Advertisement
E-Paper

এ কেমন ঘরে ফেরা! উৎকণ্ঠায় গ্রামীণ ভারত

এ এক বিষণ্ণ প্রত্যাবর্তনের সময়। নগর ছেড়ে, শহর ছেড়ে, ভিনরাজ্যের কর্মক্ষেত্র উজাড় করে দলে দলে ঘরে ফিরছে মানুষ। ফিরছে গ্রামে, গ্রামান্তরে। অস্তিত্ব রক্ষার স্রোতটা আচমকা বিপরীতমুখী আজ।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩২
ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

এ এক বিষণ্ণ প্রত্যাবর্তনের সময়। নগর ছেড়ে, শহর ছেড়ে, ভিনরাজ্যের কর্মক্ষেত্র উজাড় করে দলে দলে ঘরে ফিরছে মানুষ। ফিরছে গ্রামে, গ্রামান্তরে। অস্তিত্ব রক্ষার স্রোতটা আচমকা বিপরীতমুখী আজ। শ্রমের যে স্রোত বহির্মুখী হতে শিখেছিল দশকের পর দশক ধরে, সে স্রোত আজ হঠাৎ উৎসমুখী, অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে সে স্রোতে আজ শিকড়ের আকুল টান অনুভূত যেন।

অর্থনীতির আধুনিক ধারণাগুলো যত বিকশিত হয়েছে, পেশার টানে, কাজের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে নগরমুখী হওয়ার প্রবণতা ততই বেড়েছে দিন দিন। শুধু ভারতে নয়, দেশে দেশেই পেশার খোঁজে এই নগরমুখী জনস্রোতের সাক্ষী হতে হয়েছে অর্থনীতিকে। শ্রম দেওয়ার সুযোগ পেতে শিকড় থেকে অনেক দূরে পাড়ি জমিয়েছে মানুষ। আড়ে-বহরে রোজ ফুলে-ফেঁপে উঠতে থাকা নগর সভ্যতাকে ঘিরে যে সুবিশাল কর্মযজ্ঞ রোজ,তার প্রসাদে গ্রামে-গ্রামান্তরে বছরের পর বছর লালিত হয়েছে বহু পরিবার।

গত এক দশকে অবশ্য বেশ কিছুটা বদলাতে শুরু করেছিল ভারতের গ্রামগুলোর চেহারা। গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারি উদ্যোগ, গ্রামীণ পরিকাঠামো বৃদ্ধিতে জোর, গ্রামীণ বিকাশের সুসংহত পরিকল্পনা শ্রী ফেরাতে শুরু করেছিল ভারতের গ্রামীণ জীবনে। গ্রামীণ অর্থনীতি কিছুটা হলেও স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছিল, গ্রাম ছেড়ে কাজের খোঁজে নগরমুখী স্রোত কমেছিল কিছুটা। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর একটি সিদ্ধান্তে আচম্বিতে ওলট-পালট হয়ে গেল সব হিসেব। সম্পূর্ণ নজিরবিহীন এক ছবির জন্ম দিয়ে নগর ছেড়ে গ্রামমুখী জনস্রোত শুরু হয়ে গেল ভারতে।

অর্থনীতির সব হিসেব কেমন যেন গুলিয়ে গিয়েছে। নগর ছেড়ে, শহর ছেড়ে মানুষকে দলে দলে ফিরতে হবে গ্রামে কোনও দিন, অর্থনীতিবিদদের কল্পনার সুদূরপরাহত পরিসরেও এমন সম্ভাবনা সম্ভবত কখনও উঁকি দেয়নি। কিন্তু মুদ্রারহিতকরণের পর থেকে সাধারণ্যে যে মাত্রার অর্থসঙ্কট এবং দেশ জুড়ে কর্মসংস্থানে যে পরিমাণ সঙ্কোচন, তাতে শহরে টিকে থাকাই কষ্টকর শ্রমজীবী শ্রেণির পক্ষে আজ। অতএব, সব ছেড়েছুড়ে আপাতত শিকড়ে ফেরার আকুতি, অস্তিত্বটুকু বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা।

আশঙ্কার মেঘটা দু’দিক থেকে ঘনিয়ে আসছে।

প্রথমত, নগর সভ্যতা ঘিরে যে তুমুল কর্মব্যস্ততা দৈনন্দিন, ভারতীয় অর্থনীতির অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে সে সব। আচমকা কাজে ভাঁটা আসায় নগর তো বটেই, জাতীয় রাজকোষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামগুলো। নগর-নির্ভরতা কমছিল যে গ্রামের, জীবনকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে শুরু করেছিল যে গ্রাম, আচমকা এবং অপ্রস্তুত এক ধাক্কায় সব টালমাটাল আজ সেখানে।

উৎসবের দিনে, খুশির মুহূর্তে শহর থেকে ফিরবেন পরিজনরা, প্রিয়জনরা— এ ছবিতেই অভ্যস্ত ছিল গ্রাম এত দিন। আচমকা উলটপুরাণ আজ, সঙ্কটের দিনে সঙ্কট গভীরতর করে দলে দলে ফিরে আসছেন মানুষ। পরিজনরা ঘরে ফিরছেন, কিন্তু দু’চোখে খুশির ঝিলিক নিয়ে আজ পথ চেয়ে নেই গ্রাম, উদ্বেগ আর আতঙ্ক নিয়ে নগর-ফেরত পরিজনদের দিকে তাকিয়ে সে। সামনের দিনগুলো কেমন? উৎকণ্ঠার ছাপ স্পষ্ট চোখেমুখে।

Anjan Bandyopadhyay NewsLetter Indian Economy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy