Advertisement
E-Paper

জমি ও কারখানার শুধু ভারসাম্য নয়, দরকার মেলবন্ধনও

সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘিরে যখন সিঙ্গুর জুড়ে আনন্দের কলরোল, শাসক শিবিরে বিজয়ের উল্লাস, বাম শিবিরে শ্মশানের নিস্তব্ধতা— সেই সময়েও কেউ কেউ একান্ত আলোচনায় আশঙ্কাটা প্রকাশ করছিলেন। এ রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনায় বড় ধাক্কা আসবে না তো? শিল্পের জন্য জমি পাওয়া যাবে তো?

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪২
পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় অংশ জমির আবেগকে স্বীকার করেও শিল্প চায়।

পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় অংশ জমির আবেগকে স্বীকার করেও শিল্প চায়।

সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘিরে যখন সিঙ্গুর জুড়ে আনন্দের কলরোল, শাসক শিবিরে বিজয়ের উল্লাস, বাম শিবিরে শ্মশানের নিস্তব্ধতা— সেই সময়েও কেউ কেউ একান্ত আলোচনায় আশঙ্কাটা প্রকাশ করছিলেন। এ রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনায় বড় ধাক্কা আসবে না তো? শিল্পের জন্য জমি পাওয়া যাবে তো?

ঠিক পরের দিনই, বৃহস্পতিবার প্রথম যে উত্তরটা এল, শিল্পমুখিনতার নিরিখে তা উদ্বেগজনক। বর্ধমানে যে মিষ্টি হাব তৈরির ঘোষণা কিছু দিন আগে করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং, অঙ্কুরোদ্গমের আগেই তার বিনাশের ঘোষণাও করলেন তিনি নিজেই। অধিগৃহীত যে জমির উপর হাব তৈরির পরিকল্পনা ছিল, সেখানে কিছু অনিচ্ছুক মানুষ সিঙ্গুর-রায়ের প্রসঙ্গ তুলে এ বার নতুন করে ক্ষোভ জানিয়েছেন। অতএব, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ওই এলাকায় মিষ্টি হাব প্রকল্প স্থগিত।

কোনও একটা ঘটনা থেকে প্রবণতার সম্ভাবনা অনুমান করা অথবা কোনও সিদ্ধান্তের পথে এগনো ঠিক নয়, এ কথা সত্য। এ কথাও বা অস্বীকার করা যায় কেমন করে, ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘের মধ্যে আশঙ্কার কারণ দেখবেই। এই রাজ্য দীর্ঘ দিন ধরে শিল্পবঞ্চিত। কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ক্রমাগত সঙ্কুচিত, জমির উপরেই নির্ভরশীল থেকে সংসার প্রতিপালন ক্রমশ অসম্ভব হচ্ছে, মেধা থেকে শ্রম সবেরই বাধ্যতামূলক চালান হয়ে যাচ্ছে রাজ্যের বাইরে— এই অবস্থায় নতুন করে ভাবার প্রয়োজন।

আবারও বলছি, সিঙ্গুর রায় ঐতিহাসিক। সেই রায়ে সংখ্যায় অল্পেরও কথা শোনার কথা বলা হয়েছে, জমি ঘিরে আবেগ-ঐতিহ্য-মানসকে অস্বীকার করে সরকারি বুলডোজারের গগনস্পর্শী স্পর্ধার বিরুদ্ধে আইনি হাতুড়ির আঘাত আছে। সেটা সমাজের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ দিক। সিঙ্গুর রায় তাকে মর্যাদা দিয়েছে। স্বাগত।

কিন্তু, যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন, এটা সমাজের একটা দিক। আরও একটা দিক আছে। উন্নয়নের স্বপ্ন, কর্মসংস্থানের আকুতি, সচ্ছলতার আকাঙ্ক্ষা, স্ব-ভূমির সঙ্গে জুড়ে থাকার ইচ্ছা, বর্ণময় প্রতিবেশের আশা চোখে নিয়ে এই পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় অংশ জমির আবেগকে স্বীকার করেও শিল্প চায়। অনিচ্ছুক জমিদাতা যেমন সমাজের বাস্তব একটা দিক, ইচ্ছুক জমিদাতাও অন্য দিকের বাস্তব। দুই দিককেই সম্মান জানানো দরকার।

প্রশ্নটা হচ্ছে, আমরা কি সেই পরিণত দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারব? জমি ও কারখানা এই দুয়ের শুধু ভারসাম্যই নয়, একটা মেলবন্ধনও দরকার— এটা বোঝার মতো দায়িত্ববান হতে পারব? কঠিন পরীক্ষার সামনে সামগ্রিক জাতি হিসাবে আমরা।

পরীক্ষা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তিনি পারবেন বহু কাঙ্ক্ষিত সেই মেলবন্ধন ঘটাতে? ইতিহাস বলবে, তিনি কতটা সফল হলেন, কতটা না।

ইতিহাস এও বলবে, সিঙ্গুর রায়ের পর প্রথম ‘শহিদ’-এর নাম, বর্ধমানের মিষ্টি হাব।

Anjan Bandyopadhyay Industries in West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy