Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফরাসি বিদ্রোহ

ফরাসি সরকার শেষ অবধি পিছু হটিল। জ্বালানির দাম বাড়াইবার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সাময়িক ভাবে প্রত্যাহার করিল।

বিক্ষোভে ফুঁসছে প্যারিস, শনিবার। ছবি- এএফপি।

বিক্ষোভে ফুঁসছে প্যারিস, শনিবার। ছবি- এএফপি।

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০০
Share: Save:

ফরাসি সরকার শেষ অবধি পিছু হটিল। জ্বালানির দাম বাড়াইবার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সাময়িক ভাবে প্রত্যাহার করিল। এই মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ‘পীত বিদ্রোহ’-এর উদ্দামতা কেবল ফ্রান্স নহে, বিশ্বদুনিয়াকেই চমকাইয়া দিয়াছে। তিন সপ্তাহ ধরিয়া ‘হলুদ জ্যাকেট’ পরিহিত বিক্ষুব্ধ নাগরিকরা যে ধ্বংসকাণ্ড চালাইয়াছেন, ১৯৬৮ সালের পর ফ্রান্সে তেমনটি দেখা যায় নাই। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ তাহা সত্ত্বেও জরুরি অবস্থা জারি করেন নাই। এই প্রশাসনিক সংযম স্বতন্ত্র উল্লেখের দাবি রাখে। অন্য দিকে, প্রশাসনের যে সংস্কারে জনক্ষোভ এমন মাত্রাছাড়া হইয়া উঠিয়াছে, সেই পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়ানোর ব্যাপারেও প্রেসিডেন্ট প্রথমে পিছু হটিতে রাজি হন নাই। বলিয়াছেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য এই সংস্কার আবশ্যক, যাঁহারা আজ সহিংস প্রতিবাদ করিতেছেন, তাঁহারাই কিন্তু অন্য সময়ে পরিবেশ দূষণ ঠেকাইবার দাবি তোলেন— তাই তাঁহার কাজ তাঁহাকে করিতে হইবে। এই কঠোর অবস্থান হইতে শেষ অবধি তাঁহাকে সরিতে হইল, কারণ জনরোষের তীব্রতা এবং তাহাকে কেন্দ্র করিয়া রাজনৈতিক প্রতিকূলতা বেলাগাম হইয়া পড়িতেছে। পশ্চাদপসরণের যুক্তি হিসাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী বলিয়াছেন, বিতর্কিত প্রশ্নে ‘গণ-আলোচনা’র প্রয়োজন। আপাতদৃষ্টিতে ইহা গণতন্ত্রসম্মত পদক্ষেপ। তবে আলোচনা যদি শেষ অবধি নতিস্বীকারে পর্যবসিত হয়, তাহা দুর্ভাগ্যজনক হইবে।

এই আশঙ্কা অহেতুক নহে। প্রথমত, মাকরঁর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি জনবিক্ষোভের সুযোগ লইতে তৎপর। ইহা দক্ষিণ ও বাম মতবাদের মিলিত বিদ্রোহ। সংস্কারের বিরুদ্ধে দুই রাজনৈতিক মহলই বিক্ষুব্ধ, তাই ইহাকে সামলানোও কঠিনতর। ফ্রান্সের দক্ষিণ মহল কখনওই মাকরঁর প্রতি সদয় নহে, অভিবাসী বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ তিনি করেন নাই। আবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়াইলে বাম মহল খেপিবেই। দ্বিতীয়ত, সম্পন্ন নাগরিক সমাজ চালাইতেছে, কিংবা দরিদ্র সমাজ উন্মত্ত হইয়া উঠিয়াছে— কোনও বর্ণনাই এই আন্দোলনের পক্ষে সঙ্গত নহে। ইহার হোতা মধ্যবিত্ত নাগরিক। যাঁহাদের নুন আনিতে পান্তা এমনিতেই ফুরাইত, তাঁহাদের নূতন ক্ষোভ তত বিষম নয়। কিন্তু যে স্বামী-স্ত্রী মোটের উপর রোজগার করিয়া সন্তানকে শিক্ষাদান করাইয়া সংসার যাপন করিতেছিলেন, তাঁহারা হঠাৎ দেখিতেছেন, রেফ্রিজারেটরে পর্যাপ্ত খাদ্য নাই, গাড়ির জন্য তেল কিনিবার পয়সা নাই, যে গাড়ি অনেক নাগরিকেরই যাতায়াতের তথা জীবনযাপনের অপরিহার্য প্রকরণ, বিশেষত গ্রামীণ ও মফস্সল অঞ্চলে। ক্রোধ স্বাভাবিক।

তৃতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যটি— এই আন্দোলনের অভিমুখ। বহু কাল বাদে একটি আন্দোলন গ্রাম হইতে শহরের দিকে আসিল, মফস্সল শহরগুলি যাহার প্রাণকেন্দ্র হিসাবে কার্যকর হইল। এই আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, পরিবেশ-দুশ্চিন্তা একটি ‘এলিট’ বা উচ্চবর্গের বিলাসী উদ্বেগ। আপনি বাঁচিলে পরিবেশের নাম। অর্থনৈতিক টানাটানির মধ্যে তাঁহারা জাতীয় ভবিষ্যৎ বিষয়ক প্রশ্নগুলিকে ঢুকিতে দিতে চান না। মাকরঁ-র তথা উদারবাদী মধ্যপন্থার চ্যালেঞ্জ সম্ভবত এইখানেই সর্বাধিক। কোন পথ তাঁহারা লন, দেখিতে ইউরোপ-সহ বাকি দুনিয়াও উদ্গ্রীব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Emmanuel Macron Yellow Protest Oil Price France
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE