকে ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ভেঙে পড়ে শহরের মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের উপর। মারা যান ২২৯ জন যাত্রী (তাঁদের মধ্যে ছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণিও), দুই পাইলট-সহ ১২ জন বিমানকর্মী। মৃত্যু হয়েছিল ১৯ জন সাধারণ পথচলতি মানুষেরও। যাঁরা ওই অভিশপ্ত বিমানে সওয়ার হননি। স্রেফ দুর্ভাগ্যজনিত দুর্ঘটনার শিকার। আবার অলৌকিক ভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন বিমানের মাত্র এক জন যাত্রী। অলৌকিক, কারণ, তিনি নিজেও জানেন না, কী ভাবে বেঁচে ফিরলেন।

ভারতে আর কী হল চলে-যাওয়া বছরে?

ফিরে তাকালে দেখছি মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিল। উত্তরপ্রদেশের মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে পুণ্যার্থীদের মৃত্যু, নয়াদিল্লি স্টেশনে কুম্ভফেরত ১৮ জন যাত্রীর পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু, তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক সভায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু, বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে প্রথম বার আইপিএল জয়ী আরসিবি-র সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উন্মত্ত এবং তারকাবুভুক্ষু জনতার হুড়োহুড়ির জেরে ১১ জনের পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু।

আরও পড়ুন:

তবে ২০২৫ সালে সবচেয়ে বড় অভিঘাত তৈরি করেছিল এপ্রিল মাসে পহেলগাওঁয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু। যার প্রেক্ষিতে ঘটেছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। অনেকদিন পরে একটা ‘হাল্লা চলেছে যুদ্ধে’ ভাব দেশ জুড়ে। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ হচ্ছিলও বটে বেশ। মাঝখান থেকে পাবলিসিটিবাজ ট্রাম্প ভরা হাটে হাঁড়ি ভেঙে বললেন, তিনিই দুই দেশকে যুদ্ধ থামাতে বাধ্য করেছেন! ব্যস, যুদ্ধ শেষ। উত্তেজনাও শেষ। আবার নিস্তরঙ্গ জীবন। তার পরে অবশ্য লালকেল্লার কাছে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। কিন্তু সে তো আর ‘যুদ্ধ’ নয়। ফলে আমরা যথেষ্ট উত্তেজনার খোরাক পাইনি।

২০২৫ সালে দিল্লি এবং বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভাবে জিতেছে বিজেপি। পাশাপাশি, রাজধানী দিল্লির আবহাওয়া বিষাক্ত থেকে বিষাক্ততর হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুচরণ যে, কৃত্রিম বৃষ্টিও নামানো হয়েছিল। যদিও সে প্রচেষ্টা হালে পানি পায়নি। হাওয়া খারাপ ছিল দেশের আকাশেও। বছরের শেষাশেষি ইন্ডিগোর উড়ান বিপর্যয় দেশের মানুষকে চূড়ান্ত হয়রানিতে ফেলেছিল।

চলে যাওয়া বছরে ঝলমলে বলতে একমাত্র ক্রিকেটের আঙিনা (নক্ষত্রসরণটুকু বাদ দিলে। অর্থাৎ, বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘটনা বাদ দিলে)। ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। এশিয়া কাপও জিতেছে। তা-ও তিন তিনবার পাকিস্তানকে হারিয়ে। ফাইনালের পরে পাকিস্তানি ক্রিকেটকর্তার হাত থেকে ট্রফি না নেওয়ার মতো এবং টসের সময় তিনটি ম্যাচেই পাক অধিনায়কের সঙ্গে হাত না-মেলানোর মতো অভব্যতাটিও করেছে অবশ্য। কিন্তু ওই যে, ভারত এখন ক্রিকেটবিশ্বের দানব। এবং আইপিএল নামক একটি টুর্নামেন্টের জোরে ভারতীয় বোর্ড ক্রিকেটবিশ্বের মধ্যে ধনীতম সংস্থা। ফলে তাদের সতেরো খুন মাফ। প্লাস ভারতের জয় শাহ আইসিসি-র চেয়ারম্যান। ভারতকে আর ছোঁয় কে! উল্টে ক্রিকেটে ভারত যা ছুঁচ্ছে, সোনা। মহিলাদের বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয় ছাড়াও অন্ধ মহিলাদের ক্রিকেটেও প্রথম বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত।

এই হল সংক্ষেপে ২০২৫-এর ঘটনা-দুর্ঘটনার সালতামামি। কিন্তু ঘটনা তো মানুষকে ঘিরেই ঘটে। এবং সেই মানুষ ‘চরিত্র’ হয়ে ওঠে তাকে ঘিরে ঘটে-যাওয়া ঘটনার স্রোতের মুখে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে।

২০২৫ সালে আমার কাছে সেই মানুষটির নাম স্মৃতি। স্মৃতি মন্ধানা। স্মৃতিকে নিয়েই বছরের সেরা স্মৃতি।

মারোয়াড়ি পরিবারের এই কন্যার জন্ম মুম্বইয়ে। তবে দু’বছর বয়স থেকে তিনি পরিবারের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের সাংলির বাসিন্দা। সেখানেই তাঁর স্কুলের পড়াশোনা এবং কলেজ থেকে বাণিজ্যের স্নাতক হওয়া। তার আগে থেকেই অবশ্য ক্রিকেট শুরু হয়ে গিয়েছিল। বাবা এবং ভাই স্থানীয় স্তরে ক্রিকেট খেলতেন। তাঁদের সঙ্গেই ক্রিকেট শুরু ভবিষ্যতের ভারতীয় ওপেনারের। মাত্র ন’বছর বয়সে মহারাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব ১৫ দলে নির্বাচিত। এগারোয় অনূর্ধ্ব ১৯ দলের সদস্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০১৩ সালে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে একদিনের আন্তর্জাতিক এবং টি টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে দেশের হয়ে অভিষেক। ২০১৪ সালেই ভারতীয় টেস্ট দলে। বিপক্ষ ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিকে সেঞ্চুরি। বিপক্ষ? মহিলা ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দল অস্ট্রেলিয়া।

এখনও পর্যন্ত ১৭টি আন্তর্জাতিক শতরান রয়েছে স্মৃতির। যে রেকর্ড তিনি যুগ্ম ভাবে ধারণ করছেন অস্ট্রেলীয় তারকা ব্যাটার মেগ ল্যানিংয়ের সঙ্গে। ভারতীয় মহিলা ব্যাটারদের মধ্যে দ্রুততম শতরানও (৫০ বলে) তাঁর। ২০১৯ সালে ‘অর্জুন’ পুরস্কার পেয়েছেন।

এ তো গেল ক্রিকেটমাঠের স্মৃতি। দড়ির এ পাশের স্মৃতি গভীর ছাপ ফেলেছেন ভারতীয় জনতার উপর। তন্বী, সুন্দরী, সফল, বলিয়ে-কইয়ে এবং গ্ল্যামারাস। ফলে তিনি যে বিপণন জগতের লক্ষ্মী হবেন, তা তো খুব বড় কথা নয়। কিন্তু তাঁর যাপন এবং ধারালো অস্ত্বিত্বে ক্রিকেটমাঠের বাইরের জনতার কাছেও তিনি এক আশ্চর্য বৈগ্রহিক মর্যাদা পেয়ে গিয়েছেন। সেই অসামান্য ভারতীয় জনতা, যারা কোহলি ব্যর্থ হলে গ্যালারিতে বসা তাঁর বান্ধবীকে দায়ী করে। সেই অসাধারণ জনতা, যারা একদা ইডেন গার্ডেন্সে সুনীল গাওস্করের স্ত্রী মার্শেনিলের গায়ে কমলালেবুর খোসা ছুড়ে মেরেছিল। সেই অকুতোভয় জনতা, যারা মহম্মদ শামিকে বলেছিল, ধর্মে মুসলিম শামি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইচ্ছে করে খারাপ বল করেছেন!

এই উগ্র পাগলাটে, ছিদ্রান্বেষী এবং অনিশ্চিত জনতার চোখের সামনে নিজের বিয়েটি ভেঙে দিলেন স্মৃতি। অভাবনীয়! আর কোন বিয়ে? না, যে বিয়ের নান্দীমুখ এগোচ্ছিল রূপকথার মতো। যে স্টেডিয়ামে তিনি বিশ্বকাপ জিতেছেন কিছুদিন আগে, সেই মাঠের মধ্যিখানে চোখে পট্টি বাঁধা স্মৃতিকে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর খ্যাতনামী প্রেমিক। বিশ্বজয়ী প্রেমিকার সামনে পিচের উপর নতজানু হয়ে তাঁর আঙুলে পরিয়ে দিচ্ছেন হিরের আংটি। চোখের বাঁধন খুলে যে তরুণী ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গীর বুকে কপট লজ্জায় মুখ গুঁজে দিচ্ছেন, তিনি ভারতীয় দলের ডাকাবুকো ক্রিকেটার নন, নেহাতই আহ্লাদী একটি মেয়ে। যে মেয়ে তার টিমমেটদের সঙ্গে নাচতে নাচতে ‘রিল’ বানায় ‘লগে রহো মুন্নাভাই’ খ্যাত গান ‘সমঝো হো হি গ্যয়া’র সঙ্গে। মানে হয়ে গেল আর কি! নাচতে নাচতে সগর্বে তুলে ধরে বাঁ হাতের অনামিকায় পরা অঙ্গীকারের অঙ্গুরীয়। ইনস্টাগ্রামে মুহূর্তে কোটি কোটি লোক দেখে ফেলে সেই সমবেত উচ্ছ্বাস-অবগাহন।

সেখান থেকে কী কঠিন বাস্তবের মাটিতে আছড়ে পড়া! বিয়ের দিন বাবার অসুস্থতা, তার পরেই দীর্ঘদিনের দয়িতের পরমহিলার সঙ্গে অস্বস্তিকর হোয়াট্‌সঅ্যাপ চ্যাট সারা দুনিয়ার সামনে ফাঁস হয়ে যাওয়া, ব্যক্তিগত জীবনের খাতা বেআব্রু হয়ে পড়ে ভবিষ্যৎ যাপনটাই অনিশ্চিতের পথে চলে যাওয়া।

যাদের কেউ চেনে না, কেউ খোঁজ রাখে না, তাদের জীবনেও এই ঘটনা সাংঘাতিক ব্যর্থতা এবং হতাশার বোধ বয়ে আনতে পারে। আর স্মৃতি তো জাতীয় ‘আইকন’! সফল, তন্বী, সুন্দরী এবং বিখ্যাত। যাঁর ব্যক্তিগত জীবনে সারা দেশ সর্বদা উঁকিঝুঁকি মারতে ব্যস্ত। আর তিনিও জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে আমজনতা এবং ভক্তকুলের সঙ্গে খুশিয়াল মুহূর্ত ভাগ করে নিতে ব্যাকুল।

সেই স্বর্গ থেকে এক লহমায় পতন! ভেবেও শিউরে ওঠার মতো।

দুটো সম্ভাবনা ছিল স্মৃতির জীবনে। এক, লোকে কী বলবে ভেবে বিয়েটা করে ফেলা। দুই, গভীর অবসাদে ডুবে যাওয়া। স্মৃতি তৃতীয় একটি রাস্তা তৈরি করেছেন। এবং সেই রাস্তায় হেঁটেছেন। নিজেকে বলেছেন, তিনি কারও তুলনা হতে চান না। তিনি তাঁর নিজস্ব উইকেটে খেলা শেষ করতে এসেছেন। যতই তাঁর বন্ধু তথা টিমমেট জেমাইমা রদ্রিগেজ় অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশের লোভনীয় চুক্তি ফেলে দিয়ে তাঁর সঙ্গে থেকে যান। এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাইরের সাপোর্ট সিস্টেমের আগে নিজের ভিতরের লোকটার সঙ্গে আগে বোঝাপড়া করতে হয়। আয়নায় নিজের চোখে চোখ রেখে নিজের সত্যকে নিজের কাছে স্বীকার করতে হয়।

কাজটা অসম্ভব। কিন্তু করা যায় (‘এনট্র্যাপমেন্ট’ ছবিতে শন কনারির সংলাপ ‘ইম্পসিব্‌ল। বাট ডুয়েব্‌ল’ স্মর্তব্য)। স্মৃতি সেটাই করেছেন। অসম্ভবকে নিজের মনের আয়ত্তে নিয়ে এসেছেন। কৃত্রিম রংধনুর জীবনকে সরিয়ে রেখে ফিরে গিয়েছেন একক জীবনে। কারও বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। শুধুমাত্র শীলিত ভঙ্গিতে একটি বাক্যে বলেছেন, এখন ক্রিকেটই তাঁর একমাত্র ভালবাসা। বুঝহ যে জন জানহ সন্ধান! স্মৃতি দেখিয়েছেন, আসল ক্ষমতা হল সেটাই, যা চিৎকৃত নয়। যা আগুনের মধ্য দিয়েও শান্ত ভাবে হেঁটে আসতে শেখায়। নীরবে বলেছেন, আসল শক্তি হল নিজেকে জানা। আসল ক্ষমতা হল নিজেকে চেনা। বুঝিয়েছেন, শান্ত ভাবেও ঝড়ের মোকাবিলা করা যায়। নিরুচ্চারে বলেছেন, আশপাশের হট্টমেলার মধ্যেও তিনি বুক ভরে শ্বাস নিতে পারেন। ওই নীরবতাই তাঁর আসল বিবৃতি। শিখিয়েছেন, চ্যাম্পিয়নেরা গাড়ির রিয়ার ভিউ মিররে চোখ রাখেন না। তাঁরা উইন্ডস্ক্রিন দিয়ে সামনের রাস্তার দিকে তাকান।

চুলোয় যাক ক্রিকেটীয় দক্ষতা, নিকুচি করেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের। স্মৃতি মন্ধানা জীবনের বিশ্বকাপ জিতেছেন। স্মৃতিই ‘বছরের সেরা’। তিনিই বছরের সেরা ‘স্মৃতি’।

Smriti Mandhana Indian cricketer Palash Muchhal ICC Womens World Cup 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy