E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: তিনি বহু গুণে ধনী

রবীন্দ্রসৃষ্টিকর্মের কালানুক্রমিক সংগ্রহের পথিকৃৎ ছিলেন প্রশান্তচন্দ্র। রবীন্দ্রচর্চা ও গবেষণার জন্য রবীন্দ্ররচনা সঙ্কলন, সংগ্রহ ও তালিকা তৈরির কাজে তিনিই প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করেন।

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৫ ০৭:০৬

সন্দীপন মিত্রের ‘আধুনিক ভারত নির্মাণ’ (২৯-৬) শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে জানাই যে, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ শুধু রাশিবিজ্ঞানী নন, ছিলেন রবীন্দ্র-গবেষকও। পারিবারিক ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধতার সূত্রে কিশোর বয়স থেকেই শান্তিনিকেতনে যাতায়াত ছিল প্রশান্তচন্দ্রর। ১৯১৯-এ নোবেলজয়ী কবি জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নাইট উপাধি ত্যাগ করে বড়লাটকে চিঠি লেখেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে প্রশান্তচন্দ্র রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ছিলেন। এই বিষয়ে ‘লিপিকার সূচনা’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশও করেছিলেন প্রশান্তচন্দ্র। বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠার পর তিনি রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে বিশ্বভারতীর সম্পাদক হয়েছিলেন। তিনি দশ বছর বিশ্বভারতীর অন্যতম কর্মসচিব ছিলেন। দীর্ঘকাল ছিলেন কবির সেক্রেটারি। তাঁর স্ত্রী রবীন্দ্রনাথের নিবিড় সান্নিধ্যে এসেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে স্নেহধন্য প্রশান্তচন্দ্র রবীন্দ্রনাথের বিদেশ সফরে সঙ্গী ও সচিব হয়েছিলেন। আবার রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন সময় এই দম্পতির অতিথি হয়েছেন আলিপুর মিটিয়োরলজিক্যাল অফিসের বাসভবন, বেলঘরিয়ার গুপ্তনিবাস ইত্যাদি ভবনে।

রবীন্দ্রসৃষ্টিকর্মের কালানুক্রমিক সংগ্রহের পথিকৃৎ ছিলেন প্রশান্তচন্দ্র। রবীন্দ্রচর্চা ও গবেষণার জন্য রবীন্দ্ররচনা সঙ্কলন, সংগ্রহ ও তালিকা তৈরির কাজে তিনিই প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে তিনি লিখেছেন, “নিজের লেখা সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের কোনরূপ দয়ামায়া নাই, অতি নির্মমভাবে নিজের লেখা কাটিয়াকুটিয়া বাদ দিয়াছেন। শৈশবকালের অধিকাংশ লেখা পুনর্মুদ্রিত হয় নাই।... প্রাপ্তবয়সের অনেক লেখা, বিশেষত গদ্যপ্রবন্ধ ও সমালোচনা মাসিক পত্রিকার পাতায় চাপা পড়িয়া গিয়াছে।... রবীন্দ্রসাহিত্য সমগ্রভাবে আলোচনা করিতে হইলে এইসকল লেখা কোনমতেই বাদ দেওয়া চলে না।” এমনকি প্রকৃত রবীন্দ্রচর্চার পথ নির্মাণে বিশেষ সহায়তা ছাড়াও প্রকাশনার ক্ষেত্রেও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। গ্রন্থ পরিচিতি দেওয়ার পরিকল্পনাও তাঁর ছিল। তিনি নিজে অনেক ক্ষেত্রে তা দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর বেশ কিছু রবীন্দ্রবিষয়ক রচনাও নানা কারণে আজও আমাদের মূল্যবান সম্পদ।

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ রামমোহন রায়ের আদর্শে যুক্তি ও মানবমুক্তির ভাবনায় ভাবিত ছিলেন। আবার রবীন্দ্রনাথের প্রভাবে বিশ্বমানব-কল্যাণের দর্শনকে গ্রহণ করেছিলেন। এ-বিষয়ে তিনি লিখেছেন, “শুধু স্ট্যাটিসটিক্স-এর রিসার্চ বা কাজ নিয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়। মানবসভ্যতার বা বিশ্বমানবের যে আদর্শ রামমোহন-রবীন্দ্রনাথের বাণীতে প্রকাশ পেয়েছে সে সম্বন্ধে আমার একটা দায়িত্ববোধ আছে। তাই ব্রাহ্মসমাজ বা বিশ্বভারতীর কাজে একদিন হাত দিয়েছিলুম।” আসলে রবীন্দ্র মননসঞ্জাত মানবকল্যাণ ও সমন্বয়ের আদর্শকে প্রশান্তচন্দ্র আজীবন অবলম্বন করেছিলেন। আর তাই মানুষের কল্যাণই ছিল তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক নানা গবেষণার অভিমুখ। সৃষ্টি করেছিলেন রাশিবিজ্ঞানের এক নিজস্ব সংস্কৃতি। রাশিবিজ্ঞানের গবেষণার মধ্যে দিয়ে তিনি জাতির বিজ্ঞান চেতনায় ঘটিয়েছিলেন বিপ্লব।

সুদেব মাল, তিসা, হুগলি

পথের নির্দেশ

সন্দীপন মিত্রের ‘আধুনিক ভারত নির্মাণ’ উত্তর-সম্পাদকীয়টি একটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক আলোচনা, যা বর্তমান সমাজের এক গভীর সঙ্কটের দিক নির্দেশ করে। অতীতে যোজনা কমিশন পরিচালিত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলি কিছুটা হলেও দেশের সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার প্রসারে ও দারিদ্র দূরীকরণে সচেষ্ট থেকেছে। বিজ্ঞান গবেষণাকেও সামাজিক প্রকল্পে শামিল করার চেষ্টা হয়েছে, কতটা সফল হয়েছে তার পরিমাপ করা অসম্ভব। কিন্তু পরিকল্পনাগুলির মূল বিষয় সাধারণের বোধগম্য ছিল। অধুনা নীতি আয়োগের কর্মকাণ্ডের জাতীয় কর্মসূচি কী, তা সহজে বোঝা যায় না। জাতীয় শিক্ষানীতির মতো জাতীয় বিজ্ঞান ও কারিগরি নীতির রূপরেখা কী হবে, তার বিশদ আলোচনা হয়েছে বলে জানা নেই। সে জন্যই প্রয়োজন মেঘনাদ সাহা ও প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের মতো বিজ্ঞানীদের। এঁরা ঔপনিবেশিক ভারতে অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিজ্ঞান গবেষণা এবং সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখে গিয়েছেন। স্বাধীনতা লাভের পরও সেই ধারা অব্যাহত ছিল।

সংখ্যাতত্ত্বের গবেষণায় অধ্যাপক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীন ভারতে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা রূপায়ণের নকশা তাঁরই, যা বিশদে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সময় থেকেই বৃহৎ শিল্প স্থাপনের এবং সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, যা দেশের সার্বিক কর্মকাণ্ডের অভিমুখকে ঠিক করে দেয়। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু দ্বিতীয় পরিকল্পনায় মূলত ভারী শিল্পের দিকে জোর দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধের কারণে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণে বিলম্ব ঘটে। ষাটের দশকে দেশ জুড়ে খাদ্য সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছিল, যা আমরা ছোটবেলায় প্রত্যক্ষ করেছি। সবুজ বিপ্লবের হাত ধরে আমরা সেই খাদ্য সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হই। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছনো হয়তো যায়নি, তবুও নানা ভুলত্রুটি সত্ত্বেও একটা গতিশীল অৰ্থব্যবস্থা কিন্তু কায়েম ছিল। উল্লেখযোগ্য, প্রথম স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভের কাজ শুরু করার কারণ ছিল দেশের জনসংখ্যা, কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদের একটা সামগ্রিক ধারণার হদিশ পাওয়া।

স্বাধীনোত্তর দেশে চরম দারিদ্র এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে উদ্ধারের উপায় হিসাবে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কথা ভেবেছিলেন নেতা ও চিন্তাবিদরা। সেই সঙ্গে তাঁরা উন্নত মানের বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাগার স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সেই সময়ে নেহরুর ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক ভারতীয় অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী দেশে ফিরে আসেন, তাঁরা বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগদান করেন, এবং তাঁদের অনেকেই পরবর্তী সময়ে সফল হয়েছেন। তার পরেও অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে দেশ বেরিয়ে আসতে পারেনি। আমরা দেখেছি যে, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রস্তুত করার সময়ে রাজ্য স্তরে আলোচনার মূল সিদ্ধান্তগুলি, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভে-র অনুসন্ধানমূলক গবেষণা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হত। শুধু তা-ই নয়, আবহাওয়া দফতরের পাঁচ বছরের সংখ্যাতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা পূর্বাভাস পরিকল্পনার বিশেষ অঙ্গ হিসাবে ধরা হত। এখানেও অধ্যাপক মহলানবিশের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ধীরে ধীরে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্তরে কর্মতৎপরতা শুরু হয়। তদুপরি ১৯৬২, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে তিনটি যুদ্ধ সত্ত্বেও দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হয়নি। পরমাণুবিজ্ঞান ও মহাকাশবিজ্ঞানে আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি করতে পেরেছি। এই সাফল্যের পিছনে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলির অবদান অস্বীকার করা যায় কি?

বর্তমানে বিজ্ঞান গবেষণার ফল সাধারণের কাছে পৌঁছচ্ছে না, বিজ্ঞান ও কারিগরি গবেষণার জাতীয় নীতির বিষয়গুলিও সাধারণের অধরা। আমরা লক্ষ করছি, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র ভর্তি কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ, ভ্রান্ত নীতি, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কুফল সরাসরি দেখা যাচ্ছে। এর পরিণতি সৃষ্টিমূলক হতে পারে না।

শ্যামল ভদ্র, কলকাতা-৬৮

বন্ধ এটিএম

বহু দিন ধরে বাঁশদ্রোণী ইউকো ব্যাঙ্কের এটিএম যন্ত্রটি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে, যার ফলে গ্রাহকদের, বিশেষ করে বয়স্কদের দুর্ভোগ বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।

এ বিষয়ে অনেক বার ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে জানানো সত্ত্বেও কোনও হেলদোল নেই। তাই এই চিঠির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তাপস কুমার খাঁ, কলকাতা-৪৭

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Prasanta Chandra Mahalanobis Rabindranath Tagore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy