Advertisement
E-Paper

পোলাপান

আয়বৃদ্ধির হার হিসাবে ৮.২ শতাংশ অবশ্যই উঁচু। ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’র স্বপ্নে বিভোর অটলবিহারী বাজপেয়ী ১০ শতাংশের কথা বলিতেন বটে, তবু ছাতির মাপ চুয়ান্ন ইঞ্চি হইলেও আহ্লাদের কারণ আছে

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।

অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।

বাংলা ভাষা হইতে অনেক শব্দ হারাইয়া গিয়াছে, আরও অনেক শব্দ হারাইয়া যাইতেছে। যেমন, পোলাপান শব্দটি এক কালে বাঙালির কথায় ও লেখায় সুপ্রচলিত ছিল, এখন তাহার শ্রুতি বিরল, বিশেষত শহরে। বঙ্গীয় শব্দকোষ অভিধান-এ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় শব্দটিকে স্বীকার করিয়াছিলেন। রাজশেখর বসু তাঁহার চলন্তিকা’য় পোলা শব্দটিকে শিশু বা ছেলে অর্থে স্থান দেন, যদিও (গ্রাম্য) বলিয়া ঈষৎ তফাতে বসান। সংসদ বাংলা অভিধানও একই পথের পথিক— কেবল, বোধ করি কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিয়া, বন্ধনীতে ‘গ্রাম্য’ কাটিয়া ‘আঞ্চলিক’ লিখিয়াছেন। উভয়েই পোলাপানকে বাদ দিয়াছেন। ভাল করেন নাই। প্রাপ্তবয়স্করা, বিশেষত উচ্চ পদে আসীন নেতা, মন্ত্রী, আধিকারিকরা অনেক সময় যে আচরণ করেন তাহার যথাযথ বর্ণনা করিতে চাহিলে শব্দটি বিশেষ কাজে লাগে। এপ্রিল হইতে জুন, এই তিন মাসে ভারতের জিডিপি বা জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার ৮.২ শতাংশ হইয়াছে, এই সংবাদ শুনিয়া তাঁহারা যে মুক্তকচ্ছ নৃত্য সহযোগে আত্মশ্লাঘার সংকীর্তন শুরু করিয়াছেন, তাহা দেখিয়া কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক বলিবেন: পোলাপান।

আয়বৃদ্ধির হার হিসাবে ৮.২ শতাংশ অবশ্যই উঁচু। ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’র স্বপ্নে বিভোর অটলবিহারী বাজপেয়ী ১০ শতাংশের কথা বলিতেন বটে, তবু ছাতির মাপ চুয়ান্ন ইঞ্চি হইলেও আহ্লাদের কারণ আছে। কিন্তু দুই একটি কথা মনে রাখা ভাল। এক, অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের হিসাব দেখিয়া ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া বুদ্ধির পরিচায়ক নহে। ইতিমধ্যেই জানা গিয়াছে, শিল্প ও পরিকাঠামোর ‘কোর’ বা কেন্দ্রীয় অংশগুলিতে জুলাই মাসে বৃদ্ধির হার জুনের তুলনায় কম। দুই, গত অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে আয়বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৫.৬ শতাংশ, সেই অল্পের সহিত তুলনা করিলে মাঝারিকেও বেশি দেখাইতেছে। তিন, ডলারের তুলনায় টাকার দাম কমিয়াই চলিতেছে, ফলে মূল্যবৃদ্ধির লাগাম হাতছাড়া হইবার আশঙ্কা বাড়িতেছে। নাচিবার পূর্বে চারিদিক ঈষৎ দেখিয়া ও বুঝিয়া লওয়াই বিচক্ষণতার কাজ।

কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে বিচক্ষণতার দাম কম, বাহ্বাস্ফোটের কাটতি বেশি। তদুপরি ভোট আসিতেছে। এবং ইতিমধ্যে জিডিপির নূতন হিসাবের লীলায় ইউপিএ-র সাফল্য উজ্জ্বল দেখাইতেছে। ফলে সরকারি কর্তারা ৮.২ শতাংশের তিলটি পাইবামাত্র বিপুল উৎসাহে তাহাকে তালে পরিণত করিতে ব্যগ্র। অর্থমন্ত্রী এই পরিসংখ্যানে ‘নয়া ভারত’-এর মুখচ্ছবি দেখিতেছেন। বিজেপি সভাপতি ইহাতে ‘প্রধানমন্ত্রীর সংস্কারের প্রতিফলন’ খুঁজিয়া পাইয়াছেন। অর্থ সচিবের ভাষ্যেও শাহ-বাণীর অমোঘ প্রতিধ্বনি। সর্বাধিনায়ক নিশ্চয়ই জুতসই বাক্যালঙ্কার খুঁজিতেছেন, ঢাক পিটাইবার এমন সুযোগ তিনি ছাড়িবেন বলিয়া মনে হয় না। সে তাঁহারা পিটাইতেই পারেন, আত্মপ্রচারের অধিকার সকলেরই আছে। ভবিষ্যতে ফানুস চুপসাইয়া গেলে অন্য কথা বলিলেই চলিবে, জনস্মৃতি ক্ষণস্থায়ী। তবে কিনা, বালক অশ্বত্থামা পিটুলিগোলা খাইয়া দুগ্ধসেবনের আনন্দে নৃত্য করিলে সেই দৃশ্য বিষণ্ণ করে, সরকারি রথী-মহারথীরা জনসাধারণকে পিটুলিগোলা খাওয়াইয়া নাচিতে থাকিলে কৌতুকরসের উদ্রেক হয়। উদ্ভট, বিসদৃশ কৌতুক।

India GDP Growth BJP UPA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy