Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সোশ্যাল মিডিয়ার ভালমন্দ

কখনও নদিয়ার রানু মণ্ডল, কখনও দেশের প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবেকানন্দ-মূর্তির অবমাননা। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগ-বিয়োগ নিয়ে খোঁজ নিলেন দিলীপ নস্করবলাই বাহুল্য যে, এই উজ্জীবন বেশি দেখা যায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, পড়ুয়াদের মধ্যে। স্কুলপড়ুয়ারাও ইদানীং স্মার্টফোনের দৌলতে বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব মত জানাতে পারছে।

স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি।

স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি।

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৫
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়াকে আজ কেউই আর ব্রাত্য বলে মনে করেন না। বরং তাকে হাতিয়ার হিসেবেই মনে করেন অধিকাংশ মানুষ। এবং শুধু শহর বা নগরবাসীই যে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে মত্ত তা নয়। মফসসল, এমনকী গ্রাম-গঞ্জেও মানুষ আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে যথেষ্ট উজ্জীবিত।

বলাই বাহুল্য যে, এই উজ্জীবন বেশি দেখা যায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, পড়ুয়াদের মধ্যে। স্কুলপড়ুয়ারাও ইদানীং স্মার্টফোনের দৌলতে বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব মত জানাতে পারছে। কোনও কোনও পরিবারে স্কুলপড়ুয়াদের ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহারের বিষয়ে যদি-বা কিছুমাত্র কড়াকড়ি থেকে থাকে কলেজপড়ুয়াদের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই লাগামছাড়া। তখন পড়াশোনা একরকম মুলতুবি রেখে তাঁরা দিনরাত সোশ্যাল মিডিয়ার অগাধ জলে আনন্দ-সাঁতার দিয়ে চলে। অভিভাবকেরা হয় সবটা জানতে পারেন না। অথবা, জানলেও সে ভাবে কড়াকড়ি করতে ভয় পান। হয়তো ছেলেমেয়ে রাগ করে কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে বসে।

স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার এই নির্বিচার রসাস্বাদনের মধ্যে নেতিবাচকতা অবশ্যই আছে। কিন্তু এখানে একটু প্রয়োজনীয় লাগামটুকু পরাতে পারলে বিষয়টির ইতিবাচকতাও কম নেই। সোশ্যাল মিডিয়াও অনেক সময় ব্যক্তিত্ব গড়ে দেয়। কিংবা, ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়ে ওঠার পরিসরটা খুলে দেয়।

এই যেমন কিছু দিন আগে দিল্লির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির নীচে কিছু কটু মন্তব্য দেখা গেল। স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে হইচই পড়ে গেল। এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই তা দেশ জুড়ে একটা নীরব আন্দোলন গড়ে তুলল। মত বিনিময় হল বিস্তর। বাদ প্রতিবাদ হল বিপুল। সজাগ ও তরুণ মন ও মননের পক্ষে এ কিন্তু যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর ব্যায়ামই। এটা দরকার। আগের প্রজন্মের মানুষ কোথাও নিজের মত জানাতে দু’শো বার ভাবতেন। জানানোর সুযোগও তখন কম ছিল। অনেক রকম সামাজিক, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ‘ট্যাবু’ মেনে তাঁদের চলতে হত। এখন তো আর সেই পরিস্থিতি নেই! বিশ্বায়নের পৃথিবী এখন সব জানলা দরজা খুলে দিয়ে সকলকে দিবারাত্র সেখানে অংশ নিতে আহ্বান জানাচ্ছে। এখন কেন আর মানুষ হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন?

কিংবা ধরা যাক নদিয়ার রানু মণ্ডলের কথা। কে তাঁকে চিনত? পথে-ঘাটে-স্টেশনে গান গেয়ে ভিক্ষা করে পেটে চালাতেন তিনি। মাস খানেক আগে তাঁর গান কেউ একজন ভিডিও রেকর্ডিং করে ফেসবুকে ‘আপলোড’ করেছিলেন। ব্যস! আর দেখতে হল না। দেশ জুড়ে সেই ফেসবুকে পোস্ট নিয়ে প্রবল মাতামাতি শুরু হল। রানু প্রথম প্রথম বোধ হয় নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, তাঁকে নিয়ে এই যা চারিদিকে হচ্ছে, তা ঠিক সত্যিই ঘটছে তো? রানুর গান ভাল লাগল মুম্বইয়ের সিনেমা জগতের কারও কারও। নজরে পড়ে গেলেন তিনি। তাঁর গানের রেকর্ডিংও হল। আগামী দিনে তিনি যদি একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হিসেবে মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারেন, তবে সে জন্য নিশ্চয়ই সোশ্যাল মিডিয়ার কাছে ঋণী থাকবেন তিনি। শুধু রানু কেন, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে রাতারাতি ‘সেলেব্রিটি’ হওয়ার নজির আরও কিছু আছে। হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে।

ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা দেবাশিস ঘোষ জানান, নতুন প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি আগ্রহী কারণ, কোনও কিছু ঘটলেই তা নিয়ে কিছু পোস্ট করে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন মানুষ।

তবে এর থেকে নানা বিরূপতাও সৃষ্টি হয়। তার মূল কারণ, সাংস্কৃতিক অবক্ষয়জনিত হতাশা। এই হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারলে এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে পারলে এর চেয়ে ভাল জিনিস আর হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media Smartphone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE