Advertisement
E-Paper

পরীক্ষার পরে

কেন প্রায় দেড় লক্ষ পরীক্ষার্থী পাশ নম্বর পাইতে ব্যর্থ হইল? সর্বোপরি, কেন অধিকাংশ শিশু আজও স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ করে নাই? সরকারি নানা প্রকল্পের জন্য অধিক শিশু স্কুলে আসিতেছে, এই দাবি হয়তো ভুল নহে।

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০০:১৯
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বাহির হইল। সাফল্যের উজ্জ্বল আলোকবৃত্তের বাহিরে ব্যর্থতার বিশালতর আঁধারবৃত্ত ফের পরিদৃষ্ট হইল। এই অকৃতকার্যতা শুধু পরীক্ষার্থীর নহে, শিক্ষাব্যবস্থারও। মুখ ফিরাইলে চলিবে না। তাহার পরিসর বুঝিতে হইবে, এবং দায় স্বীকার করিতে হইবে। মাধ্যমিকের ফলে প্রকাশ, এ রাজ্যের অর্ধেকেরও অধিক শিশু বারো বৎসরের স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ করিতে পারে না। ২০১৮ সালে যাহারা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করিল, তাহারা স্কুলে প্রবেশ করিয়াছিল ২০০৬ সালে। প্রথম শ্রেণিতে ছাত্রসংখ্যা কিছু অধিক থাকে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে অনেক শিশুই প্রথম শ্রেণিতে একটি বাড়তি বৎসর থাকিয়া যায়। ২০০৭ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল আঠারো লক্ষ। অষ্টম শ্রেণিতে (২০১৩) তাহাদের সংখ্যা পনেরো লক্ষ। মাধ্যমিক পরীক্ষায় (২০১৬) তাহাদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে এগারো লক্ষ। তাহাদেরও প্রায় দুই লক্ষ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হইয়াছিল। অতঃপর এই বৎসর উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী ছিল আট লক্ষ, উত্তীর্ণের সংখ্যা সাড়ে ছয় লক্ষের কিছু অধিক। হিসাবটি সহজ, বারো বৎসরের শিক্ষাক্রম সম্পূর্ণ করিতে ব্যর্থ তিন জন শিশুর দুই জন। দশ বৎসরের স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ করিতে ব্যর্থ দুই জনে এক জন। এই প্রবল সত্যের সম্মুখে নিরানব্বই শতাংশ, আটানব্বই শতাংশ নম্বর মিলিবার হর্ষধ্বনি রুদ্ধ হয়, সমবেত আনন্দগীতির সুর কাঁপিয়া যায়। হয়তো সেই জন্যই প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত বিষয়টি আড়াল করিতে চাহে। যে কৃষক-মজুর-ফেরিওয়ালার সন্তান সফল হইয়াছে, তাহার কাহিনি বড় মনোহর। দরিদ্রের যে সন্তানেরা শিক্ষা সম্পূর্ণ করিতে না পারিয়া খেতমজুর-দিনমজুর হইয়া রহিল, যাহারা তাহাদের প্রজন্মের অধিকাংশ, তাহাদের কথা তুলিলে রসভঙ্গ হয়।

বাংলায় নিরানব্বই, ইতিহাসে আটানব্বই, এমন নম্বর দেখিয়া যেমন তাজ্জব হইতে হয়, তেমনই বিস্ময় জাগিতে বাধ্য ফল লইয়া ‘প্রতিযোগিতা’ দেখিয়া। কোন জেলা হইতে ‘ফার্স্ট বয়’, কোন স্কুল হইতে ‘সেকেন্ড গার্ল,’ তাহা লইয়া মাতামাতির অন্ত নাই। যেন ওই একটি শিশুর সাফল্যই জেলার স্থান, তাহার স্কুলের স্থান নির্দিষ্ট করিয়া দিল, বাকি পরীক্ষার্থীরা ওই জেলার কেহ নহে। যেন অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীরা দশ-বারো বৎসর তাহাদের স্কুলে পড়ে নাই। বরং কলিকাতা ও জেলাগুলির সংঘাত লাগিল, মেধা তালিকায় কাহার কতগুলি স্থান। যেন তাহাই শিক্ষার চূড়ান্ত পরিমাপ, শিক্ষাব্যবস্থার ইহাই প্রধান সমস্যা। এই কারণেই অমর্ত্য সেন ভারতকে ‘ফার্স্ট বয়দের দেশ’ বলিয়াছিলেন। এই দেশ অল্পের সাফল্য নিশ্চিত করিতে চাহে। অধিকাংশের ব্যর্থতাকে ভুলিতে, ঢাকিতে, তুচ্ছ করিতেই আমরা অভ্যস্ত। ফলে শিক্ষাব্যবস্থাই এমন রূপ পাইয়াছে, যেখানে অতি উৎকৃষ্ট কিছু ছাত্র ব্যতীত সকলের স্বার্থ উপেক্ষিত। তাহারা হিসাবেই নাই।

হয়তো সেই কারণেই এই বৎসর উচ্চ মাধ্যমিকে মন্দ ফলের অনুপাত বাড়িয়াছে। ‘সি গ্রেড,’ অর্থাৎ চল্লিশ শতাংশ হইতে উনপঞ্চাশ শতাংশ নম্বর পাইয়াছে দুই লক্ষ পরীক্ষার্থী। যখন নব্বই শতাংশ নম্বর ক্রমশ সুলভ হইতেছে, তখনও দুই লক্ষ পরীক্ষার্থী পঞ্চাশ শতাংশ পাইল না? কেন প্রায় দেড় লক্ষ পরীক্ষার্থী পাশ নম্বর পাইতে ব্যর্থ হইল? সর্বোপরি, কেন অধিকাংশ শিশু আজও স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ করে নাই? সরকারি নানা প্রকল্পের জন্য অধিক শিশু স্কুলে আসিতেছে, এই দাবি হয়তো ভুল নহে। কিন্তু সেই সাফল্যের বিস্তার কত দূর, সে প্রশ্নও করিতে হইবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোথায় কত পরীক্ষার্থী ব্যর্থ হইল, কোন ব্লক, কোন প্রতিষ্ঠান হইতে অধিকাংশ পড়ুয়া স্কুল ছাড়িতেছে, তাহার বিশ্লেষণ করিয়া রিপোর্ট প্রকাশ করুক সরকার।

Higher Secondary Results 2018 Madhyamik Results 2018 Unsuccessful Illiteracy School Dropouts
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy