Advertisement
E-Paper

সম্মানের শর্ত

স্নাতকোত্তর স্তরে সরকারি খরচে পড়িতে হইলে পঠনান্তে তিন বৎসর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করিতে হইবে, এই শর্ত কি সেই সাযুজ্য নষ্ট করে? রোগীর প্রয়োজন মিটাইতে সরকার কি চিকিৎসকের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করিতেছে? আদালতে সে প্রশ্ন বিচারাধীন।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নবীন চিকিৎসক স্নাতকোত্তর পড়িতে ঢুকিবেন। সরকার দুয়ার আটকাইয়া দাঁড়াইয়াছে। আগে চুক্তি সই করিতে হইবে। পুরা তিনটি বৎসর গণ্ডগ্রামে রোগী দেখিতে হইবে। ইহা কি অন্যায় নহে? পরীক্ষায় পাশ দিয়াও নিস্তার নাই, নূতন নূতন শর্ত নির্মাণ? ক্রুদ্ধ ডাক্তাররা আদালতের দ্বারস্থ হইয়াছেন, মামলা এখন কলকাতা হাইকোর্টে। ক্ষুব্ধ সরকারি চিকিৎসকরাও। সরকার নূতন কল বসাইয়া রোজ উপস্থিতি মাপিতেছে। খাতায় সই করিবার প্রথা বাতিল, আসিতে-যাইতে চৌম্বক কার্ড। ইহাও কি অসম্মান নহে? প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু রাজ্যবাসীর চিকিৎসা পাইবার অধিকারও বড় প্রশ্ন। সরকারি চিকিৎসকদের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধিকারকে নিশ্চয়ই মর্যাদা দিতে হইবে। হাসপাতালের ব্যবস্থায় চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তেরই সর্বাধিক গুরুত্ব। আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসার পথে বাধা সৃষ্টি করিলে তাহাতে চিকিৎসার মান ও কার্যকারিতা কমিবেই। কিন্তু সরকারি চিকিৎসকেরা নৈতিক দায় ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা রক্ষা করিতেছেন কি না, তাহা নিশ্চিত করাও সরকারের কাজ। সর্বোপরি, রোগীর চাহিদার সহিত চিকিৎসকের দাবির সাযুজ্য করিবার কঠিন কর্তব্য সরকারের।

স্নাতকোত্তর স্তরে সরকারি খরচে পড়িতে হইলে পঠনান্তে তিন বৎসর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করিতে হইবে, এই শর্ত কি সেই সাযুজ্য নষ্ট করে? রোগীর প্রয়োজন মিটাইতে সরকার কি চিকিৎসকের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করিতেছে? আদালতে সে প্রশ্ন বিচারাধীন। তবে বিষয়টি লইয়া নানা রাজ্যে কম মামলা হয় নাই। সুপ্রিম কোর্টেও মামলা উঠিয়াছে। তৎসত্ত্বেও বর্তমানে প্রায় সব কয়টি রাজ্য দুই কি তিন বৎসর গ্রামীণ এলাকায় পরিষেবার শর্তে স্নাতকোত্তরে ভর্তি লইতেছে। যে চিকিৎসকরা শর্ত লঙ্ঘন করিয়াছেন, তাঁহাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও লইয়াছে রাজ্য সরকারগুলি। অতএব পশ্চিমবঙ্গেই যে স্বাস্থ্যকর্তারা বিশেষ অন্যায় করিলেন, এমন নহে। নৈতিকতার দৃষ্টিতেও এই শর্তের সপক্ষে যুক্তি আছে। স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল শিক্ষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্রতি চিকিৎসকের জন্য তিন বৎসরে অন্তত ত্রিশ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। ইহা জনগণের অর্থ। যদি সাধারণ মানুষ তাহার বিনিময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরিষেবা না পান, তাহা হইলে সেই ভর্তুকি ব্যর্থ হইয়া যায় না কি? শর্ত অন্যায় নহে। যে ছাত্রেরা তাহা মানিতে নারাজ, তাঁহারা নিজ ব্যয়ে পড়িতে পারেন।

চিকিৎসকরা প্রশ্ন তুলিয়াছেন, কেবল সময় মাপিয়া কিংবা রোগীর সংখ্যা গনিয়া কি চিকিৎসকের মান বিচার করা সম্ভব? অধ্যাপক চিকিৎসকদের উপর কেন ভরসা নাই স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের? ইহার উত্তর, মাপিবার উদ্দেশ্য কেবল কর্মবিমুখের শাস্তিবিধান নহে। মানবসম্পদের বণ্টন সুষম হইল কি না, জানা প্রয়োজন। কোন চিকিৎসকরা তৎপর, কী করিয়া অল্প সময়ে উৎকৃষ্ট পরিষেবা তাঁহারা দিতে সক্ষম, তাহা বুঝিতেও পরিমাপ প্রয়োজন। চিকিৎসক যদি কর্মবিমুখ না হন, তবে ইহাতে তাঁহার ক্ষোভ হইবে কেন? সমস্যা অন্য। নেতাদের দীর্ঘ স্বজনপোষণে স্বাস্থ্য-প্রশাসন এমনই গুলাইয়া গিয়াছে, যে স্বচ্ছ দৃষ্টিতে পরস্পরকে দেখিতে দুই পক্ষই অক্ষম। প্রশাসক ও চিকিৎসকের মধ্যে আস্থা না ফিরিলে সংস্কারের যে কোনও উদ্যোগ ‘সন্দেহজনক’ মনে হইতে বাধ্য।

Doctor Responsibility
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy