Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

এই অসৌজন্যই কি আসল বাধা?

ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আঙিনায় যে বিস্তর বরফ জমে রয়েছে তা কিছুতেই গলছে না কেন, এ বার হয়তো অনেকেই আন্দাজ করতে পারবেন একটু একটু।

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯ ০০:৪৯
Share: Save:

হুঙ্কার, ঔদ্ধত্য আর আরোপিত স্পর্ধা দেখিয়েই যদি কূটনৈতিক সাফল্য মিলত, তা হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত তত্ত্বাদি নিয়ে উচ্চস্তরের পঠনপাঠন বা গবেষণার প্রয়োজন ছিল না। এ কথা বোঝার জন্য কূটনীতিক বা রাষ্ট্রনেতা হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। দেশ-কাল-রাজনীতি সম্পর্কে বুনিয়াদী ধারণাটুকু থাকলেই এ কথা বোঝা সম্ভব। সে ধারণা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেই, এমনটা বিশ্বাস করা খুব শক্ত হয়। কিন্তু ইমরান নিজেই যেন এ কথা গোটা বিশ্বকে বিশ্বাস করাতে তৎপর হয়ে উঠেছেন।

সাংহাই সহযোগিতা সংগঠনের শিখর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল কিরঘিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে। সে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে। আমন্ত্রিত রাষ্ট্রপ্রধানরা একে একে ঢুকছিলেন সম্মেলন কক্ষে। যাঁরা আগে ঢুকেছেন, তাঁরা নিজেদের আসনের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন একে একে ঢুকতে থাকা অন্যদের। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী আচরণ দেখালেন সে পঙ‌্ক্তিতে। তাঁর নাম যখন ঘোষিত হল, শুধুমাত্র তখনই ক্ষণেকের জন্য দণ্ডবৎ হলেন ইমরান। ফের বসে পড়লেন। সম্মেলন কক্ষে অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রবেশকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানাতে ইমরান খান ভুলে গেলেন। অথবা অপ্রয়োজনীয় ভাবলেন।

পাক প্রধানমন্ত্রীর এই আচরণ অত্যন্ত সমালোচিত হয়েছে কূটনৈতিক শিবিরে। তবে এই প্রথম বার নয়, আগেও একাধিক বার নানা কূটনৈতিক অসৌজন্যের নজির ইমরান খানের সরকার তৈরি করে ফেলেছে। কখনও ওআইসি-র সম্মেলনে গিয়ে সৌদি রাজার সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। কখনও ভারত-পাক সম্পর্কের উন্নতির কথা মুখে বলেও ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত ইফতার পার্টিকে ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: বিশ্বনেতাদের সভায় অসৌজন্য, ফের সমালোচনার মুখে ইমরান

এই সব আচরণ বা ভঙ্গি কি অজ্ঞতাবশত? তা কী করে হওয়া সম্ভব! শিক্ষাজীবনে হোক বা পেশাদার ক্রিকেটের জীবনে ইমরান খান তো প্রায় বিশ্বনাগরিক হিসেবেই এ পৃথিবীকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। রাজনীতিতেও অনেকগুলো বছর কাটিয়ে ফেলেছেন তিনি। আন্তর্জাতিকতার আদবকায়দা তাঁর ঠিক মতো জানা নেই, এ তত্ত্ব কেউ মানবেন বলে মনে হয় না অতএব।

ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আঙিনায় যে বিস্তর বরফ জমে রয়েছে তা কিছুতেই গলছে না কেন, এ বার হয়তো অনেকেই আন্দাজ করতে পারবেন একটু একটু। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নানা ভাষণে শান্তির জন্য আকুতি এবং সদিচ্ছা উপচে পড়তে দেখা যায় মাঝে মাঝেই। কিন্তু তার পরেও বার বারই এমন কিছু ঘটে যায়, যাতে ভাষ্যের উষ্ণতা হারিয়ে যায়। আসলে কি আন্তরিকতার অভাব রয়েছে তা হলে? আসলে কি সেই সব অসৌজন্যই ফল্গুধারার মতো বইতে থাকে নিরন্তর, যে সব ধারা মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যেও চলে আসছে? ইমরান খান নিজেই কিন্তু তৈরি করছেন প্রশ্নচিহ্নগুলো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE