Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু

লেখক শ্রীঅশ্বঘোষ জানিয়েছেন, ‘হরি ঘোষের গোয়াল’ প্রবাদটির জন্ম নবদ্বীপে (‘ন্যায়শাস্ত্র পড়া হত হরি ঘোষের গোয়ালে’, রবিবাসরীয়, ২২-১)।

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০

হরি ঘোষের গোয়াল

লেখক শ্রীঅশ্বঘোষ জানিয়েছেন, ‘হরি ঘোষের গোয়াল’ প্রবাদটির জন্ম নবদ্বীপে (‘ন্যায়শাস্ত্র পড়া হত হরি ঘোষের গোয়ালে’, রবিবাসরীয়, ২২-১)। বলেছেন, নবদ্বীপের হরি ঘোষ নামের এক জমিদার তাঁরই গ্রাম নিবাসী অনতিসম্বল শ্রুতকীর্তি ন্যায় শাস্ত্রজ্ঞ রঘুনাথ শিরোমণিকে তাঁর বাড়ির গোয়ালে টোল খুলে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। শ্রীঅশ্বঘোষ বলছেন, প্রবাদটি বাংলায় এখান থেকেই উঠে এসেছে।

কিন্তু রাধারমণ মিত্র (কলিকাতা দর্পণ, প্রথম পর্ব, সুবর্ণরেখা, চতুর্থ মুদ্রণ ১৯৯৭, পৃ: ৭৫-৭৬) জানাচ্ছেন, হরি ঘোষের নিবাস কলকাতায় ছিল। চাকরিসূত্রে মুঙ্গের দুর্গের দেওয়ান হিসেবে তিনি বিপুল অর্থ উপার্জন করেছিলেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি কলকাতায় বাড়ি করেন। ‘বহু অনাথ, দুঃখী, নিঃসম্বল লোককে, ছাত্র ও আত্মীয়স্বজনকে বাড়িতে আশ্রয় ও অন্নবস্ত্র দিয়ে পুষতেন বলে লোকে তাঁর বাড়িকে ‘হরি ঘোষের গোয়াল’ বলত।’ তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তটির নাম এখনও হরি ঘোষ স্ট্রিট।

এই দুই তথ্যের ভেতর কোনটি আমরা গ্রহণ করব?

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। গড়িয়া

॥ ২ ॥

শ্রীঅশ্বঘোষ লিখেছেন, ‘হরি ঘোষ মধ্যযুগের নবদ্বীপে এক গ্রাম্য জমিদার। রঘুনাথ সেই গ্রামেরই দরিদ্র এক ব্রাহ্মণ সন্তান।’ এখানে গ্রামের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে লেখকের মতে, রঘুনাথ নবদ্বীপের কোনও গ্রামের সন্তান। অর্থাৎ আদতে নবদ্বীপের লোক। তথ্যটা ঠিক কি?

আমরা জানি, রঘুনাথ সিলেট (বাংলাদেশ) জেলার পঞ্চখণ্ড নামক স্থানে পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে (আনুমানিক ১৪৭২-৭৩ সালে) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম গোবিন্দ চক্রবর্তী এবং মাতার নাম সীতাদেবী। অল্প বয়েসেই রঘুনাথ পিতৃহীন হন। রঘুনাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রঘুপতি সিলেট জেলার ইটার রাজা সুবিদ নারায়ণের কন্যাকে মাতার অমতে বিবাহ করেন। এই কন্যা খোঁড়া ছিলেন।

এই বিবাহে ক্রুদ্ধ হয়ে মাতা সীতাদেবী কনিষ্ঠ পুত্র রঘুনাথকে নিয়ে জন্মভূমি সিলেট ত্যাগ করে নবদ্বীপ চলে যান। সেখানে বিখ্যাত পণ্ডিত বাসুদেব সার্বভৌম মহাশয়ের দয়ায় তাঁর বাড়িতে আশ্রয় লাভ করেন। সার্বভৌম মহাশয়ের টোলেই রঘুনাথের বিদ্যাশিক্ষা আরম্ভ হয়। কিছু দিনের মধ্যেই সার্বভৌম মহাশয়ের পরামর্শে রঘুনাথ মিথিলায় গিয়ে পণ্ডিতশ্রেষ্ঠ পক্ষীধর মিশ্রের কাছে ন্যায়শাস্ত্র পড়া আরম্ভ করেন। অল্পকাল পরেই শিরোমণি উপাধি লাভ করেন এবং গুরু পক্ষীধর মিশ্রকে শাস্ত্রীয় বিচারে পরাজিত করে ভারত বিখ্যাত নৈয়ায়িক রঘুনাথ শিরোমণি মিথিলাতেও নবদ্বীপের প্রাধান্য স্থাপন করেন।

মিথিলার পাঠ শেষ করে রঘুনাথ শিরোমণি নবদ্বীপে ফিরে আসেন এবং হরি ঘোষ মহাশয়ের সাহায্যে নবদ্বীপে চতুষ্পাঠী স্থাপন করে অধ্যাপনায় রত হন।

প্রসঙ্গত, সেই যুগে মিথিলায় পড়াশোনা করলেও ওখান থেকে কোনও পুস্তক নিয়ে আসা যেত না। রঘুনাথ সমগ্র ন্যায়শাস্ত্র কণ্ঠস্থ করে নিয়ে আসেন এবং আপন স্মৃতিশক্তির সাহায্যে ন্যায় শাস্ত্রের গ্রন্থ রচনা করেন। সে যুগে নবদ্বীপে ন্যায়ের উপাধি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা
ছিল না। রঘুনাথ নবদ্বীপ থেকে ন্যায়ের উপাধি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

ষোড়শ শতাব্দীর কোনও এক সময় ভারত বিখ্যাত শ্রীহট্টের পণ্ডিত রঘুনাথ শিরোমণি দেহরক্ষা করেন।

অহীন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য। কলকাতা-১৩৪

• প্রতিবেদকের জবাব: সঞ্জীববাবুর চিঠির উত্তরে জানাই, দুটিই সমান সত্য। কলকাতার হরি ঘোষ স্ট্রিটের হরি ঘোষের বাড়িতে বহু অনাথ, দুঃখী, নিঃসম্বল লোক থাকত। তখন কলকাতায় অনেক দানশীল লোকের বাড়িতেই এমন লোকেরা থাকতেন। ব্যাপারটিকে ঠাট্টা করে, রূপকার্থে গোয়াল বলা হতেই পারে। কিন্তু নবদ্বীপে গোয়াল একেবারে আক্ষরিক অর্থেই। একটি প্রবাদে দুটি স্মৃতি থেকে যেতেই পারে, সেটি বিচিত্র নয়।

অহীন্দ্রবাবু একদাখ্যাত একটি প্রাচীন সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু রঘুনাথ শিরোমণি যে শ্রীহট্টের রঘুপতির ভাই, এ নিয়ে প্রমাণ মেলেনি। শ্রীহট্টের বিখ্যাত পণ্ডিত পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ এ কথা মানেননি। শ্রীহট্টের রাজা সুবিদনারায়ণ যে আদপে রঘুনাথ শিরোমণির সমকালীন নন, এ নিয়ে ফণিভূষণ তর্কবাগীশ তাঁর ‘ন্যায়পরিচয়’ বইয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক ড্যানিয়েল ইঙ্গলসও তাঁর ‘মেটিরিয়াল্স ফর দ্য স্টাডি অব নব্যন্যায় লজিক’ বইয়ে রঘুনাথের জন্মস্থান হিসেবে নবদ্বীপের কথাই লিখেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy