Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মহাসিন্ধু

নির্মাণ ও প্রশিক্ষণ পর্বে সকল দেশের খেলোয়াড়ের ন্যায় এক ভারতীয়কেও বিপুল লড়াইয়ের ভিতর দিয়া প্রস্তুত হইতে হয়, উপরন্তু প্রশাসনিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা। দৈবাৎ কেহ যদি সেই কঠিন ও কণ্টকাকীর্ণ পথ পার করিয়া ফেলিতে পারেন, তবে হয়তো সিন্ধু-আনন্দ-ধ্যানচাঁদের ন্যায় সংবাদ শিরোনামে এক বার আসিবার সুযোগ ঘটিয়া যায়। ভারতীয় ক্রীড়ার বিকাশের ক্ষেত্রে ইহাই প্রাথমিক বাধা।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩৬
Share: Save:

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হইলেন পুসারলা বেঙ্কট সিন্ধু। গত দুই বৎসর ফাইনালে উঠিলেও তিনি জয়ী হইতে পারেন নাই। রবিবার সুইৎজ়ারল্যান্ডের বাসেল শহরে ব্যাডমিন্টনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জাপানের নজ়োমি ওকুহারাকে স্ট্রেট গেমে পরাজিত করিয়াছেন হায়দরাবাদের ২৪ বৎসর বয়সি কন্যা। প্রথম ভারতীয় হিসাবে এই শিরোপা লাভ করিয়া ইতিহাস গড়িলেন তিনি। এই জয়ের ফলে ভারতীয় ক্রীড়াজগতের সপ্ত আশ্চর্যের তালিকায় প্রবেশ করিলেন এই শাটলার। সপ্ত আশ্চর্য— সাম্প্রতিকতম রেকর্ডটি ধরিলে বিবিধ খেলায় সাত বার জয়লাভ করিয়াছে ভারত। ১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিক্সে জার্মানিকে ৮-১ গোলে হারাইয়া ধ্যানচাঁদের দলের সোনা জয়, ১৯৮৩ সালে অপ্রতিরোধ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনালে হারাইয়া কপিল দেবের ছেলেদের ট্রফি জয়, ২০০৭ সালে মেক্সিকো সিটিতে ফিডে বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে একাধিক সেরাকে পশ্চাতে ফেলিয়া বিশ্বনাথন আনন্দের শিরোপা লাভ ইহার মধ্যে পড়ে। স্বভাবতই, সিন্ধুর মহান কীর্তিতে গর্বিত হইয়াছেন সচিন তেন্ডুলকর, সানিয়া মির্জ়ারাও।

আনন্দ-শুভেচ্ছার পর্ব চুকিলে অবশ্য আর একটি কথা আসে। আশ্চর্যের সংখ্যা দেখিয়া ভাবিতে হয়, ইহা কি সত্যই গর্বের বিষয় না কি লজ্জার। যে দেশের জনসংখ্যা গোটা বিশ্বের ১৭ শতাংশেরও অধিক মানুষকে ধারণ করে, যে দেশ আয়তনে বিশ্বে সপ্তম, যে দেশ প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদে এত বিপুল, সেই দেশের শতাব্দীপ্রাচীন ক্রীড়া ইতিহাসে আশ্চর্য জয়ের সংখ্যা মাত্র সাত! স্বল্পতার কারণটি সহজ। ভারতে ক্রীড়ার কদর নাই, খেলাধুলা করা বড়ই কঠিন। যেটুকু আলো আছে, তাহার সর্বাংশ ক্রিকেটের নিমিত্ত নিবেদিত। অবশিষ্ট দুয়োরানিদের সাফল্য না আসিলে অর্থও নাই, সম্মানও নাই। নির্মাণ ও প্রশিক্ষণ পর্বে সকল দেশের খেলোয়াড়ের ন্যায় এক ভারতীয়কেও বিপুল লড়াইয়ের ভিতর দিয়া প্রস্তুত হইতে হয়, উপরন্তু প্রশাসনিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা। দৈবাৎ কেহ যদি সেই কঠিন ও কণ্টকাকীর্ণ পথ পার করিয়া ফেলিতে পারেন, তবে হয়তো সিন্ধু-আনন্দ-ধ্যানচাঁদের ন্যায় সংবাদ শিরোনামে এক বার আসিবার সুযোগ ঘটিয়া যায়। ভারতীয় ক্রীড়ার বিকাশের ক্ষেত্রে ইহাই প্রাথমিক বাধা।

এই পথ অতিক্রম করিয়া যে খেলোয়াড় জয় ছিনাইয়া আনেন, তাঁহার মনে যে আনন্দের সহিত ক্ষোভও থাকে, ইহা স্বাভাবিক। গত ডিসেম্বরে গুয়াংঝউয়ে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় জিতিবার পর সিন্ধুর প্রতিক্রিয়ায় সম্ভবত তাহাই ছিল: ‘আশা করি আর কেহ আমার ফাইনালে হার লইয়া কিছু বলিবেন না।’ অনুমান করা চলে, বারংবার অর্জনের পরেও স্বীকৃতির পরিবর্তে কটাক্ষ আসিবার পরবর্তী বহিঃপ্রকাশ সেটি। তবে কিনা, যে ক্রীড়াজগতে খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার অভাব, সেখানে সমালোচনার ক্লেদ এড়াইয়া মহৎ হওয়াই শ্রেয়। স্মরণে রাখা ভাল, আশ্চর্য জয়লাভের পথে দ্বিতীয় বাধা এই জবাবদিহির চাপ। এক জন খেলোয়াড়ের ফুলফলে পল্লবিত হইবার সময় কোথায়? ক্রমাগত অর্জন করিয়া নিজেকে প্রমাণ না করিলে আগাইবার পথ মসৃণ হয় না। অতএব, ভারত যদি আরও অনেক সিন্ধুর আকাঙ্ক্ষা করে, আশ্চর্যের সংখ্যা যদি সাত হইতে দ্রুত বৃদ্ধি করিতে চাহে, তাহা হইলে ক্রীড়া প্রশাসন এবং সমাজকে পাল্টাইতে হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PVSindhu Badminton
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE