বন্ধের সমর্থনে মিছিলের পাশেই বাস, অটোর ভিড়। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
শুকিয়ে আসছে যেন রাজনীতির কয়েকটা ধারা। সুস্পষ্ট অভিমুখ ছিল, কিন্তু স্রোত টের পাওয়া গেল না। মহানগরের রাজপথে ‘আক্রোশ দিবসের’ ছবিটা অন্তত সে রকমই রইল।
মুদ্রা সঙ্কটকে ঘিরে এ রাজ্যে রাজনৈতিক অভিমুখ এখন মূলত দু’টি— সমর্থনে এবং বিরোধে। বিজেপি স্বাভাবিক ভাবেই মুদ্রারহিতকরণের সমর্থনে। কিন্তু এ রাজ্যের অন্য তিন প্রধান রাজনৈতিক ধারাই এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের বিরোধিতায়। তৃণমূল, কংগ্রেস ও বাম ভিন্ন ভিন্ন ধারা হলেও অভিমুখ আপাতত একই। সেই সুবাদেই একই দিনে পথে নামা, একই অভিমুখে হাঁটা, একই লক্ষ্যে এগনো। কিন্তু তিন রাজনৈতিক ধারা রাজপথ বেয়ে যখন অভিন্ন লক্ষ্যে প্রবাহিত হল, তখন ক্ষমতাসীনের বিপুল উপস্থিতির দু’পাশে দুই বিরোধীর অস্তিত্ব যেন নেহাৎ অকিঞ্চিৎকর এবং নগণ্য ঠেকল। এ রাজ্যে বাম আর কংগ্রেসের যাবতীয় দৈন্য প্রকট হয়ে উঠল।
গোড়া থেকেই বাংলার রাজনৈতিক বিন্যাস মূলত দ্বিমেরু। ব্যত্যয় কখনও-সখনও হয়েছে, তবে তা মূল প্রবণতা হয়ে ওঠেনি। ২০১৩ থেকে পরিস্থিতি অন্যতর হচ্ছিল যেন। পঞ্চায়েত, পুরসভা, লোকসভা, বিধানসভা— পর পর কয়েকটি নির্বাচনে ত্রিমুখী বা চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষী থেকেছে বাংলা। নির্বাচনোত্তর রাজনৈতিক বিন্যাসেও তিনটি বা চারটি পক্ষের অস্তিত্বের আভাস মিলছিল। পথে নেমে শক্তি প্রদর্শনের মাহেন্দ্রক্ষণ আসতেই স্পষ্ট হয়ে গেল, বাংলা আবার সেই দ্বিমেরু রাজনৈতিক বিন্যাসের পথেই।
বিজেপি পথে নামেনি সোমবার। কিন্তু ঘোষিত ভাবে আক্রোশ প্রদর্শন বা বন্ধের বিরোধিতা করেছে। দিল্লির মসনদ দখলে থাকার সুবাদে এবং সদ্যপ্রকাশিত উপনির্বাচনের ফলাফলে জনভিত্তি বৃদ্ধির আভাস পেয়ে এ রাজ্যে বিজেপির অস্তিত্ব আগের চেয়ে টগবগে অবশ্যই।
অন্য পক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল উপস্থিতি। রাজ্যে শুধু নয়, গোটা দেশেই বিরোধী রাজনীতির রাশ এখন অনেকটাই তাঁর হাতে। স্বাভাবিক ভাবেই বিপুল সমাগম সঙ্গী করে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী ভাসিয়ে দিলেন রাজপথ, ‘আক্রোশ’ প্রদর্শনের প্রবাহে তাঁর অস্তিত্ব হয়ে উঠল সর্বপ্লাবী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিশাতে হেঁটেছেন সোমবার, সেই দিকেই হেঁটেছে বাম এবং কংগ্রেসও। কিন্তু অস্তিত্ব বড়ই ক্ষীণকায় হয়ে ধরা দিয়েছে। অ-বিজেপি রাজনীতির সব স্রোত যেন আজ মূল ধারা তৃণমূলে মিশেছে। অন্যান্য ধারা যেন প্রাসঙ্গিক নয় আর।
বাংলার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বিন্যাসের কোনও আভাস দিল কি ‘আক্রোশ দিবস’? পরবর্তী যুদ্ধে কি হয় কৌরব, না হয় পাণ্ডব? অন্যান্য বিকল্প কি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে চলেছে ভারতের এ পূর্ব প্রান্তে? উত্তর দেবে আগামী সকালগুলোই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy