Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বিজ্ঞাপনের সন্তানেরা

আমরা সবাই শীত পড়লেই ছুটছি শপিং মল-এ, ঝকঝকে দোকানে একটা হালকা তুলোর লেপের দাম ন’হাজার পাঁচশো টাকা। আউশগ্রামের রাফিজা বিবির ছোট ছেলেটার হার্টে ফুটো।

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৫

আমাদের মুখ, চোখ, কান, নাক, মাথা সব ঢেকে গিয়েছে বিজ্ঞাপনে। তাই কালো মেয়েটি টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ফরসা হওয়ার ক্রিম কিনে ঘরে ফেরে। দুধ নয়, হেল্‌থ ড্রিংক গুলে আমরা দৌড়ই ছেলের পিছনে। প্রশ্নহীন বশ্যতা আমাদের। কাহন কাহন প্রশ্ন আমরা করতে জানি, কিন্তু তা শুধু পাড়ার গোয়ালা, বাজারের আটা চাকি, পাইকারি মশলার দোকানদার, মাশরুম দিতে আসা মাসিদেরকে।

আমরা সবাই শীত পড়লেই ছুটছি শপিং মল-এ, ঝকঝকে দোকানে একটা হালকা তুলোর লেপের দাম ন’হাজার পাঁচশো টাকা। আউশগ্রামের রাফিজা বিবির ছোট ছেলেটার হার্টে ফুটো। একটা অপারেশন মানে কত টাকা? এক লক্ষ? মানে পঁচিশ থেকে ত্রিশটা নকশি কাঁথা। পুরো কাঁথা জুড়ে ফুল তুলে চলেছে রাফিজা। সারা রাত ধরে। দু’হাত ফুলে ঢোল। মাঝে মাঝে দেখছে, ছেলেটার শ্বাস ঠিকঠাক পড়ছে তো? পঁচিশটা কাঁথা কবে তৈরি হবে ওর? হলেও বিক্রি হবে তো? আমরা, যারা ওকে সহানুভূতি দেখাই, তারা কাঁথায় হাত রেখে ভাবি, ওর কত খরচ হতে পারে। কী সুতো? বর্ধমান না অ্যাঙ্কর? কাপড়ের ভেতর যে কাপড় বসিয়েছ তা পুরনো? সাইডটা একটু কেটে দেখিয়ে দাও। তার পর আবার জুড়ে দিয়ো। আর শোনো, রং উঠবে না তো?

কোয়ালিটির গ্যারান্টি মাস্ট। আর সে পরীক্ষা দেবেন শুধু প্রান্তিক মানুষেরা। বড় বড় শপিং মল-এ কোয়ালিটি নিয়ে জিজ্ঞেস করবার সাহস কোথায়? সেল্‌স গার্ল হাত থেকে জিনিস নিয়ে মাথা থেকে পা তেরচা চোখ বুলিয়ে বলবে, ‘ইয়ে আপ কে লিয়ে নেহি হ্যায়।’ আমরা আড়চোখে আশপাশে তাকিয়ে বেরিয়ে যাব। কানে ইয়ারপ্লাগ লাগিয়ে ঢুকে পড়ব শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাড়িতে। এটা কি ক্ষতির লিস্টে পড়বে? না। কারণ, রাফিজার ছেলে মরলে আমাদের কিছু যাবে-আসবে না। একশো কুড়ি কোটির দেশে কোনও এক বাড়িতে, কোনও এক বিধবা মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে শুধু কিছু কুকুর ঘেউঘেউ করে উঠবে। আমরা পরদিন কপালে হাত ঠেকিয়ে পার হয়ে যাব মৃতদেহের পাশ দিয়ে। ভুলেও ভাবব না, রাফিজার ছেলেটা কি এমনিই মরে গেল, না কি মরল আমাদের হাতে?

এ ভাবেই, তাঁতিপাড়া, গোয়ালপাড়া, চণ্ডীপুর, দরিয়াপুর, ধবনী জায়গাগুলো শেষ হয়ে যাবে। আমরা ‘ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো’ গান স্বরলিপি মিলিয়ে মিলিয়ে গেয়ে যাব, কিন্তু স্বদেশ কী, তা বুঝব না। ব্র্যান্ড আমাদের গিলে ফেলবে, আমরা আমাদের শরীরে দাঁতের দাগ দেখতে পাব, তবুও বুঝব না। এই স্বদেশের ভেতরেই কীভাবে পরাধীন থাকতে হয়, তা আমরা শিখে ফেলেছি যে!

যদি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলি ‘ওগো, এ তোমার দেশের জিনিস, এ তোমার বাংলার জিনিস, এ তোমার জেলার জিনিস, এ সব কেনো, তুমি কিনলে তোমার দেশ বাঁচবে’, তা হলেও কেউ জিনিসটা কিনতে এগিয়ে আসবে না, কারণ জিনিসটার গুণগত মান পরখ করে নেওয়ার একটা ব্যাপার থেকেই যায়। তাই পণ্যের মান উন্নত করা দরকার। আর সে জন্য দরকার প্রচুর রিসার্চ। আমরা কিন্তু সে-দিকে মন দিলাম না। মন দিলাম রকেট বানানোর প্রযুক্তিতে, স্বয়ংক্রিয় বন্দুক বানানোয়। এ দিকে ভুলে গেলাম কালমেঘ ও বাসক থেকে ওষুধ বানানোর কৌশল। বুঝলাম না, শত্রু আমাদের মারার আগেই, কালাজ্বরে বা ডেঙ্গিতে মরে যেতে পারি। মজার ব্যাপার হল, আমরা ভুলে গেলাম, কিন্তু অন্য মানুষ মনে রাখল আমাদের প্রাকৃতিক জিনিসের গুণাগুণ। তাই তারা আমারই গ্রামের হরীতকী, আমলকী নিয়ে চলে যাচ্ছে তাদের প্রসেসিং সেন্টারে, সেটাকে ব্র্যান্ড-এ মুড়ে আমাদেরই বিক্রি করবে বলে। যে শজনে শাক চাষ করছে, সেই চাষির বাচ্চাটার কিন্তু অপুষ্টি। আমরা কোনও দিন বুঝলামই না অপুষ্টির এই বিশাল সমাজকে শুধুমাত্র শজনে শাক খাইয়েই অনেক সুস্থ রাখা যেত। এক মার্কিন কোম্পানির লোক কিন্তু সে সুযোগ হাতছাড়া করল না। তারা আমারই দেশের গাছের পাতা, আমারই লোককে দিয়ে প্রসেস করিয়ে আমারই মার্কেটে ‘নিউট্রিশাস পাউডার’ হিসাবে একশোগুণ বেশি দামে বেচে দিল অনলাইনে। আর আমরা নিজেদের বুদ্ধি আর সংস্কৃতির গর্বে নিজেরাই তালি দিতে থাকলাম।

মৌ সেন উষা পার্ক, কলকাতা

রূপশ্রী খারাপ?

‘রূপশ্রীর ফাঁদ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়-য় (৩-২) প্রভাবিত হয়ে আনন্দময়ী মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘রূপশ্রী’ শীর্ষক চিঠিতে (১১-২) একটি মন্তব্য করেছেন— ‘মেয়েরাই রূপশ্রী ফিরিয়ে দিক, এ যে মেয়েদের অবমাননা।’ যে কোনও লেখা লেখার আগে, সমাজের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা সংগ্রহ জরুরি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে পথেঘাটে রূপশ্রী নিয়ে যাঁরা আলটপকা মন্তব্যে মাতছেন, তাঁরা বোধহয় খেয়াল করেননি, যে সব পরিবারের বার্ষিক আয় দেড় লক্ষ টাকার কম, রাজ্য সরকার তাদের কন্যার বিবাহের সহায়তা হিসাবে পঁচিশ হাজার টাকা দিতে চাইছে। এটা ‘পণের তুল্য অনুদান’ হবে কেন! যে পরিবার দরিদ্র, কেবলমাত্র তাদের জন্যেই তো এই অনুদানের ব্যবস্থা।

তা ছাড়া একটি অতি সাধারণ পরিবারেও যে কোনও বিয়েতে আনুষঙ্গিক খরচখরচা থাকেই। পাত্রপক্ষের বাড়ির হাজার ফর্দ, পুরোহিতের চিরাচরিত ফতোয়া, এবং অবশ্যই পাত পেড়ে খাওয়ানোর জোগাড়— এ সব খরচ নেই? এগুলো সামলাতে গিয়ে মেয়ের বাবাকে কী নিদারুণ যন্ত্রণায় মাথার চুল ছিঁড়তে হয়, তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। কাগজের পাতায় বড় বড় মতামত জানানো সোজা, মানুষের পাশে দাঁড়ানো সোজা নয়।

শক্তিশঙ্কর সামন্ত ধাড়সা, হাওড়া

রেলে গুন্ডামি

আসিফ হোসেনের লেখা চিঠি ‘রোজ চলছে’ (১৫-২) খুবই বাস্তব এবং আমার নিজের সঙ্গে ঘটা এবং দেখা দুটো ঘটনা বলি। মাসখানেক আগে ৮:২২-এর বারুইপুর লোকালে মল্লিকপুর স্টেশন থেকে (সামনের দিকের মহিলা কামরার ঠিক পরের কামরার প্রথম দরজায়) ৫-৬ জন যুবক ডান দিকের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রতি দিনের মতো ২নং প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো মহিলাদের প্রতি কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করছিল এবং ট্রেন গড়িয়া ছাড়তেই মহিলাদের জামা, শাড়ি (এর মধ্যে আমার এক পাড়ার মাসিমা ছিলেন) ধরে টান মারছিল। আমি জানালা দিয়ে দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ করি এবং তার ফলে সমবেত চড়, চরম গালাগাল হজম করি। দ্বিতীয় ঘটনা ঠিক তার পরের দিন, একই জায়গায়। একই যুবকরা, ঠান্ডার জন্যে বন্ধ থাকা জানালা খুলতে ‘নির্দেশ’ দেয়। তা না মানায়, বসে থাকা ব্যক্তির চুলের মুঠি ধরে মারে, পান পরাগের থুতু গায়ে দেয়, সঙ্গে অশ্রাব্য গালাগাল। দুটি ঘটনাই আমরা বালিগঞ্জ জিআরপিকে জানানো সত্ত্বেও, কোনও পদক্ষেপ যে হয়নি, তা এখনও প্রতি দিন এদের একই ব্যবহারই প্রমাণ করে।

বিমল বসু পদ্মপুকুর, বারুইপুর

ছুটি কিসের?

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে জাতীয় ছুটি ঘোষণার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। অধিকাংশ ভারতীয় মনে করেন, কোনও মনীষীর জন্মদিনকে জাতীয় ছুটি হিসাবে ঘোষণা করা হলে তাঁকে পূর্ণ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু মনীষীদের জন্মদিনগুলোকে মহান কর্মদিবস হিসাবে পালন করার কথা সরকার ভাবে না কেন? সমস্ত কাজকর্ম শিকেয় তুলে এক দিন ছুটি উপভোগ করার মধ্য দিয়ে কীভাবে সেই মনীষীদের সম্মান জানানো হল, যাঁরা দেশের জন্য অনবরত কাজ করে যেতে বলেছিলেন? বরং ওই দিনগুলিতে দশ ঘণ্টা সরকারি দফতর সচল রাখা উচিত। যাতে সাধারণ মানুষ অধিক পরিষেবা পায়। মনীষীদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত কর্মের মাধ্যমে, ছুটির মাধ্যমে নয়।

সেন্টু দত্ত রাইপুর, বাঁকুড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

Advertisement Sentiment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy