Advertisement
E-Paper

অদ্বৈত বা বিপ্লব

উপস্থিতির হার প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় দুর্গাপুরের একটি কলেজের এক ছাত্রীকে পরীক্ষায় বসিতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাত্র এক জনের জন্যই ঘেরাও হইল। শেষ অবধি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করিয়া আন্দোলনে ইতি টানিল ছাত্ররা।

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০০:১৩
যাদবপুরের আন্দোলন

যাদবপুরের আন্দোলন

অতঃপর পরীক্ষা ব্যবস্থাটি উঠাইয়া দিলেই হয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যে হেতু লেখাপড়ার অধিক প্রয়োজনীয় ঘেরাও করিবার ক্ষমতা, মেধার তুলনায় যে হেতু বিশৃঙ্খলতার প্রতিভার গুরুত্ব ঢের বেশি, অতএব এই গুণাবলির উপরই মূল্যায়ন হউক না-হয়। রাজ্যের ঘেরাও সংস্কৃতিতে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় একটি নূতন মাত্রা যোগ করিল। উপস্থিতির হার প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় দুর্গাপুরের একটি কলেজের এক ছাত্রীকে পরীক্ষায় বসিতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাত্র এক জনের জন্যই ঘেরাও হইল। শেষ অবধি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করিয়া আন্দোলনে ইতি টানিল ছাত্ররা। এত দিন অবধি বাংলার দামাল ছেলেরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যত ঘেরাও করিয়াছে, সবই দশের স্বার্থে। অর্থাৎ, এক সঙ্গে বহু ছেলেমেয়ে হয় পরীক্ষায় ফেল করিয়াছে, অথবা উপস্থিতির প্রয়োজনীয় হারের ব্যবস্থা করিয়া উঠিতে পারে নাই। কিন্তু, মাত্র এক জনের জন্য ঘেরাও— রাজ্যের ইতিহাসে বোধ হয় এই প্রথম। ছাত্র-আন্দোলন এই বার পাইকারি হইতে খুচরায় নামিল। তাজা ছেলেরা নিজেদের হ্যান্ডবিল ছাপাইয়া লিখিয়া দিতে পারে, ‘আমরা হিসাবি ও বেহিসাবি, খুচরা ও পাইকারি সকল প্রকার আন্দোলন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করিয়া থাকি’। হরেক কোচিং সেন্টার ও প্রশ্ন ফাঁসের চক্রের ব্যবসাকে পথে বসাইয়া রমরম করিয়া চলিবে এই আন্দোলনের বিপণি। কারণ, শিক্ষাক্ষেত্রে ঔষধ হিসাবে ইহা অব্যর্থ, সর্বরোগহর। পরীক্ষায় বসিতে না পারা হইতে টুকলিতে বাধা অথবা পাশ করিবার অক্ষমতা, সব রোগই ঘেরাও-এ নির্মূল হইয়া যায়। হোতাদের শিক্ষারত্ন খেতাব না দিলে অন্যায় হইবে।

ইহারই নাম অদ্বৈতে পৌঁছানো। শিক্ষাব্যবস্থা বলিতে এত দিন যাহা কিছু বুঝাইত, তাহা যে সকলই মায়া, সত্য বলিতে শুধু ঘেরাও, বাংলা কথাটি বুঝিয়া লইয়াছে। কৃতিত্ব যে শুধু কলেজের ছোট ছেলেদের, তেমনটা দাবি করিলে অন্যায় হইবে। রাজ্য সরকারও এই কৃতিত্বের ভাগীদার। ঘেরাও-বিপ্লবের পথে কোথাও যাহাতে বাধামাত্র না থাকে, সরকার তাহা নিশ্চিত করিয়াছে। কখনও ছাত্রদের কোনও দাবি খারিজ করা হয় নাই। উত্তেজনার বশে ছেলেরা কলেজের অধ্যক্ষকে দুই চারিটি কটু কথা শুনাইয়া দিয়াছে, অথবা ভিডিয়ো-সাক্ষ্য সমেত কোনও শিক্ষকের গালে বিরাশি সিক্কার থাপ্পড় বসাইয়াছে, সরকার তাহাতে দোষ দেখে নাই। ফেল করা ছাত্রদেরও পরের ক্লাসে উঠাইবার দাবি করিয়াছে, সেই দাবি পত্রপাঠ মানিয়া লওয়া হইয়াছে। বিপ্লবের পথে যে এমন ঘটনা ঘটিয়াই থাকে, তাহা কে না জানে? কয়েকটি অকিঞ্চিৎকর ঘটনায় অদ্বৈতে উপনীত হওয়া বানচাল করিতে হইবে না কি? ছাত্রদের দাবি মানিতে মানিতে সেই মানিয়া লওয়াকেই অনতিক্রম্য নিয়ম বানাইয়া তুলিয়াছে সরকার। ফলে, ছাত্ররা এখন জানে, ঘেরাও করিলেই দাবি পূরণ করা হইবে। এই যে কার্য এবং ফলের মধ্যে নিশ্চিত, অনিবার্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা— ইহাই বিপ্লব। ইহাই শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের অবদান। আর কখনও এক জন ছাত্রেরও উপস্থিতির হার না থাকা বা খাতায় উত্তর লিখিতে না পারিবার মতো ফালতু কারণে শিক্ষার অধিকার খর্ব হইবে না।

Protest College University Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy