মশুলে সেনার কড়া নজরদারি।
মরুশহরটাকে ঘিরে যুদ্ধের বীভৎস ধ্বংসলীলা এখন, চারপাশে ভগ্নস্তূপ, মৃত্যুর পায়ের ছাপ। কিন্তু সে সবের মাঝে উজাগর এক রক্তাক্ত মুদ্রা। মুদ্রার এক পিঠে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার চরম ক্ষত, অন্য পিঠে রক্ষকের তরবারিকেই সংহারক হয়ে উঠতে দেখা তথা বিশ্বাসভঙ্গের নিদারুণ ও অসহায় বেদনা।
যে মরুশহরের কথা বলছি, তার নাম মসুল। উত্তর ইরাকের এই নগরকে ইসলামিক স্টেটের দখলমুক্ত করার চেষ্টা হতেই যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, সে কারও অজানা নয়। মার্কিন সাহায্যপুষ্ট ইরাকি বাহিনী যে মসুল পুনরুদ্ধার করে নিয়েছে, সেও বিশ্ব জানত। কিন্তু এত দিন বিশ্ব জানত না যে কথা, সে হল মসুল পুনরুদ্ধারের যুদ্ধে শত শত নিরীহ নাগরিকের প্রাণও নিয়েছে মার্কিন বিমানহানা। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই স্বীকার করল সে কথা।
প্রথমত, একে সামগ্রিক দায়িত্বজ্ঞানহীনতা না বললে কম বলা হয়। আহুত হয়ে নয়, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে আমেরিকা ও তার সহযোগীরা। গণতন্ত্রের প্রতি এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অঙ্গীকারবদ্ধতা থেকেই এই স্বতঃপ্রণোদিত যুদ্ধ ঘোষণা, বলেছিল আমেরিকা। উপযাচক হয়ে অন্য দেশের পরিসরে এ হেন হস্তক্ষেপ যখন, তখন অনেক বেশি সতর্ক থাকা উচিত, অনেক বেশি দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন হওয়া জরুরি। কোনও নিরীহের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না, এমনটা সুনিশ্চিত করাই এ ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রধান নৈতিক কর্তব্য। সে কর্তব্য পালনে মার্কিন বাহিনী সর্বৈব ব্যর্থ হল।
দ্বিতীয়ত, বিশ্বাস এবং আস্থার ভিতটাও বার বার টলে যাচ্ছে। সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্তি চান যে লক্ষ লক্ষ, আকাশে মার্কিন বিমানবহরের হানাদারি দেখলে তাঁরা ভরসা পান, প্রত্যয় পান। কিন্তু মসুল থেকে বাগদাদ, রাকা থেকে আলেপ্পো— বার বার সে আস্থার ভিত গুঁড়িয়ে দিচ্ছে আমেরিকা। বার বার মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো প্রমাণ করছে, জঙ্গি আর সাধারণ নিরীহের ফারাকটা আকাশ থেকে বোঝ যায় না অনেক সময়ই। কখনও হাসপাতালে, কখনও শরণার্থী শিবিরে, কখনও সাধারণ লোকালয়ে আগুন ঝরিয়ে আমেরিকা বুঝিয়ে দিচ্ছে, ধ্বংসলীলা যতটা সুনিশ্চিত, সাধারণের নিরাপত্তা ততটাই অনিশ্চিত।
আমেরিকার এই যুদ্ধ তা হলে কার স্বার্থে? এ যুদ্ধে কে সুরক্ষিত হচ্ছেন? পেন্টাগন আয়নার সামনে দাঁড়াবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy