E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: হারানো মানিক

স্বতন্ত্র সাহিত্য পাওয়ার লোভেই মানিকের কাছে হাত পেতেছেন রসিক বাঙালি পাঠক। এই অন্য রকম সাহিত্যপ্রতিভার প্রকৃতি বোঝাতে গিয়ে বুদ্ধদেব বসু বলেছেন, “বঙ্কিমচন্দ্র বা তাঁর উত্তরপুরুষ লেখকদের মতো মানিককে স্থানে ও কালে দূরে‌ সরে যেতে হয়নি।

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:১৩

আজ, ৩ ডিসেম্বর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিন। তাঁর প্রথম উপন্যাস জননী নব্ব‌ই পেরিয়েছে। রকেট বেগে সময় ধাবিত। তার সঙ্গে জীবনধারা, মূল্যবোধের ক্রম-পরিবর্তন। মানিকবাবুও কি তবে অচল হয়ে আজ শুধু সাহিত্যের মালা গলায় নিয়ে ছবিতে-সভায় পূজিত? রবীন্দ্রনাথ তাঁর চির-আধুনিক সঙ্গীতকে সঙ্গে নিয়ে কালের সমুদ্রে ডিঙা ভাসিয়েছেন। বাকিরা আছেন— পাঠ্যসূচিতে, অধ্যাপকদের গবেষণা কাজের পুঁজি হয়ে। কিন্তু মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়! আজ যখন আধুনিক দর্শকদের জন্য সুমন মুখোপাধ্যায়কে পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত করতে হয়, তখন কিছুটা উত্তর আমরা হয়তো খুঁজে পাই। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কারও অনুসারী নন। তৎকালীন চিরাচরিত বাঁধা গতের সাহিত্যদর্শনকে খণ্ডাতেই যেন তাঁর সাহিত্যজগতে পদার্পণ।

স্বতন্ত্র সাহিত্য পাওয়ার লোভেই মানিকের কাছে হাত পেতেছেন রসিক বাঙালি পাঠক। এই অন্য রকম সাহিত্যপ্রতিভার প্রকৃতি বোঝাতে গিয়ে বুদ্ধদেব বসু বলেছেন, “বঙ্কিমচন্দ্র বা তাঁর উত্তরপুরুষ লেখকদের মতো মানিককে স্থানে ও কালে দূরে‌ সরে যেতে হয়নি। উপন্যাসের আসর সাজাতে হয়নি অতীতের কোন নিরাপদ অধ্যায়ে, অথবা কৌতূহলোদ্দীপক বৈদেশিক পরিবেশে। বর্তমান, প্রত্যক্ষ ও সমসাময়িকতার মধ্যেই তিনি আজীবন শিল্পের উপাদান খুঁজেছেন...।” মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সাহিত্যদর্শন ভাঙতে ভাঙতে নিজেকেও বার বার খণ্ডন করেছেন। প্রথম ছোটগল্প ‘অতসীমামী’ বন্ধুদের সঙ্গে এক রকম বাজি ধরে লিখেছিলেন। অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত, উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় যে গল্প পড়ে পরম উৎসাহে প্রকাশ করেছিলেন ‘বিচিত্রা’য়, সে গল্পকেই পরবর্তী কালে মানিক বলেছেন— রোম্যান্সে ঠাসা অবাস্তব কাহিনি। সাহিত্যপণ্ডিতরা ‘কালজয়ী’, ‘যুগোত্তীর্ণ’ ইত্যাদি বিশেষণকে অবশ্য-ব্যবহার্য করে তুলেছেন পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাসের আগে। সে উপন্যাসকেই পরবর্তী জীবনে ‘ন্যাতপ্যাতে সেন্টিমেন্টাল’ লেখা বলেছেন স্বয়ং মানিক। হয়তো মানিকের দর্শন বদলেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে মনোবিকলনের বিষয় ছেড়ে তাঁর লেখার হাতিয়ার হয়েছে ক্ষুধা, শ্রেণিদ্বন্দ্ব, বিপ্লব। যুক্তিবাদ, বস্তুবাদ তাঁর লেখার ভিত। নিজের লেখা সম্পর্কে মোহগ্রস্ত নন তিনি। তবে নিজের প্রতিভাকে চেনেন। কাফকার মতো নিজের লেখাকে নিয়ে তাঁর দ্বিধাগ্রস্ততা ছিল না কোনও দিন‌ই। কাফকা লুকিয়ে ফেলতেন, পুড়িয়ে ফেলতে চাইতেন নিজের অমূল্য সব লেখা। অপর দিকে, মানিক প্রকাশোন্মুখ। চল্লিশটি উপন্যাস লিখেছেন, তিনশোর উপর ছোটগল্প। লেখাই তাঁর রুজি।

কিন্তু অসামান্য দারিদ্রে ডুবে থেকে লেখার পেশাকেও ভরসা করতে পারেননি। পেটের সংস্থান না করে কেউ যেন সাহিত্য করতে না আসে— এ-ই তাঁর শেষ জীবনের উপদেশ। এ অভিযোগের তির প্রকাশকদের দিকে, চলচ্চিত্র-নির্মাতাদের প্রতি, তাঁর লেখার অনুবাদক-প্রকাশকদের প্রতি। তাঁর লেখা বাজারজাত হয়েছে, মুনাফা এসেছে, কিন্তু বঞ্চিত কৃষকের মতো অনাহারে-দারিদ্রে বাঁচার লড়াই করেছেন স্বয়ং লেখক। এই অপার দারিদ্রেও মানিকের মূলধন, সম্পদ তাঁর পাঠকসমাজ। তাঁর মৃতদেহ দাহ করতে সকাল থেকে সন্ধে হয়ে যায় মানুষের ঢলে। রবীন্দ্রনাথের পরে মানিক ছাড়া কোনও সাহিত্যিকের মৃত্যুতে এমন ঢল নামেনি। তার‌ই মাঝে যেন তিনি বলে ওঠেন, “ফুলগুলো সরিয়ে নাও, আমার লাগছে… আগুনের একটি রমণীয় ফুলকি আমাকে ফুলের সমস্ত ব্যথা ভুলিয়ে দিক।”

সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৪২

অপুষ্টির কারণ

‘ডিমের নির্বাসন মিড-ডে মিলে, শঙ্কা স্কুলে স্কুলে’ (২৭-১১) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে এই পত্র। প্রতি বছর শীতে ডিম মহার্ঘ হলেও বাড়ানো হয়নি মিড-ডে মিলের টাকার বরাদ্দ। একই সংশয় দেখা দিয়েছে ১৯৭৫ সালের ভারত সরকারের সবচেয়ে পুরনো এবং দীর্ঘমেয়াদি ‘আইসিডিএস’ (ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভলপমেন্ট সার্ভিসেস স্কিম)-এ। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ০-৬ বছরের শিশুদের মধ্যাহ্নভোজনে একটি সুষম আহার দেওয়া, যাতে পুষ্টিতে ঘাটতি পূরণ হয়। নীতি অনুযায়ী, এই বয়সে শিশুদের আনাজ, সয়াবিন-সহ খিচুড়ি ডিম দেওয়ার কথা। বর্তমানে সপ্তাহে ছ’দিন রান্না করা খাবার দেওয়া হয়। তিন দিন একটি গোটা ডিম এবং ভাত। বাকি তিন দিন অর্ধেক ডিম ও খিচুড়ি। বাজারে একটি ডিমের দাম ৮ টাকার বেশি। অথচ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে প্রতি শিশুর পরিপূরক পুষ্টি সুনিশ্চিত করতে প্রতি দিন বরাদ্দ থাকে মাত্র ৮ টাকা। ২০১৭ সাল থেকে যা অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় আনাজ, তেল, চাল ও ডালের দাম বেড়েছে। বাজারের এই পরিস্থিতিতে ৮ টাকায় কী করে সম্ভব শিশুদের মুখে ডিম-সহ পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়া? অপুষ্টির মূল কারণ একেবারে খেতে পাওয়া নয়— সুষম খাবার না পাওয়া। একই ভাবে এই প্রকল্পে গর্ভবতী মা এবং অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরাও রয়েছে। তাদের বরাদ্দ দু’-চার টাকা বেশি হলেও সমস্যা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে সমান ভাবে এই প্রকল্পের খরচ বহন করে। শিশু পুষ্টির কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় বাজেট তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়া হোক এই প্রকল্পে। বরাদ্দ বাড়াতে এগিয়ে আসুক রাজ্য সরকারও। নয়তো বহুমাত্রিক দারিদ্র কমলেও শিশুদের ক্ষুধা ও অপুষ্টির দাপট কমবে না।

সুব্রত পাল, কলকাতা-৩৮

বঞ্চনা

রাজ্যের স্কুলগুলিতে বিগত পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে ‘চার মাসের পুষ্টিযোগ’-এ কচিকাঁচাদের বরাত খুলেছিল। রাজনীতির ময়দানে দেশের ছোটদের কোনও ভোট নেই! শিক্ষিত-শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানবিক সমাজের চেতনাই ওদের বেড়ে ওঠার পথটিকে সুন্দর করে তোলে। ভবিষ্যতের নাগরিক হিসেবে দেশের মেরুদণ্ড গড়ে তোলার কাজটিতে তাই পুষ্টি জোগানো কোনও হেলাফেলার বিষয় হতে পারে না। তবুও ভোট এলে ছোটদেরও বরাত খোলে। পরিবার তথা অভিভাবক-অভিভাবিকাদের (যাঁরা মূলত ভোটদাতা) তুষ্ট করতেই যে ওই কয়েক দিনের খাবারে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়, তা পরিষ্কার।

সংবাদে প্রকাশ, গত অগস্টে মিড-ডে মিলের ক্ষেত্রে প্রাথমিকে বরাদ্দ ৬ টাকা ১৯ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছিল ৬ টাকা ৭৮ পয়সা। আর উচ্চ প্রাথমিকে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ৯ টাকা ২৯ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছিল ১০ টাকা ১৭ পয়সা। বর্তমানে একটা ডিমের দাম আট টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে সাড়ে আট টাকা। অর্থাৎ, একটা ডিমের দামই প্রাথমিকে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল বরাদ্দের থেকে বেশি। বর্তমানে কেন্দ্র মিড-ডে মিলের ৬০ শতাংশ এবং রাজ্য ৪০ শতাংশ বহন করে। কিন্তু বরাদ্দ বাড়ানোর প্রশ্নে বলা হয়, কেন্দ্র বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না কেন? কেন্দ্রের দিকে আঙুল না তুলে তামিলনাড়ুর পথ ধরে পশ্চিমবঙ্গ যদি কিছু করতে পারে, তা হলে মিড-ডে মিলের পুষ্টি থেকে শিশুগুলি বঞ্চিত হবে না।

‘চার মাসের পুষ্টিযোগ’ (১৭-১-২৩) শীর্ষক প্রবন্ধে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় একটি রূপরেখা দিয়েছিলেন। সামাজিক গঠনমূলক একটি প্রকল্প হিসেবে মিড-ডে মিলকে দেখে যদি রাজ্যের প্রতিটি মানুষের মনে (ধনী-গরিব নির্বিশেষে) একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ দেওয়া যায় তা হলে বোধ হয় সামগ্রিক একটা সুফল মিলতে পারে। এর জন্য স্বতন্ত্র একটি তহবিল গঠন করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে বছরভর মিড-ডে মিল প্রকল্পটি অক্সিজেন পাবে। খেলা, মেলা, উৎসবে সরকার বাজেট-বহির্ভূত খাতে অর্থ বরাদ্দ করেই চলেছে। এ ক্ষেত্রে বলা যায় যে, ভোটে সংগঠন মজবুত রাখতে ক্লাবগুলিকে অর্থ দিয়ে পোষণ করা আর নিষ্পাপ শিশুদের মুখে একটা ডিম তুলে দেওয়ার মধ্যে শত যোজন ফারাক।

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

বন্ধ বাস

একটিমাত্র বাস (বাকসাড়া-ধর্মতলা) সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে হাওড়া স্টেশন হয়ে ধর্মতলা যেত। দীর্ঘদিন তা বন্ধ। এখন এই রুটে কোনও বাস নেই। টোটো বা ট্যাক্সি লাগামছাড়া ভাড়া চায়। যদি ৫২ নম্বর বাস যা রামরাজাতলা থেকে ধর্মতলা যায়, তা সাঁতরাগাছি থেকে বেতর হয়ে পুরনো ৫৮ নম্বর রুট হয়ে ধর্মতলা যায়, তা হলে খুব ভাল হয়।

দেবাশিস রায়, সাঁতরাগাছি, হাওড়া

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengali Literature Novelist

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy