Advertisement
E-Paper

ভাবিয়া দেখিবেন

শেষ অবধি বিজেপির ঝুলি ভোটে ভরিয়া উঠিবে কি না, সেই প্রশ্ন ভিন্ন। কিন্তু, সাড়ে চার বৎসর এনডিএ শাসন সাধারণ মানুষের পক্ষে ভাল যায় নাই। সংখ্যালঘুরা ক্রমেই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পর্যবসিত হইয়াছেন।

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৪
—ছবি পিটিআই।

—ছবি পিটিআই।

রসিকতার বিষয় নহে। কাজেই, প্রধানমন্ত্রী নিজের উত্তরগুলি পাঠাইয়া দেওয়ার পর সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন স্থির করা হইয়াছিল কি না, সেই প্রসঙ্গ নৈব নৈব চ। প্রশ্নগুলিকে নিদেনপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ছাড়পত্র জোগাড় করিতে হইয়াছিল কি না, সেই আলোচনাও বকেয়া থাকুক। অতি সহজ প্রশ্নে ভরা, প্রধানমন্ত্রীকে চাপিয়া ধরিতে নিতান্ত নারাজ এই সাক্ষাৎকারটি শেষ অবধি নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রচারের সূচনাপর্ব হইয়া থাকিল কি না, সেই প্রশ্নও নহে। তবে, একটি প্রশ্ন না করিলেই নহে— প্রধানমন্ত্রী নিজে কি নিজের কথা শুনেন? তিন তালাকের প্রশ্নটি লিঙ্গসাম্যের, আর শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশাধিকারের প্রশ্নটি প্রথার, এমন একটি হাস্যকর যুক্তিতে তাঁহার নিজের কানে খটকা লাগিল না? অথবা, রাফাল চুক্তি লইয়া যাঁহারা প্রশ্ন করিতেছেন, তাঁহারা দেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করিতে চাহেন, এ হেন উক্তি যে কাণ্ডজ্ঞানের সীমা লঙ্ঘন করে, তিনি টের পাইলেন না? তবে, উক্তিগুলির মধ্যে তারতম্যও আছে। তাঁহার আমলে যাঁহারা ভারত ছাড়িয়া পলায়ন করিয়াছেন, তিনি তাঁহাদের দেশে ফিরাইয়া আনিবেন, এই কথাটি শুনিলে নীরব মোদীরা বড় জোর মুচকি হাসিবেন। কিন্তু, পাঁচ বৎসরে তাঁহারা এমন কোনও ভুল, কোনও অন্যায় করেন নাই যাহাতে গণদেবতা রুষ্ট হইতে পারেন, এমন প্রত্যয়মথিত উক্তিতে গণদেবতার হাসিবার শক্তিটুকুও থাকিবে না। নরেন্দ্র মোদীরা সেই শক্তি অবশিষ্ট রাখেন নাই।

শেষ অবধি বিজেপির ঝুলি ভোটে ভরিয়া উঠিবে কি না, সেই প্রশ্ন ভিন্ন। কিন্তু, সাড়ে চার বৎসর এনডিএ শাসন সাধারণ মানুষের পক্ষে ভাল যায় নাই। সংখ্যালঘুরা ক্রমেই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পর্যবসিত হইয়াছেন। যোগী আদিত্যনাথ সাক্ষ্য দিবেন, এই জমানায় গরুর দাম এক জন মুসলমানের প্রাণের দামের তুলনায় ঢের বেশি। দলিতরা শেষ অবধি রুখিয়া দাঁড়াইয়াছেন, তবে তাঁহাদের হয়রানি কমে নাই। আধার কার্ডের অভাবে একাধিক মানুষ অনাহারে মারা গিয়াছেন। কৃষকরা শুষ্ক প্রতিশ্রুতি আর নির্বাচনী ঋণমকুব ব্যতীত কিছুই পান নাই। টাকার দাম পড়িয়াছে, তেলের দাম বাড়িয়াছে। দুর্নীতি কমে নাই, কর্মসংস্থান যোজনায় কাজ কমিয়াছে। চাকুরি জোটে নাই, পকোড়া ভাজিবার পরামর্শ মিলিয়াছে। আর মিলিয়াছে নোট বাতিলের তাণ্ডব। কালো টাকা কমিল না, সন্ত্রাসবাদ থামিল না, নকল টাকার রমরমা বাড়িল, এমনকী ২০০০ টাকার নোটও সম্ভবত আর ছাপা হইবে না— শুধু বহু মানুষ চাকুরি হারাইলেন, মারা পড়িলেন। ইহাকেই কি কোনও ভুল না করিবার নমুনা বলা চলে?

প্রধানমন্ত্রী যখন পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের অভাবের কথা বলিলেন, তখনও কি তাঁহার কোনও কথা মনে পড়ে নাই? কানহাইয়া কুমারের কথা, সুধা ভরদ্বাজ গৌতম নওলখা ভারাভারা রাওদের কথা? অথবা, গৌরী লঙ্কেশ বা এম এম কালবুর্গির কথা? প্রবীণ সাংবাদিকের বাড়িতে মধ্যরাত্রে আয়কর হানার কথা? যাঁহার শাসন ক্রমেই একনায়কতন্ত্রের চরিত্রলক্ষণ অর্জন করিয়া ফেলিয়াছে, তাঁহার মুখে কি গণতন্ত্রের আব্রুরক্ষার কথা সাজে? অথবা তাঁহার মুখে, যিনি গত সাড়ে চার বৎসরে কখনও সাংবাদিক সম্মেলন ডাকিবার সাহস অর্জন করিতে পারেন নাই? তাঁহার মুখে, যাঁহার জমানায় নাগরিকপঞ্জি নির্মাণের ছলে সংখ্যালঘুদের একঘরে করিবার ছক কষা হয়? ক্রিকেট খেলায় কেহ পাকিস্তানকে সমর্থন করিলে তাঁহার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ ঠুকিবার বন্দোবস্ত হয়? কাশ্মীরের মুসলিম বালিকার যৌন নির্যাতন ও হত্যার পর যাঁহার দল অন্যায়কারীদের প্রকাশ্য সমর্থন দেয়? কোনও কথা উচ্চারণ করিবার পূর্বে কী বলিতেছেন, তাহা ভাবিয়া দেখিবার সু-অভ্যাসটি মোদীরা গড়িয়া তুলিতে পারেন। তাঁহাদেরই উপকার হইবে।

Narendra Modi BJP Rafale Sabarimala
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy