Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Newsletter

দুর্ভাগ্য টলেছে এ যাত্রা, কিন্তু অপরাধ লঘু হচ্ছে না তাতে

উৎকণ্ঠার আগুনে জল ঢালল পুলিশ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাত এক শিশুকে নিয়ে সবার চোখের সামনে দিয়ে গায়েব হয়েছিলেন মহিলা।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৭ ০৪:৪০
Share: Save:

উৎকণ্ঠার আগুনে জল ঢালল পুলিশ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাত এক শিশুকে নিয়ে সবার চোখের সামনে দিয়ে গায়েব হয়েছিলেন মহিলা। সন্তান হারিয়ে মায়ের হৃদয়ে যখন হাহাকার তীব্র এবং সমগ্র বাংলা যখন সেই মায়ের সমব্যাথী, তখনই পুলিশ উদ্ধার করে ফেলল হারানো মাণিক্য। যন্ত্রণার উপশম তাতে হল বটে, মায়ের হৃদয়ের শোক এবং আরও লক্ষ লক্ষ হৃদয়ে জ্বলে ওঠা উৎকণ্ঠার আগুন তাতে নিভল আপাতত ঠিকই, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত অবহেলা, গাফিলতি এবং অপদার্থতার দৃষ্টান্ত খুব বড় প্রশ্নচিহ্নের জন্ম দিয়ে দিল।

যে ভাবে মায়ের কোল থেকে সদ্যোজাত শিশুকে হাতিয়ে প্রায় সর্বসমক্ষে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পেরেছিলেন অভিযুক্ত মহিলা, তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম অপদার্থতা এবং ঔদাসীন্যের নমুনা ছাড়া আর কিছুই নয়। চুরি নয়, আসলে সদ্যোজাতের কেপমারি হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে। সরকারি হাসপাতালে অগণিত মানুষের আনাগোনা, অগণিত রোগীর চাপ— এ কথা সত্য। হাসপাতাল চত্বরে পা রাখা প্রতিটি চরিত্রের উপর নজরদারি কঠিন— তাও মানতে হবে। কিন্তু হাসপাতালের একেবারে গভীর অন্দরমহল পর্যন্ত কারা পৌঁছে যাচ্ছেন, কার অনুমতি নিয়ে পৌঁছতে পারছেন, কে কী উদ্দেশ্যে ঢুকছেন— এই প্রাথমিক তথা ন্যূনতম তথ্যটুকু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের গোচরে রাখতে পারবেন না? এমন আবার হয় নাকি? এমনও হয়— দেখিয়ে দিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। সবার চোখের সামনে দিয়ে গড়গড় করে যে কোনও ওয়ার্ডে পৌঁছনো যায়, খুব সহজে হাসপাতালের কর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করা যায়, সকলের চোখের সামনে দিয়ে শিশু পাচার করে দেওয়া যায়— দেখিয়ে দিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ।

যে ভাবে বা যে কায়দায় শিশুকে গায়েব করা হয়েছিল, তাতে স্পষ্ট, হাসপাতালে অবাধ গতিবিধি দুষ্কৃতীদের। হাসপাতালের কার্যপদ্ধতি, হাসপাতালের নিরাপত্তার ফাঁক, হাসপাতালের অলি-গলি এবং রন্ধ্রপথ দুষ্কৃতীদের নখদর্পনে। কিন্তু উল্টো দিকে থাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুষ্কৃতীদের এই অভ্যস্ত ও সপ্রতিভ পদচারণা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে।

পুলিশি তৎপরতায় খুব বড় দুর্ভাগ্য টলে গেল এ যাত্রা ঠিকই। কিন্তু হাসপাতাল প্রশাসনের চরম অপদার্থতার নমুনা তাতে বিন্দুমাত্র লঘু হল না। এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা কী ভাবে ঘটল, এই অমার্জনীয় ঔদাসীন্য ঠিক কোন ধরনের মানসিকতার ফসল, সে জবাব কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে চাওয়া দরকার।

বেসরকারি হাসপাতালের অনিয়ম রুখতে সম্প্রতি সরকারি নজরদারির পাকাপোক্ত বন্দোবস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে আইনের আওতায় সরকারি হাসপাতালগুলিকে কেন আনা হয়নি, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নজরদারিই যথেষ্ট সরকারি হাসপাতালগুলির জন্য— খানিকটা এমনই জবাব ছিল সরকারের তরফে। বিধানসভায় সরকার পক্ষের ওই উচ্চারণের যে ওজনটা ছিল সে দিন, আজ কিন্তু সে ওজন অনেকটাই লঘু। সৌজন্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের দৃষ্টান্তমূলক অব্যবস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE