Advertisement
E-Paper

গৌরব?

গত বৎসরের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী সমগ্র দেশে উচ্চ হইতে নিম্ন আদালতের মোট বিচারপতিদের সংখ্যার মধ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ মহিলা। এমনকী যে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসাবে যোগদান করিতে চলিয়াছেন ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই আদালতে অনেক দিনই একমাত্র মহিলা বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব সামলাইয়াছেন আর ভানুমতী।

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩৩
ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এক নূতন রেকর্ড তৈরি হইয়াছে। এই প্রথম সর্বোচ্চ আদালত একই সঙ্গে তিন জন মহিলা বিচারপতি পাইল। আর ভানুমতী এবং এবং ইন্দু মলহোত্রের সঙ্গে বিচারপতি হিসাবে যোগ দিয়াছেন ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রেসিডেন্সি কলেজের এই প্রাক্তনী সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে অষ্টম মহিলা বিচারপতি হিসাবে এই দায়িত্ব গ্রহণ করিলেন। তিনি ইতিপূর্বে মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে আসীন ছিলেন। সম্প্রতি তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে উন্নীত হইয়াছেন। দুই হইতে তিনে উত্তরণ— গর্বের বিষয় বইকী! বিশেষ করিয়া বিচারব্যবস্থার উচ্চতর ক্ষেত্রে, যেখানে পুরুষরাই এত কাল কর্তৃত্ব করিয়া আসিয়াছেন, সেখানে এক জন মহিলার প্রবেশ সসম্মানে স্বাগত জানাইবারই বিষয়। আশা, তাঁহার কৃতিত্ব দেশের মহিলাদের কাছে উজ্জ্বল উদাহরণ হইয়া উঠিবে।

কিন্তু এ হেন আশার পশ্চাতের ছবিটি খুব উজ্জ্বল নহে। গত বৎসরের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী সমগ্র দেশে উচ্চ হইতে নিম্ন আদালতের মোট বিচারপতিদের সংখ্যার মধ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ মহিলা। এমনকী যে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসাবে যোগদান করিতে চলিয়াছেন ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই আদালতে অনেক দিনই একমাত্র মহিলা বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব সামলাইয়াছেন আর ভানুমতী। কারণ, ২০১৪ সাল হইতে পরবর্তী তিন বৎসর সেখানে কোনও মহিলা বিচারপতি নিয়োগ করা হয় নাই। শুধুমাত্র বিচারবিভাগের উচ্চতর ক্ষেত্রেই নহে, হাইকোর্টগুলিতেও পুরুষ বিচারপতি এবং মহিলা বিচারপতিদের অনুপাতের মধ্যে বিস্তর ফারাক। গত বৎসরেও মাদ্রাজ হাইকোর্টে যেখানে পুরুষ বিচারপতির সংখ্যা ছিল ৫৩ জন, সেখানে প্রধান বিচারপতি-সহ মহিলা বিচারপতির সংখ্যা ছিল মাত্র ছয় জন। তুলনায় কিছুটা উজ্জ্বল বম্বে হাইকোর্ট। তবে তুলনায় মাত্র— সেখানেও মহিলা এবং পুরুষ বিচারপতির সংখ্যার অনুপাত গত বৎসর অবধি ছিল ১১:৬১। ‘কৃষ্টির রাজধানী’ কলকাতার চিত্রটি তো রীতিমত পীড়াদায়ক। গত বৎসরও সেখানে মহিলা ও পুরুষ বিচারপতির অনুপাত ছিল ৪:৩৫। সর্বোচ্চ আদালতের ক্ষেত্রে এই অনুপাত ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগদানের পরও দাঁড়াইবে ৩:২৫। ইহাই নূতন ভারত।

একবিংশ শতকে পা রাখিবার পর আঠারো বৎসর অতিক্রান্ত। শতাব্দী প্রাপ্তবয়স্ক হইয়াছে। নারী-পুরুষ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচার জোরদার হইতেছে। অথচ দেশের কিছু অত্যন্ত সম্মাননীয় পদে মেয়েদের যোগদানের হার লজ্জাজনক। শুধুমাত্র বিচারবিভাগই নহে। বেসরকারি কোম্পানি সিইও হইতে সরকারি উচ্চপদে মেয়েরা যোগদান করিলে আজও তাহা সংবাদ শিরোনাম হয়। বলা হয়, ‘মেয়ে হইয়াও’ তাঁহারা এমন শীর্ষে উঠিতে পারিলেন। অর্থাৎ, মেয়েদের যাহা স্বাভাবিক দায়িত্ব, হেঁশেল সামলানো এবং সন্তান পালনের বাহিরে গিয়াও তাঁহারা এমন কৃতিত্ব অর্জন করিলেন। প্রচ্ছন্ন সুরটি বুঝা যায়: এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বাভাবিক দায়িত্বের বাহিরে মেয়েদের কৃতিত্বকে ব্যতিক্রমী দেখিতেই ভালবাসেন। এই মনোভাবই কতকটা স্পষ্ট করিয়া দেয়, কেন শীর্ষে যোগদানের নিরিখে মেয়েরা এখনও আণুবীক্ষণিক। এই মনোভাব না বদলাইলে, আরও স্পষ্ট করিয়া বলিলে, মেয়েদের কৃতিত্ব ব্যতিক্রমী হওয়া বন্ধ না হইলে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার তত্ত্ব খাতায়-কলমেই রহিয়া যাইবে। দিনের আলো আর দেখিবে না।

Judge Supreme Court Indira Banerjee India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy