Advertisement
E-Paper

বিধিবদ্ধ

চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সতর্কীকরণের নিরিখে ভারত পঞ্চম স্থান অধিকার করিয়াছে। এবং বিশেষজ্ঞেরা জানাইয়াছেন, স্বাস্থ্য বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা নির্মাণের ক্ষেত্রে ক্ষিপ্র গতিতে অগ্রসর হইতেছে নরেন্দ্র মোদীর দেশ।

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪০

চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সতর্কীকরণের নিরিখে ভারত পঞ্চম স্থান অধিকার করিয়াছে। এবং বিশেষজ্ঞেরা জানাইয়াছেন, স্বাস্থ্য বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা নির্মাণের ক্ষেত্রে ক্ষিপ্র গতিতে অগ্রসর হইতেছে নরেন্দ্র মোদীর দেশ। সিগারেটের প্যাকেটের ক্ষেত্রফলের কত শতাংশ জুড়িয়া সতর্কতা বিজ্ঞাপিত করা হয় এবং তাহা চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে হয় কি না, ইহাই ছিল বিশ্বের ২০৬টি দেশ ও অঞ্চলের ক্রমতালিকা নির্মাণের মাপকাঠি। ১ সেপ্টেম্বর হইতে সিগারেট, বিড়ি ও চর্বণ করিবার তামাকের প্যাকেটের দুই পিঠে ৮৫ শতাংশ স্থান জুড়িয়া চিত্রাঙ্কনের নির্দেশ এবং কোন নম্বরে যোগাযোগ করিলে তামাকের নেশা ছাড়িতে সহায়তা করা হইবে সেই হদিস দিবার ফলেই এই অভূতপূর্ব উন্নতি, জানা গিয়াছে। তবে স্মরণে রাখা আবশ্যক, বিশ্ব মানচিত্রে ভারতের উজ্জ্বল চিত্রটি প্রতিভাত হইয়াছে কেবল সিগারেটের নিরিখে। ভারতে কত শতাংশ মানুষ আর সিগারেট খাইতে পারেন? বিড়ি এবং চর্বণকারীদের সংখ্যাই অধিক, কেননা উহা স্বল্পমূল্যের এবং নিম্নবিত্তের ভোগ্য। সুতরাং, গৌরবের অঙ্কটি প্রকৃত না হইবার আশঙ্কা আছে।

উপরন্তু, সতর্কতার ক্ষেত্রফল যত বাড়িতেছে, সেই অনুপাতে সেবনকারীর সংখ্যাও হ্রাস পাইতেছে কি না, সেই সমীক্ষা হয় নাই। হইলে বুঝা যাইত, বৃহৎ চিত্রাঙ্কন বৃহৎ সচেতনতা গড়িয়া তুলিতে সক্ষম হইতেছে কি না। আরও একটি অপ্রিয় প্রশ্ন উঠিতে পারিত— সরকারের দায় কি কেবল সতর্কতা জারি করায়? তাহা যথাযথ রূপে পালিত হইতেছে কি না, হইলে কতটা, ইহা নজর রাখাও সরকারের কর্তব্য। তবে কেন্দ্রীয় সরকার অপ্রিয় প্রশ্ন পছন্দ করে না। সুতরাং, সতর্কতার বাণীকে গম্ভীর বানাইয়া তুলিবার অভিমুখেই সমস্ত মনোযোগটি নিবিষ্ট, প্রয়োগক্ষেত্র লইয়া ততখানি মাথাব্যথা নাই। এবং চারিপাশের অভিজ্ঞতাই জানাইয়া দেয়, ৮৫ শতাংশ জুড়িয়া যে ভয় বা সচেতনতা নির্মাণকল্পে চিত্রাঙ্কন, তাহা যথেষ্ট সফল নহে। ‘ধূমপান নিষেধ’ বোর্ডের সম্মুখেই ধোঁয়া উ়়ড়াইবার দৃশ্যটি ভারতে জলভাত।

বস্তুত, ধূম্রপানের কারণটি বুঝিবার চেষ্টা না করিলে, উহাকে রুখিবার প্রচেষ্টাও সার্থক হওয়া কঠিন। প্রেক্ষাগৃহে শো শুরুর পূর্বে ধূম্রপানের ক্ষতি বুঝাইবার নিমিত্ত দীর্ঘ সময় ব্যয় করা হইয়া থাকে। কিয়ৎকাল পরেই চলচ্চিত্রের ভিতর ধূম্রপান করিবার কিছু নায়কোচিত মুহূর্ত চিত্রিত হয়, যাহাতে প্রতীয়মান হইতেই পারে, ইহাই শ্রেষ্ঠত্ব লাভের অন্যতম উপায়। অতএব, হিরোগিরির সহিত ধূম্রপানের যোগসূত্রটি ছিন্ন করিতে না পারিলে সঙ্কটের সমাধান অসম্ভব। শিল্পের প্রয়োজনে তামাক সেবনের প্রদর্শন হইয়া থাকে, তবে যথেচ্ছাচার সঙ্গত কি না, প্রশ্ন উঠিবে। কর্কট যে মারণরোগ, ইহা সম্পর্কে সকলেই অবগত। তবু আপন অভিজ্ঞতায় তাহা উপলব্ধি করিবার পূর্বে মানুষ সচেতন হয় না, কেননা ইহার সামাজিক নির্মাণটি জোরালো। ভবিষ্যতের মরণের কথা ব্যক্তি ভাবে না, বরং যেই সমাজে সে বাঁচিতেছে, সেই স্থানে ইহা উৎসাহোদ্দীপক করতালি কুড়াইবার সোপান, ইহাই তাহার নিকট জরুরি। সেই ধ্বনিকে ধিক্কারে পরিবর্তিত না করিতে পারিলে সমগ্র প্যাকেট জু়ড়িয়া সতর্কতা অঙ্কন করিলেও তাহা কেবল ‘বিধিসম্মত’ হইয়াই থাকিয়া যাইবে।

Smoking pictorial warning India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy