Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

ছাত্রছাত্রীরা শুধু মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের এক মাস আগেই পড়াশোনা করবে আর তাই ওই সময়টুকু মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত থাকবে— এটা কি যুক্তিযুক্ত?

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

মাইক ছাড়া হয় না?

দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকায় মাইকের দাপট ভয়াবহ রকম বেড়ে চলেছে। ল্যাম্পপোস্টে-ল্যাম্পপোস্টে চোঙা। আজ স্বাস্থ্যশিবির, কাল রক্তদান শিবির,পরশু ফুটবল-ক্রিকেট। ভাল। কিন্তু সবেতেই মাইকের এত উৎপাত কেন? রক্তদান নিঃসন্দেহে ভাল। খেলাধুলোও খুব ভাল। কিন্তু তার জন্য গোটা এলাকা জুড়ে ১০টা ল্যাম্পপোস্টে ২০টা চোঙা ফিট করে। অসংখ্য বার কাউন্সিলর, এমএলএ, পুরপ্রধানদের নাম ঘোষণা করা মোটেই শোভনীয় নয়। আর, ‘স্বাস্থ্যশিবির’, ‘রক্তদান’ করতে গিয়ে যদি তারস্বরে মাইক বাজিয়ে অন্যদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তা হলে তো উদ্দেশ্যটাই মাঠে মারা যায়।

ছাত্রছাত্রীরা শুধু মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের এক মাস আগেই পড়াশোনা করবে আর তাই ওই সময়টুকু মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত থাকবে— এটা কি যুক্তিযুক্ত? পড়াশোনা তো সারা বছর ধরেই করতে হয়। অনেককেই দেখেছি, মাইকের শব্দে মনঃসংযোগ করতে পারছে না। খানিকক্ষণ পড়ার পর মনে রাখতে পারছে না। তবু চোঙা বেজেই চলেছে।

প্রসঙ্গত, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ পরিবেশের ক্ষতি করায় তা বন্ধ করার জন্য সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা। দোকানে-বাজারে ৪০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দেওয়া-নেওয়া এখানে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লুকিয়েও কেউ তা ব্যবহার করতে সাহস পাচ্ছে না এখানে। আসুন না, আমরা দক্ষিণ দমদম থেকেই শব্দদূষণ বিরোধী অভিযান শুরু করি।

শ্যামল দাশগুপ্ত কলকাতা-৮৯

গবেষণা ও বাস্তব

ঠিকই বলেছেন বিকাশ সিংহ, ‘মেধা আছে, বুঝবে কে’ (২৮-৭)| প্রধানত দুই ধরনের ভারতীয় ছাত্র গবেষণার পথে আসে| প্রথম হচ্ছে ভাল, মেধাবী ছাত্র, যে ছাত্রাবস্থা থেকেই রিসার্চের কথা ভেবে এসেছে| অত্যন্ত যুক্তিসংগত কারণেই সে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে, যে যায় সে খুব একটা আসে না ফিরে। আমরা রাগ করে ‘লোভী’, ‘ব্রেন ড্রেন’, কত কী বলি, আর সে দেশে বেড়াতে এলে তার এনআরআই চাকচিক্যে আপ্লুত-ঈর্ষান্বিত হই| যে মেধাবী দুর্ভাগ্যক্রমে বিদেশে যেতে পারে না, সে অগত্যা দেশে গবেষণায় নিযুক্ত হয়ে অচিরে হতাশা ও হীনম্মন্যতার শিকার হয়|

দ্বিতীয় গোষ্ঠী হল মধ্যমানের ছাত্র যারা রিসার্চ-টিসার্চ নিয়ে ভাবেনি কখনও| ভদ্র-অভদ্র কোনও রকম চাকরি না পেয়ে এরা গবেষণা করতে ঢুকে পড়ে, আর শিক্ষকরাও তাদের পেয়ে খুশি, বাজার-হাট সবই করানো যায় তাদের দিয়ে| মাসের পর মাস ফান্ড আসে না| গাইডের ফরমায়েশ খেটে আর তার পেছনে ঘুরে ঘুরে ‘তবু দিন কাটে, দিন কেটে যায়, আশায় আশায়|’

ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পাবার পর রেডিয়ো সাক্ষাৎকারে শম্ভু মিত্র বলেছিলেন, ‘জানবে, পেটে গামছা বেঁধে শিল্প করা যায় না।’

সুরঞ্জন চৌধুরী কলকাতা-৯৭

নজরদারি

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী একবার অতি খেদের সঙ্গে বলেছিলেন, সরকার এক টাকা বরাদ্দ করলে গরিবের হাতে পৌঁছয় পনেরো পয়সা। এই প্রযুক্তির যুগেও সরকারি পরিষেবা, বিভিন্ন ভাতা, অনুদান প্রভৃতির অনেকটা সরাসরি উপভোক্তার কাছে না পৌঁছে রাজনৈতিক পদের মাধ্যমে বিলি বণ্টন হয়। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, অফিস-কাছারি প্রভৃতি নির্মাণ সম্পন্ন হয় রাজনৈতিক পদের আনুকূল্যে। দুর্নীতি থেকে পক্ষপাত, নানান ধরনের সমস্যা। বঞ্চনা ও গুণগত মানের অবনমন তো রয়েইছে। বিভিন্ন শংসাপত্র, মিউটেশন, জলের লাইন, হোল্ডিং নাম্বার, বাড়ির প্ল্যান পাস, ট্রান্সফার, প্রোমোশন ইত্যাদি যে সমস্ত ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পদাধিকারের অনুমতি প্রয়োজন সেখানেই ঢালাও দুর্নীতি।

রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা অবশ্যই রয়েছে। তাঁরা পরিকল্পনা দিন, নজরদারি করুন। সরকারি কর্মচারীরাও সবাই সাধু নন। তাঁদের উপর নজরদারি একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজনে অভিযোগ দায়ের করুন। কিন্তু তাঁদের পানিশমেন্টের ভয় রয়েছে। কাজেই নিয়মবহির্ভূত কাজ বা বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে কাজ করা তাঁদের পক্ষে তুলনায় কঠিন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি থাকলে তো আরও সতর্ক হয়ে কাজ করবেন। কিন্তু সরকারি কাজ বাস্তবায়নের ভার সরকারি কর্মচারীদের উপরই ন্যস্ত থাকুক। এতে যেমন কাজের স্বচ্ছতা বজায় থাকবে তেমনি রাজনৈতিক লুম্পেন ও অর্থলোভী নেতারা আকর্ষণ হারিয়ে নিজেরাই সরে পড়বেন।

কৌশিক সরকার রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া

আম রহস্য

আমার লেখা একটি চিঠির (‘আম-কাসুন্দি’, ১১-৭) প্রেক্ষাপটে সুভাষ ঘোষ হাজরার ‘ফজলি-কথা’ শীর্ষক চিঠি পড়লাম (১৯-৭)। অতি বিখ্যাত স্থান বা বস্তুর নামকরণের ক্ষেত্রে প্রায়শই একাধিক ব্যাখ্যা পরিলক্ষিত হয়। এগুলি প্রায় সবই জনশ্রুতিভিত্তিক। এই জনশ্রুতিকে ভেদ করে ঠিক ইতিহাস তুলে আনা প্রচুর গবেষণাভিত্তিক এক দুরূহ বিষয়। ‘ফজলি’ নামকরণের ক্ষেত্রেও সুভাষ ঘোষ হাজরা তেমনই আরও এক জনশ্রুতি শুনিয়েছেন। তাঁর কলমের রেশ ধরেই আমি আরও একটি জনশ্রুতি পেশ করলাম।

বনবাসের শুরুতে রামচন্দ্র প্রথমে গিয়েছিলেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির দেশ মিথিলায়। তার পর তিনি যান অঙ্গদেশে। মাঝে পড়ে পুণ্ড্রদেশ বা মালদহ। সেখানকার নদী মহানন্দার উত্তরে তালভূমি। যা ছিল হনুমানের নিবাস। হনুমান রাম-সীতা-লক্ষ্মণকে আম খাওয়াতে নিয়ে যান কালিন্দী নদী তীরে এক আমবাগানে। আমের স্বাদে-গন্ধে অভিভূত রামচন্দ্র ফলকেলি শুরু করে দেন। আমের পেল্লায় আকার দেখে তাঁর বিস্ময়ের অবধি ছিল না। সেই আমই ছিল ‘ফজলি’। আমকেলির পরেই সেই আমগাছে ভরা অঞ্চলের নাম হয়ে যায় ‘রামকেলি’।

রামায়ণের মতোই অনুরূপ এক কিংবদন্তি মহাভারতকে আশ্রয় করেও আছে। পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাসের এক সময়ে তাঁরা এসেছিলেন ওই পুণ্ড্রদেশে। সেখানে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন কৃষ্ণসখা সুদামা। তাঁরই হাত দিয়ে পাণ্ডবরা গোপাল (শ্রীকৃষ্ণ)-এর জন্য আম পাঠিয়েছিলেন। তা থেকেই এই আমের নাম ‘গোপালভোগ’।

গবেষকরা এই দুটি আমের নামকরণের ঐতিহাসিক যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা খুঁজেছেন। রাজশাহী থেকে পুরী যাওয়ার পথে চৈতন্যদেব যখন মালদহে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন রূপ ও সনাতন গোস্বামীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এঁদের বাগানের আম চৈতন্যদেব গৌড়ের কুলদেবতা নাড়ুগোপালকে নিজের হাতে ভোগ দিয়েছিলেন। সেই থেকে ওই আমের নাম হয় ‘গোপালভোগ’।

অনুরূপ, গৌড়রাজ শশাঙ্কের আমবাগানের মালী ছিলেন ফজল আলি। তিনি ছিলেন রাজার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ‘তালাবি’ ও ‘বোম্বাই’ আমের সংকরায়ণ ঘটিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন এক অতিকায় আম। ফজল আলি দ্বারা উদ্ভাবিত বলে আমের নামকরণ হয় ‘ফজলি’।

ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে আম ওতপ্রোত। বাল্মীকি ও তুলসীদাসী রামায়ণে ও ব্যাসদেবের মহাভারতে গুরুত্বসহ আমের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। মৎস্যপুরাণ ও বায়ুপুরাণে কালো আমের উল্লেখ আছে, যার রস পানে মানুষ অমরত্ব লাভ করে। আমকে নিয়ে এই সমস্ত উপাখ্যানই এই রসাল ফলটির সম্পর্কে এত রসাল গল্পের জন্ম দিয়েছে। শুধু এ দেশে নয়, ব্রহ্মদেশের এক লেখায় উল্লেখ পাওয়া যায়, এক আমবাগানের মালিক বুদ্ধদেবকে একটি আম উপহার দিয়েছিলেন। বুদ্ধদেব তা খেয়ে শিষ্যকে আঁটিটি জমিতে পুঁততে নির্দেশ দিলেন। সেই আঁটির উপরে বুদ্ধ হাত ধুলেন। সঙ্গে সঙ্গে আঁটিটি ফলে ফুলে ভরে এক মহীরূহে পরিণত হল।

আম গবেষকদের কর্তব্য হল কিংবদন্তির স্তূপ থেকে ইতিহাসনিষ্ঠ সত্যকে তুলে আনা।

প্রদীপনারায়ণ রায় শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE