Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Home Minister

বিশ্বাস কঠিন বস্তু

যাঁহারা প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে বিরাজমান, তাঁহাদের বিশ্বাসযোগ্যতার দাবি তো আক্ষরিক অর্থেই অপরিমেয়।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২০ ০১:২০
Share: Save:

গত সপ্তাহে সংসদে দাঁড়াইয়া অমিত শাহ দুইটি বিষয়ে কিছু কথা বলিয়াছেন, যাহা তাৎপর্যপূর্ণ। অমিত শাহ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁহার অন্য একাধিক পরিচয় আছে, পরিচিতিও। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক অভিধানের বিচারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকাটিই যে প্রথম এবং প্রধান, তাহা বোধ করি তিনি নিজেও অস্বীকার করিবেন না। সুতরাং সংসদের ভাষণে তাঁহার উক্তির তাৎপর্য থাকিবে, তাহা স্বাভাবিক। কিন্তু উপরোক্ত কথা দুইটির তাৎপর্য ঈষৎ ভিন্ন গোত্রের। প্রথমত, দিল্লিতে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় অমার্জনীয় অপদার্থতা ও অন্যায় পক্ষপাতিত্বের দায়ে প্রবল ভাবে অভিযুক্ত রাজধানীর পুলিশ বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করিতে গিয়া অমিত শাহ বলিয়াছেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত্রির পরে দিল্লিতে হিংসাত্মক ঘটনার আর কোনও অভিযোগ আসে নাই। দ্বিতীয়ত, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনপিআর) বিষয়ে তাঁহার কণ্ঠে এই আশ্বাসবাণী শোনা গিয়াছে যে— এনপিআর তৈয়ারির প্রক্রিয়ায় কাহাকেও সন্দেহজনক ভোটার বলিয়া চিহ্নিত করা হইবে না, অর্থাৎ এনপিআর-এর জন্য তথ্য দিবার সময় কাহারও আপন নাগরিকত্বের স্বীকৃতি লইয়া কিছুমাত্র সংশয় বা আশঙ্কা করিবার কোনও কারণ নাই।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে দাঁড়াইয়া যাহা বলিয়াছেন, নাগরিকেরা তাহা ষোলো আনা বিশ্বাস করিতে চাহিবেন, ইহাই স্বাভাবিক। বস্তুত, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর, বিশেষত মন্ত্রীদের উপর দেশবাসীর বিশ্বাস না থাকিলে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র অর্থহীন হইয়া পড়ে। যাঁহারা প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে বিরাজমান, তাঁহাদের বিশ্বাসযোগ্যতার দাবি তো আক্ষরিক অর্থেই অপরিমেয়। বেদবাক্য মিথ্যা হইতে পারে, প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় সামান্যতম খাদ মিশিলেও মহাভারত অশুদ্ধ হয়। অথচ, অমিত শাহের দুইটি উক্তির যাথার্থ্য লইয়াই বড় রকমের প্রশ্ন আছে। মৌলিক প্রশ্ন। প্রথমত, দিল্লির অশান্তি ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত্রিতে বন্ধ হইয়াছে, এই হিসাবের সহিত বাস্তব তথ্য মিলিতেছে না। তাহার পরেও রাজধানীর বুকে বড় রকমের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহার বিবরণ সংবাদমাধ্যমে সবিস্তার প্রকাশিতও হইয়াছে। দ্বিতীয়ত, নাগরিকত্ব আইনের একটি অংশে স্পষ্ট ভাষায় বলা আছে, (এনপিআর তৈয়ারির মতো) তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চালাইবার সময় কাহারও নাগরিকত্ব সম্পর্কে সন্দেহ নথিভুক্ত করিবার অধিকার সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের আছে। এই বিধিতে সংশোধন আনিয়া হয়তো সেই অধিকার অপসারণ করা যায়, কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো তেমন কোনও সংশোধনের সিদ্ধান্ত বা এমনকি প্রস্তাবও ঘোষণা করেন নাই।

লক্ষণীয়, প্রথম ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবরণের সহিত বাস্তব ঘটনা মিলিতেছে না। অর্থাৎ, যাহা ঘটিয়া গিয়াছে, সেই অতীতের সহিত তাঁহার বক্তব্যের অসঙ্গতি। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে দেখা যাইতেছে, আইনে এক সম্ভাবনা স্বীকৃত, অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলিতেছেন তাহার কোনও প্রশ্নই নাই। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে, যাহা ঘটিতে পারে, সেই সম্ভাব্য ভবিষ্যতের সহিত তাঁহার বক্তব্যের অসঙ্গতি। তাঁহার দুই হাতে দুই কালেরই মন্দিরা বাজিয়াছে— দুইই বেসুর, বেতাল। আগে কী করিয়াছেন এবং পরে কী করিবেন, দুই বিষয়েই তাঁহার কথার বিশ্বাসযোগ্যতা লইয়া প্রবল সংশয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই অবধি যাহা করিয়াছেন, সেই অভিজ্ঞতা মনে রাখিলে সংশয় বহুগুণ প্রবলতর হইয়া উঠে। এক দিকে যে কোনও প্রতিবাদ দমনে এবং অন্য দিকে বিভাজন সৃষ্টির সঙ্কীর্ণ উদ্দেশ্য সিদ্ধির অভিযানে এই শাসকদের ব্যগ্রতার অন্ত নাই, এই বিষয়ে তাঁহাদের আশ্বাস এবং আচরণের পার্থক্যও বিপুল। গণতান্ত্রিক ভারতের শুভবুদ্ধিমান নাগরিক দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় বিশ্বাস করিতে চাহেন। কিন্তু সেই কাজ উত্তরোত্তর কঠিন হইয়া উঠিতেছে না কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home Minister Politics BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE