জিএসটি-র প্রথম দিন যে খুব ভাল কাটল, এমনটা বলা যাচ্ছে না। দিনভর বিভ্রান্তি, ক্রেতা-বিক্রেতা সব মহলে ধোঁয়াশা, ফলে হয়রানি, কোথাও জিএসটি ধরে দাম, কোথাও বা পুরনো হিসাবেই দাম, ওযুধের দোকানে সকালবেলাতেই লাইন, গোটা মাসের ওষুধ স্টক করে নেওয়ার হুড়োহুড়ি— সব মিলিয়ে পরিণত প্রতিক্রিয়ায় পাওয়া গেল না দেশকে।
বস্তুত পাওয়ার কথাও ছিল না। প্রধান শাসক দল বিজেপি-ও যে এই কথা জানত না, তা নয়। বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তো বটেই, বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশও সতর্ক করেছিলেন, সতর্কবার্তা আসছিল বিজেপি-র অন্দরমহল থেকেও— যথাযথ প্রস্তুতি থাকছে না সম্ভবত, অতএব আরও একটু সময় নিয়ে চালু করা হোক জিএসটি। বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, যে জগতের উপর এই দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান ক্ষেত্রের একটা বড় অংশ নির্ভরশীল— তারা এর জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত হয়েছে? এক দেশ এক কর চালু করতে দেশের প্রত্যন্ত প্রান্ত পর্যন্ত ডিজিটাল যে পরিকাঠামোর প্রয়োজন, সেটা তৈরি করা গিয়েছে তো? প্রস্তুতি পর্যায়ে অনেকগুলো ফাঁক রেখেই অগ্নিপরীক্ষায় নেমে পড়লাম আমরা। পরিণত প্রতিক্রিয়ার আশা করাটাই সেখানে অন্যায়।
অতএব, নতুন সকালের দিকে যাত্রা শুরু হল সংশয়, আশঙ্কা, ক্ষোভ ও বিরোধিতার আবহে। আলঙ্কারিক ভাবে সবাইকে নিয়ে এগোনর কথা বলা হল, কিন্তু আদতে একপাক্ষিক সিদ্ধান্তে দেশ এই মোড়ে এসে দাঁড়াল। সরকারের উদ্দেশ্য সাধু, এক দেশ এক কর ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়ে মূলত কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু বিমুদ্রাকরণের জের থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা বিরাট এই দেশ এই যে আচমকা আরও এক অনিশ্চয়তার মুখে এসে দাঁড়াল, এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবেন মানুষ।
আপাতত ক্রেতা-বিক্রেতা জিএসটি-র জটিল অঙ্কের ধাঁধার উত্তরের সন্ধানে ব্যস্ত। সেই উত্তরের ধোঁয়াশা সুদূরপ্রসারী হলে শাসককেও জটিল অঙ্কের মুখে দাঁড়াতে হবে। সেই অঙ্ক রাজনীতির। যেখানে মানুষের সমর্থন বা ক্ষোভই শেষ কথা।