Advertisement
E-Paper

সুস্থিতি আসিবে কি

কোন পণ্যের ক্ষেত্রে করের হার কী হইবে, কী ভাবে তাহার হিসাব হইবে— সর্ব বিষয়ে এমনই ধোঁয়াশা তৈরি হইল যে অর্থনীতির চলনের হদিশ রাখাই দুষ্কর হইল।

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৫

ভারতীয় অর্থনীতি যখন ২০১৭ সালে প্রবেশ করিয়াছিল, তখন তাহার ধুম জ্বর। ডিমনিটাইজেশন নামক অস্ত্রের আঘাতে তাহার সর্বাঙ্গে ক্ষত। সংগঠিত ক্ষেত্র ধুঁকিতেছে, অসংগঠিত ক্ষেত্র ধরাশায়ী, বাজারে চাহিদা নাই, কর্মসংস্থানও নাই। বৎসর গড়াইল, জানা গেল, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার গত তিন বৎসরের মধ্যে সর্ব নিম্ন স্তরে নামিয়া আসিয়াছে। এক বৎসরের মেয়াদে ডিমনিটাইজেশনের ধাক্কা সামলাইয়া উঠাই যথেষ্ট কঠিন কাজ ছিল। জুলাই মাসে ভারতের ঘাড়ে চাপিল জিএসটি। কোন পণ্যের ক্ষেত্রে করের হার কী হইবে, কী ভাবে তাহার হিসাব হইবে— সর্ব বিষয়ে এমনই ধোঁয়াশা তৈরি হইল যে অর্থনীতির চলনের হদিশ রাখাই দুষ্কর হইল। তবুও, বৎসরের শেষে আভাস মিলিতেছে, অর্থনীতির নিম্ন গতি এই বার শেষ হইতেছে, হয়তো অতঃপর বৃদ্ধির হার ফের ঊর্ধ্বমুখী হইবে। ২০১৭ ফুরাইয়াছে, তাহার দেনাপাওনার হিসাবও চুকিবে। এই বেলায় একটি কথা স্পষ্ট করিয়া রাখা বিধেয়— যদিও ডিমনিটাইজেশন এবং জিএসটি, উভয়ই অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলিয়াছে, দুইটি ঘটনা কিন্তু এক গোত্রের নহে। নোট বাতিলের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অবান্তর এবং অপ্রয়োজনীয় ছিল। জিএসটি একটি জরুরি সংস্কার। তাহার মূল ত্রুটি ছিল প্রয়োগের ক্ষেত্রে। যথেষ্ট বিবেচনা না করিয়া, যথেষ্ট সময় না দিয়া অর্থনীতির ঘাড়ে সংস্কারটি চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছিল। সেই ভুল এখন অতীত। কিন্তু, ভবিষ্যতে কেহ জিএসটি-র যুক্তিতে ডিমনিটাইজেশনের যাথার্থ্য প্রমাণ করিতে চাহিলে এই ফারাকটির কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়াই বিধেয়।

অর্থনীতির পক্ষে ২০১৭ সাল ছিল অস্থিরতার বৎসর। ২০১৮ কি সুস্থিতি আনিবে? কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলিতেছে। প্রথমত, বিনিয়োগের যে স্রোত একেবারেই থামিয়া গিয়াছিল, তাহা খানিক হইলেও ফিরিয়াছে। দেউলিয়া আইন তৈরি হওয়াও একটি ইতিবাচক সংস্কার। রফতানির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলিতেছে, এই ক্ষেত্রে জিএসটি-র ধাক্কাটি যত জোরে লাগিবে বলিয়া আশঙ্কা ছিল, তাহা আংশিক ভাবে ভুল প্রমাণিত হইয়াছে। অন্য দিকে আবার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বা়ড়িতেছে। কাজেই, দাঁড়িপাল্লা কোন দিকে ঝুঁকিবে, নিশ্চিত করিয়া বলা কঠিন। কিন্তু, নোট বাতিলের ন্যায় অপরিণামদর্শিতা অথবা জিএসটি-র ভ্রান্ত সূচনার ন্যায় হঠকারী সিদ্ধান্ত যদি এড়াইয়া চলা যায়, তবে খুব বড় ধাক্কার সম্ভাবনা তেমন প্রকট নয় বলিয়াই আশা করা যাইতে পারে। তবে, ৩৬৫ দিন দীর্ঘ সময়। অর্থনীতির অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে দীর্ঘতর। এবং, লোকসভা নির্বাচন আসিতেছে। রাজনীতির তাগিদ যদি অর্থনীতির কাণ্ডজ্ঞানকে লইয়া যায়, তবে কী হইবে, তাহা জানে শ্যামলাল।

‘ভক্ত’দের পক্ষে অর্থনীতির ময়দানে গত বৎসর খুব ভাল সময় যায় নাই। তাঁহাদের খড়কুটা বলিতে ছিল সেনসেক্সের ঊর্ধ্বগতি, ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে ভারতের উন্নতি, এবং মুডিজ-এর ক্রেডিট রেটিং-এ এক ধাপ উঠিয়া আসা। কোনও ঘটনাই অকিঞ্চিৎকর নহে। এই সূচকগুলিতে স্পষ্ট, ভারতীয় অর্থনীতির উপর লগ্নিকারীদের আস্থা ফিরিতেছে। অতি সুসংবাদ। কিন্তু, এই সূচকগুলিকে দেখাইয়া যদি অর্থনীতির উন্নতির গল্প ফাঁদিয়া বসা হয়, তবে তাহা মারাত্মক। গুজরাত বিধানসভার ফলাফল বলিতেছে, ব্যাবসার জগতে ইতিবাচক হাওয়া সাধারণ মানুষের জানালা গলিয়া ঢোকে না। তাহার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিতে হয়। অর্থনৈতিক উন্নতিকে সর্বজনীন করিয়া তুলিতে যত্নবান হইতে হয়। ২০১৮ সালে অর্থনীতিতে সুস্থিতি আসুক, এবং তাহার সুফল সাধারণ মানুষের ঘরে ঢুকুক। নচেৎ, অর্থনীতির হাল ফিরিলেও রামা কৈবর্তের কিছু আসিয়া যাইবে না।

Demonetisation GST Indian Economy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy