Advertisement
E-Paper

সমুদ্রমন্থন

সমুদ্রমন্থনের কালে সুপ্রিম কোর্ট ছিল না, মোহিনীরূপী বিষ্ণুর ছলনায় অসুরদের ভুলাইয়া অমৃতকলস বাগাইবার সময় দেবতাদের অনিদ্র আদালতের শ্যেনদৃষ্টির মোকাবিলা করিতে হয় নাই।

সমুদ্রমন্থন

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৮ ০০:৩০

ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারা পুরাণের দোহাই পাড়িয়া বিস্তর আবোলতাবোল বকেন, কিন্তু ভাল করিয়া পুরাণ পড়েন না। পড়িলে, আজ তাঁহাদের কর্নাটক কেলেঙ্কারি লইয়া এমন বিপাকে পড়িতে হইত না। ‘সরকার আমরাই গড়িব’ শীর্ষক যাত্রাপালাখানির অন্তিম দৃশ্যে ইয়েদুরাপ্পার ক্রন্দন শেষে যবনিকা পতনের পরে রাহুল গাঁধী সহ বিবিধ মহলের ধিক্কার ও ব্যঙ্গবিদ্রুপের মুখে সম্পূর্ণ বেসামাল প্রলাপ না বকিয়া নরেন্দ্র মোদীর পারিষদরা সমালোচকদের সমুদ্রমন্থন বৃত্তান্ত পাঠ করিবার সদুপদেশ দিতে পারিতেন। অমৃতের সন্ধানে দেবতা ও অসুররা সমুদ্র মন্থন করিয়াছিলেন। এ ঘোর কলিতে শাসনক্ষমতাই শ্রেষ্ঠ অমৃত। রাজনৈতিক দল তাহার খোঁজে ভোটসমুদ্র মন্থন করিয়া থাকে। ভয়ানক রকমের প্রবল মন্থন, এমনই প্রবল যে বাসুকিও বোধ করি হাল ছাড়িয়া দিতেন! সুতরাং কিঞ্চিৎ লেখাপড়ার অভ্যাস থাকিলে মোদী-শাহেরা বলিতে পারিতেন— অমৃতকলসের দখল পাইতে দেবতারাও ছলের আশ্রয় লইয়াছিলেন, তাঁহারা সনাতন ভারতের ঐতিহ্য বহন করিতেছেন। শেষরক্ষা হইল না, তাহা দুঃখের, কিন্তু লজ্জার নহে। লজ্জা শব্দটি অভিধান হইতে মুছিয়া ফেলিতে না পারিলে অমৃতের স্বপ্ন দেখিয়া লাভ কী?

সমুদ্রমন্থনের কালে সুপ্রিম কোর্ট ছিল না, মোহিনীরূপী বিষ্ণুর ছলনায় অসুরদের ভুলাইয়া অমৃতকলস বাগাইবার সময় দেবতাদের অনিদ্র আদালতের শ্যেনদৃষ্টির মোকাবিলা করিতে হয় নাই। কর্নাটকের নবপুরাণকথায় যথার্থ নায়কের ভূমিকায় যদি কাহারও উজ্জ্বল অভ্যুদয় ঘটিয়া থাকে, তাহার নাম অবশ্যই সুপ্রিম কোর্ট। মোদীর ঘনিষ্ঠ রাজ্যপাল বজুভাই বালা ‘সংখ্যালঘু’ আসনের অধিকারী ইয়েদুরাপ্পাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাইয়া আস্থা ভোট চাহিবার জন্য সুদীর্ঘ পনেরো দিন সময় দিবার পরে কংগ্রেস ও জেডিএস শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হইবার মাহেন্দ্রক্ষণ হইতে সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে সমগ্র পর্বটি পরিচালনা করিয়াছে, তাহা নাগরিককে গর্বিত করিবে। শাসনকাঠামোর বিভিন্ন অংশের মধ্যে ক্ষমতা বিভাজনের সাংবিধানিক অনুজ্ঞার মর্যাদা রাখিয়া বিচারপতিরা রাজ্যপালের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেন নাই, কিন্তু অবিলম্বে আস্থা ভোটের নির্দেশ দিয়া এবং সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া অবধি কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিষিদ্ধ করিয়া সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করিয়াছেন। প্রোটেম স্পিকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেন নাই, কিন্তু আস্থা ভোটের প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু ভাবে চলিবার জন্য বিশদ নির্দেশিকা জারি করিয়াছেন। ইয়েদুরাপ্পা এবং তাঁহার অভিভাবকবৃন্দের আত্মগ্লানির কারণ নাই— এমন সজাগ ও বিচক্ষণ আদালত থাকিলে শ্রীবিষ্ণুও হার মানিতেন।

সজাগ তৎপরতার নজির সৃষ্টি করিয়াছে কংগ্রেসও। দ্বিতীয় ইউপিএ জমানা হইতে স্থবিরতার অভিযোগ এই দলকে ক্রমাগত বিড়ম্বিত করিয়া আসিয়াছে, বিরোধী আসনে বসিয়া তাহারা বেশ কিছু কাল যেন দ্বিগুণ শ্লথতার শিকার হইয়াছিল। গোয়ায় সরকার গঠনের সুযোগ দলীয় সেনাপতিরা যে ভাবে প্রতিপক্ষের হাতে তুলিয়া দিয়াছিলেন তাহাকে অবিশ্বাস্য বলিলে অত্যুক্তি হয় না। কর্নাটকে দেখা গেল অন্য মূর্তি। ছলে বলে কৌশলে গদি দখলের অনৈতিক অভিযানকে ব্যর্থ করিতে বৈধ গণতান্ত্রিক পথে আইন-আদালতের সদ্ব্যবহার করিয়া শাসনতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষায় বিরোধী দলের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হইতে পারে, কর্নাটক তাহার ঐতিহাসিক নিদর্শন হইয়া থাকিবে। অতঃপর ইতিহাসের পরবর্তী অধ্যায়। সেই অধ্যায়ও সমান গৌরবের হইবে, নাগরিকরা তেমন আশা করিবেন। কিন্তু আশা এবং বাস্তব এক হইবে, তাহার নিশ্চয়তা নাই। ক্ষমতা অতি বিষম বস্তু। বাঙালি কবি বলিতেন, কে জানে গরল কিনা প্রকৃত পানীয়, অমৃতই বিষ।

B. S. Yeddyurappa Karnataka BJP Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy