Advertisement
E-Paper

প্রশ্ন যেখানে আত্মমর্যাদা, ভারতের উত্তর সেখানে ঋজুতা

মিত্রতা ছিল, এখনও রয়েছে, সম্ভবত আরও গাঢ় হয়েছে। কিন্তু সার্বভৌমত্ব ফিকে হয়নি তা বলে। কণ্ঠস্বরে যে স্বতন্ত্রতা ছিল নয়াদিল্লির এত দিন, সে স্বতন্ত্রতা আজও সমান দৃঢ়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৮

মিত্রতা ছিল, এখনও রয়েছে, সম্ভবত আরও গাঢ় হয়েছে। কিন্তু সার্বভৌমত্ব ফিকে হয়নি তা বলে। কণ্ঠস্বরে যে স্বতন্ত্রতা ছিল নয়াদিল্লির এত দিন, সে স্বতন্ত্রতা আজও সমান দৃঢ়। প্রশ্ন যেখানে আত্মমর্যাদা, ভারতের উত্তর সেখানে ঋজুতা এবং অনমনীয়তা। দিল্লি থেকে ঠিক এমনই এক বার্তা গেল ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকায়।

প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যা কিছু সমস্যা, সেই সব কিছুর ভরকেন্দ্র কাশ্মীর। অপরিসীম রক্তক্ষয়ের ছাপ রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। ভারত কিন্তু আপসহীন এ প্রশ্নে। কারণ সেই ১৯৪৭ থেকেই কাশ্মীরের উপর সার্বভৌম অধিকার ভারতের কাছে আত্মর্যাদার প্রশ্ন। বৈদেশিক বা আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার প্রস্তাব বহু বার এসেছে, নানা মহল থেকে উত্থাপিত হয়েছে। কিন্তু ভারত তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ হতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অবিচল থেকেছে। কাশ্মীরকে ঘিরে যে সমস্যা, তা ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা। এ দৃশ্যপটে কোনও তৃতীয় পক্ষের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নই ওঠে না— বার বার স্পষ্ট উচ্চারণে জানিয়েছে ভারত। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আরও এক বার তার উচ্চারণ জরুরি হয়ে পড়ল।

অনেক কিছুই নতুন হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকায়। বদলে যাচ্ছে অনেক পুরনো নীতি, পুরনো সিদ্ধান্ত। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের আমলে ভারত-মার্কিন মৈত্রী যে নতুন যুগে পা রেখেছিল, বুশ জমানা, ওবামা জমানা কাটিয়ে এসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজত্বেও সেই যুগই বহাল থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল অনেক শিবিরেরই। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য অনেক সংশয়েরই নিরসন ঘটিয়েছেন, সামরিক এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অন্তত এ যাবৎ আরও প্রগাঢ় মৈত্রীর দিকেই পা বাড়িয়েছেন। কিন্তু অনেক হিসেব ওলট-পালট করে দেওয়া ট্রাম্প, ভারত-আমেরিকা মৈত্রীর প্রতি ইতিবাচক থেকেছেন বলেই ট্রাম্প প্রশাসনের যে কোনও প্রস্তাব শশব্যস্তে মেনে নেবে ভারত, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই, বুঝিয়ে দিল নয়াদিল্লি। রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিকি হ্যালি জানিয়েছিলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সমস্যা নিরসনে মধ্যস্থতায় আগ্রহী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক পত্রপাঠ জানাল, প্রেসিডেন্টে ট্রাম্প বা তাঁর প্রশাসনকে মধ্যস্থ হিসেবে পেতে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নয় ভারত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই আগ্রহ যে অযাচিত এবং অনভিপ্রেত, তাও বেশ স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতের তরফে।

প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন, প্রেসিডেন্ট ওবামাও একই ভাবে মধ্যস্থতায় আগ্রহী ছিলেন। ভারত তখনও প্রত্যাখ্যান করেছিল। ট্রাম্পকেও প্রত্যাখ্যানই করা হল।

এই ঋজুতা শিক্ষনীয় গোটা বিশ্বের জন্য। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কোন বিষয়ে কী ভাবছেন, গোটা বিশ্বের কাছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের কাছেও। কিন্তু মৌলিক নীতি বা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভারতের অবস্থান যে বদলাবে না, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নাম বদলানোর সঙ্গে ভারতের নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ার যে কোনও সম্পর্ক নেই, তা আরও এক বার স্পষ্ট করে দিতে পারলাম আমরা।

Anjan Bandyopadhyay Newsletter Sovereignty Indo-USA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy