Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

এই উচ্ছৃঙ্খল প্রবণতায় ইতি টানা দরকার

লজ্জাজনক একটা প্রবণতার পুনরাভিনয় দেখা গেল। অনুষ্ঠান করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হলেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী সঙ্গীত শিল্পী ইমন চক্রবর্তী।

ইমন চক্রবর্তী। ফাইল চিত্র

ইমন চক্রবর্তী। ফাইল চিত্র

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০৯
Share: Save:

লজ্জাজনক একটা প্রবণতার পুনরাভিনয় দেখা গেল। অনুষ্ঠান করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হলেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী। রবিবার কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে যে রকম হেনস্থার মুখে পড়লেন ইমন, তা অত্যন্ত দু্র্ভাগ্যজনক। কিন্তু এই ঘটনাটাকে শুধু একটা খারাপ ঘটনা ভাবলে অথবা শুধুমাত্র এই ঘটনাটার নিন্দা করলে, অন্যায় হবে। কারণ ইমন চক্রবর্তীর সঙ্গে যা ঘটল, সেই প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ দিনের। তবে সম্প্রতি এই প্রবণতা বাড়ছে।

রবিবার রাত থেকে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে ধর্না শুরু করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, গোটা দেশের নজর ছিল সেই ধর্নার দিকে। তাই কৃষ্ণনগরে ইমন চক্রবর্তীর হেনস্থার দিকে চোখ পড়েনি সে ভাবে। কিন্তু যে রকম পরিস্থিতির মুখে তাঁকে পড়তে হয়েছিল, বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে আজকাল মাঝেমধ্যেই শিল্পীদের যে রকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে, তা একটা বিপজ্জনক বিষয়। তাই এর বিহিতের একটা পথ এ বার খুঁজে বার করা দরকার।

কী নিয়ে অশান্তিগুলো ঘটছে? কখনও গানের সংখ্যা নিয়ে, কখনও গানের বাছাই নিয়ে। ইমনকেই প্রথম খুব বড় বিপদের সম্মুখীন হতে হল, তা নয়। বিপদের মুখ দেখেছেন সে যুগের হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায় থেকে এ যুগের লোপামুদ্রা মিত্র, মেখলা দাশগুপ্ত বা সোমলতা আচার্য চৌধুরীরাও। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিপদের কারণ মোটামুটি একই— অনুষ্ঠানের আয়োজকরা যে রকম দাবি করছেন, ঠিক সে রকমটাই পূরণ করতে না পারা। আয়োজকদের এ সব দাবি অনেক ক্ষেত্রেই যে অবান্তর এবং অযৌক্তিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তা আমাদের সকলেরই জানা। কিন্তু এ ধরনের অবুঝ আচরণের থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও সুনির্দিষ্ট পন্থা বা পদ্ধতি নেই।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রশাসনকে বিষয়টা এ বার গুরুত্ব দিয়ে ভাবতেই হবে। শিল্পীদের ঘিরে অশান্তি তৈরি হওয়ার খবর আসা ইদানীং বেড়ে গিয়েছে। কেন বেড়েছে, এটা কোনও ক্রমবর্ধমান সামাজিক বিশৃঙ্খলার উপসর্গ কিনা—উপযুক্ত মহল তা নিয়ে চর্চা করতেই পারেন। চর্চা হওয়া দরকারও। কিন্তু সর্বাগ্রে কোনও প্রশাসনিক পদক্ষেপ বা প্রশাসনিক সক্রিয়তা জরুরি। তা না হলে এই অরাজক প্রবণতা আরও দ্রুত ছড়াতে থাকবে।

আরও পড়ুন: ‘আমরা কেউ বাইজি নই, এখানে নাচতে আসিনি’, ফেসবুক লাইভে ইমনের এই মন্তব্যে কী বললেন বিশিষ্টরা?

শিল্পীদের হেনস্থা করার মধ্যে একটা সাংঘাতিক দ্বিচারিতাও কিন্তু রয়েছে। যে শিল্পীর ভক্ত অথবা গুণমুগ্ধ আমরা, সেই শিল্পীকেই সাধারণত আমরা অনুষ্ঠানে নিয়ে আসি বা নিয়ে যাই। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরে সেই শিল্পীকেই শ্রোতাদের ইচ্ছে-অনিচ্ছের গোলাম ভেবে নেওয়া হচ্ছে কী ভাবে?

আরও পড়ুন: ‘দেখি তুই কী করে বের হবি’, কৃষ্ণনগরে হেনস্থার শিকার ইমন

শ্রোতা বা আয়োজকের চরিত্রে এ এক পরস্পরবিরোধী প্রবণতা। এই প্রবণতা কেন? তা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ চলতেই পারে। সেই বিশ্লেষণ থেকে সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে, বা শিল্পীদের ডেকে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করার ক্রমবর্ধমান প্রবণতাটার কারণ জানা যেতে পারে। কিন্তু সর্বাগ্রে এই প্রবণতায় তথা এই বিশৃঙ্খলায় ইতি টানা দরকার। তার জন্য প্রশাসনিক সক্রিয়তাই একমাত্র পথ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE