শ্লাঘার মুহূর্ত, গর্বের দিন আজ। ভারতীয় ফুটবলের জন্য তো বটেই, সমগ্র ভারতের জন্যও গৌরবের ক্ষণ এটা। বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে ভারতের এত বড় এবং এত উজ্জ্বল উপস্থিতি আগে কখনও দেখা যায়নি। ফিফা যুব বিশ্বকাপের আসর এ বার ভারতে। গোটা ফুটবল বিশ্বে সম্ভ্রমের পাত্র যাঁরা, গোটা মাঠ জুড়ে তাঁদেরই মহড়া নেবে একদল ভারতীয় কিশোর। ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এর চেয়ে স্বপ্নিল দৃশ্যপট আর কী-ই বা হতে পারত?
দিল্লি থেকে কলকাতা, ফিফা যুব বিশ্বকাপের বল গড়াবে যে যে শহরের ময়দানে, সেই সব শহরই সেজেগুজে প্রস্তুত, উদ্দীপনায় টগবগে।
উদ্দীপনায় টগবগে আরও কিছু আপাত-অখ্যাত জনপদ-মফস্সলও। হুগলির ব্যান্ডেলে ভ্যান চালিয়ে সংসার টানেন যে হরেন সরকার, তাঁর ছেলে অভিজিৎ যখন এত বড় বিশ্ব মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছে, তখন এই যুব বিশ্বকাপকে নিয়ে ব্যান্ডেলে উদ্দীপনা না থাকাটাই অস্বাভাবিক। একই ভাবে উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরেও প্রবল উৎসাহ সাফাইকর্মীর ফুটবলার ছেলে রহিম আলিকে ঘিরে। বিপুলা ভারতের আরও অনেক প্রান্তেই একই রকম উৎসাহ-উদ্দীপনা আজ, এই রকমই কিছু কারণে।
যাত্রাপথটা গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছে এমন অবশ্য নয়। যাত্রা সবে শুরু হল বরং। কিন্তু উপলব্ধিতে আমাদের গোলমাল থেকেই যায় কিছু। গোলমাল থেকে যায় বলেই ফুটবলে বা অন্য অধিকাংশ খেলার মাঠে আজও পিছনের সারিতে থেকে যায় ১২৫ কোটির বিরাট দেশ।
আরও পড়ুন:১২জন প্রাক্তনকে নিয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের বোধন করবেন মোদী
ফিফার অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব এ বার ভারতের কাঁধে— এ নিশ্চয়ই গরিমার বিষয়। কিন্তু এত বড় এবং সমৃদ্ধ এক জাতি ফিফার টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাচ্ছে আয়োজক দেশ হিসেবে— এ কি আদৌ খুব গর্বের কথা?
শতেক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখল অভিজিৎ-রহিমরা। আনন্দিত হওয়ার মতোই বিষয়। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো, পরিবেশ এবং পরিস্থিতি যদি গোড়া থেকেই জোগানো যেত তাদের, প্রতিভার আরও প্রশস্ত বিকাশ কি হতে পারত না? পারিপার্শ্বিকতা থেকে বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা থেকে কিছু কিছু সাহায্য হয়তো পেয়েছে এই কিশোর বাহিনী। কিন্তু বন্দোবস্তটা যদি আরও সুসংহত হত, প্রতিভা খুঁজে নেওয়ার এবং সযত্নে তার লালনের পরিকাঠামোটা যদি আরও মজবুত হত, তা হলে বিশ্বের ফুটবল মানচিত্রে ভারতের স্থানটা কি এত দিনে অনেকটা উঁচুতে পৌঁছে যেত না?
খেদগুলো আপাতত অবশ্য একপাশে সরিয়েই রাখছি। কারণ যুদ্ধটা শুরু হয়ে যাচ্ছে। ভারতের ফুটবল কতটা সম্ভাবনাময়, বিশ্ব মঞ্চে তার প্রমাণ রাখতেই হবে। তাই কিশোর বাহিনীর জন্য জয়যাত্রায় যাওয়ার শুভেচ্ছা থাক, অকুণ্ঠ সমর্থন থাক। অতিথি-অভ্যাগতদের জন্যও থাক হর্ষধ্বনি। মস্তিষ্ক বলছে, এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে আমাদের। হৃদয় বলছে, আমাদের ছেলেগুলো ভাল খেললেই হবে, আর কিছুই চাই না।