সুমিত ঘোষের ‘অপমানের সিডনিতেই যোগ্য জবাব রো-কোর’ (২৭-১০) শীর্ষক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। প্রতিবেদক ভারতীয় ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকরকে একটি চিঠি লিখেছেন, যার মূল প্রতিপাদ্য হল আগরকরের প্রধান নির্বাচক হিসেবে অদক্ষতা এবং রোহিত, কোহলির মতো মহান খেলোয়াড়দের প্রতি অযৌক্তিক বিরাগ।
নির্বাচকের কাজ অবশ্যই সমালোচনার যোগ্য। কিন্তু ভাবতে হবে, ভারতের মতো একটি ‘ক্রিকেট-পাগল’ দেশে তিন ফরম্যাটে দল নির্বাচন যথেষ্ট কঠিন এবং এই কাজে বিন্দুমাত্র ধন্যবাদ প্রাপ্তি হয় না, তা সে দল যতই ভাল ফল করুক না কেন! ভারত-অস্ট্রেলিয়া শেষ টেস্ট সিরিজ়ে পার্থ-এ প্রথম টেস্টে ভারত দুর্দান্ত ভাবে জয়ী হওয়ার পর রোহিত শর্মা দলে যোগ দিয়েছিলেন। এর পর দিন-রাতের টেস্টে তাঁর অধিনায়কত্বে ভারতের ক্রীড়ামানের গ্রাফ নেমে যায়। সেই সিরিজ়ে রোহিতের জঘন্য ফর্ম ও কোহলির একই ভাবে পর পর আউট হওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল তাঁদের ক্ষয়ে যাওয়া ক্ষমতা ও অবসরের ইঙ্গিত।
পরবর্তী কালে কোহলি-রোহিতের টেস্টে অবসরের পরে ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারত বেশ ভাল ক্রিকেট উপহার দিয়েছিল। সিরিজ়ের আগে অনেকেই বলছিলেন, রো-কো জুটির অভিজ্ঞতা দরকার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কঠিন একটি সিরিজ়ে। তা পরবর্তী কালে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচক কমিটি শুভমন গিলের মতো যোগ্য ব্যক্তির উপর বাজি রেখে সঠিক কাজ করেছিল এবং নতুন একটি দল সেই সফরে যথেষ্ট ভাল ফল করেছিল। সদ্যসমাপ্ত টি২০ এশিয়া কাপেও রো-কো জুটির অভাব অনুভূত হয়নি।
আগরকরের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি ব্যক্তিপুজোর ডালি সরিয়ে রেখে পারদর্শিতা ভিত্তিক দল নির্বাচনে জোর দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দেবে বলে মনে হয়। তাই ২০২৭ ওয়ান ডে বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই অধিনায়কত্ব থেকে রোহিত শর্মাকে সরিয়ে তরুণ শুভমনের হাতে দায়িত্ব দিয়েছে। এখানেই আগরকরের সাফল্য।
অভিজিৎ কর, নয়াবস্তি, জলপাইগুড়ি
মেট্রো-স্মৃতি
যশোধরা রায়চৌধুরীর ‘আমাদের পাতাল রেল’ (১৯-১০) প্রবন্ধটি পাঠকদের স্মৃতিমেদুর করে তোলে। সেই সময় দৈনিক সংবাদপত্রের হলদেটে পাতায় ‘কুমুর কীর্তি’ এক সচিত্র বিজ্ঞাপন ছাপা হত। কুমু নামক বালিকাটিকে খুরপি জাতীয় কিছু দিয়ে মাটি খুঁড়তে দেখে তার দাদা প্রশ্ন করেছিল, কী করছিস কুমু? উত্তরে কুমু জানায়, মাটি খুঁড়ে পাতাল রেল হবে, বাবা হুশ করে অফিস পৌঁছে যাবে, কষ্ট হবে না। বিজ্ঞাপনের প্রতিপাদ্য শিশু থেকে প্রবীণ সকলের মন ছুঁতে পেরেছিল। পাতাল রেলকে আধুনিক নগরজীবনের প্রতীক হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল।
১৯৮৪ সালের অক্টোবরে ভবানীপুর থেকে এসপ্ল্যানেড— এই ৩.৪ কিলোমিটার পথে প্রথম মেট্রো চালু হয়। উদ্বোধন করেছিলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। নির্ঝঞ্ঝাট যাত্রা ও টিকিটের দাম আয়ত্তের মধ্যে থাকায় প্রথম দিন থেকেই নগরবাসী মেট্রোকে বেছে নিয়েছেন। এক সময় গ্রামগঞ্জ থেকে ব্রিগেড ময়দানে মিটিংয়ে আসা দলীয় কর্মী, সমর্থকেরা চিড়িয়াখানা দেখার পাশাপাশি মেট্রো চেপে কালীঘাট ঘুরে আসতেন। জাতীয় সংহতি এবং বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য প্রচার করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৮ সালের ১৫ অগস্ট প্রথম দূরদর্শনে ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’ দেশাত্মবোধক গানটির ভিডিয়ো সম্প্রচারিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল ভারতের প্রথম চালু হওয়া কলকাতা মেট্রো রেলকে। অবশ্য অনেক পরে শুরু হওয়া দিল্লি মেট্রো নেটওয়ার্ক কলকাতাকে দশ গোলে হারিয়ে দিয়েছে। আবার অন্য দিকে, শুধুমাত্র রাজনীতির সঙ্গে আপস করার জন্য ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের খরচ শুধু বহু গুণ বেড়েছে তা নয়, চালু হতে বহু বছর দেরি হয়ে গিয়েছে। স্থান মাহাত্ম্যকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যক্তির নামে মেট্রো স্টেশনের নামকরণও বাস্তবসম্মত হয়নি বলে আজও অনেকে আক্ষেপ করেন।
তা সত্ত্বেও বলা যায়, কুমুর স্বপ্ন সত্যি করেছে কলকাতা পাতাল রেল। ছোটখাটো ত্রুটি ও বিকল হওয়া জনিত দুর্ভোগ বাদ দিলে গত চার দশকে কোনও বিরাট মাপের দুর্ঘটনা ঘটেনি। রাজ্যবাসীর কাছে এ এক পরম প্রাপ্তি।
সরিৎশেখর দাস, কলকাতা-১২২
শীতের লোকাল
বর্তমানে শিয়ালদহ শাখায় তিনটি বাতানুকূল লোকাল ট্রেন চালু আছে। এর জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে অশেষ ধন্যবাদ। বর্তমান আবহাওয়ায় আমাদের রাজ্যে মার্চ মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অসহনীয় গরমের মধ্যে কাটাতে হয়। সেই সময় সাধারণ মানুষ লোকাল ট্রেনে অসহ্য গরমে প্রবল ভিড়ে অত্যন্ত কষ্ট করে যাতায়াত করতে বাধ্য হন। এমন অবস্থায় রেল কর্তৃপক্ষের বাতানুকূল লোকাল ট্রেন চালু হওয়া জরুরি ছিল। ভবিষ্যতে আশা করি আরও এসি লোকাল বিভিন্ন শাখায় চালু হবে। আপাতত চালু ট্রেনগুলিতে যথেষ্ট ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে।
শীত পড়তে আর বেশি দেরি নেই। শীতের দিনে সাধারণ এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি সচরাচর বাতানুকূল কোচের সংখ্যা কমিয়ে স্লিপার কোচ বাড়িয়ে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে নেয়। কিন্তু সম্পূর্ণ বাতানুকূল লোকালে সেই সুযোগ নেই। প্রশ্ন হল, শীতের এই তিন মাস এসি লোকালগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে? স্বভাবতই তুলনামূলক ভাবে বেশি ভাড়ার লোকালগুলিতে যাত্রীদের উপস্থিতি হ্রাস পাবে শীতকালে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ নেতিবাচক মনোভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যেন ট্রেন কমানোর সিদ্ধান্ত না নেন।
বরং, এসি লোকালের ভাড়ার ব্যাপারটি নিয়ে আর একটু সদর্থক চিন্তাভাবনা করে কমিয়ে দিতে পারলে হয়তো এসি লোকালের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল হবে। মনে রাখা দরকার, সম্পূর্ণ এসি এক্সপ্রেস ট্রেন যেমন— বন্দে ভারত, শতাব্দী এক্সপ্রেস, রাজধানী এক্সপ্রেস ইত্যাদি কিন্তু শীতকালেও যথেষ্ট পরিমাণে যাত্রী-পরিষেবা দিতে সক্ষম। তাই এসি লোকালের ক্ষেত্রে অন্য রকম ভাবার প্রয়োজন নেই।
তপন কুমার দাস, কলকাতা-১২২
উন্নয়নের ধাক্কা
আজকাল প্রায়ই শুনি যে, ভারতীয় রেল দ্রুতহারে এগিয়ে চলেছে, রেলে প্রচুর বিনিয়োগ হচ্ছে এবং আমরা কিছু দিনের মধ্যেই বুলেট ট্রেনে চড়ব ইত্যাদি নানা রকম পরিকল্পনা। যদিও এই উন্নয়নের সিংহভাগ দেশের পশ্চিম ও বিশেষ কয়েকটি রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আমলে কোথায় কত বিনিয়োগ হয়েছে, তার একটি তালিকা সরকারের তরফ থেকে প্রকাশ করা হোক। তা হলে আমরা প্রকৃত অবস্থাটা জানতে পারি। রেলের এত যে ‘উন্নয়ন’, তার সুফল কি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেছে? গত দু’বছরে কয়েক বার আমি কলকাতা থেকে মুম্বই গিয়েছি বা এসেছি গড়ে দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা লেটে। প্রায় প্রতি দিনই এই ট্রেনগুলি লেট করে গন্তব্যে পৌঁছয়। উন্নয়ন কি তা হলে সময়ানুবর্তিতার ব্যস্তানুপাতিক?
আলোক ভট্টাচার্য, কলকাতা-৫৬
অব্যবস্থা
কিছু দিন আগে দিঘা বেড়াতে গিয়েছিলাম রাজ্য সরকারি পরিবহণের বাসে। এসি বাস। সুন্দর ব্যবস্থা। কিন্তু যাওয়া ও আসার সময় কিছু ক্ষণের বিরতির জন্য যে জায়গাগুলিতে বাসটি দাঁড়াল, সেখানকার শৌচালয়ের অবস্থা দেখে ছিটকে বেরিয়ে এলাম। ব্যবহার করলে সংক্রমণ নিশ্চিত। চার-পাঁচ ঘণ্টার যাত্রাপথে একটু ভদ্রস্থ শৌচালয়ের সামনে কি বিরতি নেওয়া যায় না, যেখানে বাসের টিকিটের দাম যথেষ্ট বেশি?
অনামিকা দাস, কলকাতা-৩৩
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)