Advertisement
E-Paper

তবু দুরাচার নহে

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০১:২২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কাহারও ঘরে এমনিতে লবণ খাওয়া এক রকম, আর যাহার ঘরে লবণ খাওয়া হইতেছে সে যদি বার বার মনে করাইয়া দেয় যে ‘লবণ খাওয়াইলাম’, সে খাওয়া আর এক রকম। নির্বাচনী কমিশনের সাম্প্রতিক ব্যবহারবিধি দেখিয়া এই সত্য আবার হৃদয়ঙ্গম হইতেছে। গত বুধবার কমিশন তাহার মত জানাইয়াছে: না, এপ্রিলের ৯ তারিখ লাতুরের জনসভায় ভোটের প্রচারসূত্রে সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করিয়া নরেন্দ্র মোদী কোনও বিধি ভঙ্গ করেন নাই। প্রসঙ্গত মনে করাইয়া দেওয়া যায় যে, মোদী ওই সভায় বলিয়াছিলেন, যাহারা প্রথম বারের ভোটার, সেই সদ্যআঠারো-উত্তীর্ণ যুবসমাজকে তিনি পুলওয়ামার কথা মনে করাইয়া দিতে চাহেন, জানাইতে চাহেন যে পদ্মচিহ্নে ভোট দিলেই তাহারা পরে বলিতে পারিবে যে বলীয়ান সেনাবাহিনীর হাতে দেশকে সুরক্ষিত রাখিবার চেষ্টায় তাহারা শামিল হইয়াছিল। কমিশনের বক্তব্য: না, বালাকোট বিমান-হানার প্রসঙ্গ এই ভাবে টানিয়া আনিয়া মোদী কোনও অন্যায় কাজ করেন নাই। মোদী কী বলিয়াছিলেন, তাহা ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে সর্বজনলভ্য। নির্বাচনী বিধিতে যে বলা আছে, সেনাবাহিনীকে কোনও ভাবে ভোটের প্রচারে টানিয়া আনা যায় না, তাহাও মোটামুটি সর্বজ্ঞাত। তাহা সত্ত্বেও এমন একটি রায় দিতে নির্বাচন কমিশনের বাধে নাই। ইহা কেবল নির্বাচনী বিধির প্রশ্ন নহে। আরও অনেক বড় অর্থে, ইহা একটি নৈতিকতার প্রশ্ন। এই দেশের নীতিবোধটিকে নরেন্দ্র মোদীর শাসনকাল কী ভাবে একশত আশি ডিগ্রি উল্টাইয়া দিয়াছে, তাহার জলজ্যান্ত প্রমাণ। এই শাসনে কেন্দ্রীয় স্বশাসিত কমিটিগুলি এই ভাবেই পর-শাসিত হইয়া গিয়াছে। আগে যাহা দুর্নীতি বলিয়া পরিগণিত হইত, এখন তাহা হইতে ‘দুঃ(র্)’ অংশটি বেমালুম বাদ পড়িয়া গিয়াছে। শাসক দলের পক্ষ লওয়াই এখন ‘ল অব দ্য ল্যান্ড’, দেশের শাসন-তন্ত্র।

নৈতিকতার বোধটি বস্তুত কেবল প্রতিষ্ঠান কিংবা মন্ত্রক কিংবা বিভাগে আবদ্ধ থাকে না, গোটা সমাজেই তাহা ছড়াইয়া পড়ে। ঠিক সেই কারণেই আন্দাজ করা যাইতে পারে, যে যুবসমাজকে লক্ষ্য করিয়া এই কথাগুলি বলা হইয়াছিল, তাহারাও ইহার মধ্যে কোনও ‘দুঃ(র্)’ আচার দেখিবেন না। সত্য বলিতে কী, ইতিমধ্যেই মোদী-প্রণীত দর্শনটি দিকে দিকে ধ্বনিত হইতেছে— দেশকে এই ভাবে সুরক্ষা দিবার ব্যবস্থা আগে কেউ কখনও করেন নাই, সুতরাং তিনি বা তাঁহার দল সেনাবাহিনীর কৃতিত্ব দাবি করিলে দোষ কী! কুম্ভমেলার নিরাপত্তা হইতে পাকিস্তান সীমান্তের নিরাপত্তা, সবই যে গত পাঁচ বৎসরে প্রথম বার দেশে নিশ্চিত হইল, ঘোরনিনাদে ইহা ঘোষিত হইতেছে।

লক্ষণীয়, রাষ্ট্র যে সরকারের অপেক্ষা বড় ব্যাপার, সেনাবাহিনী যে সরকারনিরপেক্ষ ভাবে রাষ্ট্রিক সম্পত্তি, সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মান ও সম্ভ্রমের সহিত যে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ থাকিতে পারে না, এই সব কথা কিন্তু আগেকার ভারতীয় নাগরিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কেতাব পড়িয়া শিখেন নাই, স্বাভাবিক নীতিবোধ দিয়াই বুঝিয়াছিলেন। সেই নীতিবোধ যুক্তি বা আদর্শ হইতে প্রসূত হইত। অপরপক্ষে, এখনকার নীতিবোধ আরম্ভ হয় কোনও দল বা কোনও ব্যক্তির প্রতি অন্ধ ভক্তি হইতে। সুতরাং এই নূতন ভারত হইতে দুর্ভাষী অসত্যপ্রিয় বাহুবলী দ্বেষপ্রেম উদ্বাহু সমর্থন প্রত্যাশা করিতেই পারে। সেই সমর্থন কতটা মিলিল, তাহা জানিতে ২৩ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে হইবে। কিন্তু নির্বাচনী ফলাফলের সীমার বাহিরে একটি বৃহত্তর সত্যের কথা এখনই জোর দিয়া বলা যায়। দুর্নীতি ও দুরাচারের যে নমুনা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হইল, তাহার মূল উৎপাটন করা খুবই দুরূহ, প্রায় অসম্ভব। নির্বাচন কমিশন কিংবা সেনাবাহিনীকে দিয়া শাসক দলের ধামাবহন করানোর মূল্যটি বড়ই বেশি পড়িয়া যাইতে পারে। ভারতের উত্তরপ্রজন্মকে সেই মূল্য চুকাইতে হইবে।

Election Commission of India Narendra Modi Amit Shah Code of Conduct
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy