Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: সাম্রাজ্যবাদ আসন্ন?

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখ-নিঃসৃত গোলাগুলির যে পরিচয় দিয়েছেন, তার প্রায় সবই ওই রাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী লিপ্সার দৃষ্টান্তস্বরূপ।

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪৬
Share
Save

‘অখিল ক্ষুধায় শেষে কি…’ (২১-১) শীর্ষক প্রবন্ধে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখ-নিঃসৃত গোলাগুলির যে পরিচয় দিয়েছেন, তার প্রায় সবই ওই রাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী লিপ্সার দৃষ্টান্তস্বরূপ। অতীত কাল থেকে সাম্রাজ্যবাদের বিবিধ প্রকাশ আমরা দেখতে পাই ইতিহাসের পাতায়। রোমান থেকে শুরু করে মৌর্য, মোগল, ব্রিটিশ বা ওলন্দাজ-সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্যই ছিল জাতীয় গৌরব বৃদ্ধির স্বার্থে অপর রাষ্ট্রের ভূখণ্ড দখল থেকে শুরু করে বিজিত জাতির উপর বিজয়ীর সামরিক এবং সামাজিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা। কখনও-কখনও সে প্রাধান্য যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের প্রসারেও ব্যবহৃত হতে দেখা যেত, এখানেও যেন ঠিক তেমনটাই ঘটছে বা ঘটতে চলেছে।

কানাডা থেকে শুরু করে পানামা খাল থেকে একেবারে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত ভূখণ্ড দখল নেওয়ার প্রস্তুতিতেও নয়া জমানার আমেরিকার লক্ষ্য সেই সমৃদ্ধিই। অর্থনৈতিক দিক থেকে শেষোক্ত ভূখণ্ডের আকর্ষণ যে কী বিপুল, প্রবন্ধের উপ-শিরোনাম ‘বরফ যত গলছে, তত লোভনীয় হয়ে উঠছে গ্রিনল্যান্ড’ বাক্যটিতেই স্পষ্ট। শুধু তা-ই নয়, এর মাধ্যমে বহুল প্রচলিত ‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ’— এই প্রবাদ বাক্যটিও আমাদের মনে পড়ে যায়। এক দিকে বরফের ক্রমবর্ধমান গলনে সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয় যত বাড়ছে, অপর দিকে তত আমেরিকা নামক লোলুপ রাষ্ট্রের ‘সর্বগ্রাস’-এর পরিকল্পনা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। প্রকৃতিকে বাঁচানোর চিন্তা তো নেই-ই, যত চিন্তা এদের নিজের দেশের শ্রী এবং শক্তি বৃদ্ধি নিয়ে।

মার্ক্সবাদ-ই সাম্রাজ্যবাদের উৎপত্তির মূল উৎস খুঁজে পেয়েছিল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে এবং লেনিন সেই সাম্রাজ্যবাদকে একচেটিয়া পুঁজির সর্বোচ্চ স্তর হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তবে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একটা প্রচ্ছন্ন প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠে বটে। এ ক্ষেত্রে যেমন ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার প্রস্তাবে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী ব্যাপারটা উড়িয়ে দিয়েছিলেন এই বলে যে ‘প্রেসিডেন্ট নিশ্চয়ই ঠাট্টা করছেন’। তবে এ ক্ষেত্রে ভুললে চলবে না, সাম্রাজ্যবাদীরা নব্য-ঔপনিবেশিকতাবাদের আশ্রয় নেন এবং নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করে চলেন অন্য ভূখণ্ডের দখল পেতে। এক সময় ঘানার রাষ্ট্রপ্ৰধান উনক্রুমা তাই বলেছিলেন, “আজকের দিনে সাম্রাজ্যবাদী দেশ কেবল সামরিক পদ্ধতির মাধ্যমেই নিজেদের স্বার্থ পূরণের চেষ্টা করে না, পক্ষান্তরে অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশ, মতাদর্শগত প্রাধান্য, মনস্তাত্ত্বিক অনুপ্ৰবেশ, নাশকতামূলক কার্যকলাপ, জনজাতীয় বিরোধ এবং হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখার চেষ্টা করে।” এখানেও হয়তো তার অন্যথা হবে না। ডেনমার্ক যে-হেতু আমেরিকার নেটো সঙ্গী, প্রতিরক্ষার মতো সংবেদনশীল বিষয়ের অজুহাত দেখিয়ে গ্রিনল্যান্ডে তার সক্রিয় উপস্থিতির প্ৰয়োজনীয়তা বোঝাতে আমেরিকা যদি ভবিষ্যতে উঠেপড়ে লাগে, তা হলে অবাক হওয়ারও কিছু থাকবে না। দুনিয়াটা এখন এ ভাবেই চলে।

গৌতম নারায়ণ দেব, কলকাতা-৭৪

পার্থক্য নেই

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রশ্নের আকারে আমার এই নিবেদন। মানবসভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রাসী লোভ সমগ্র পৃথিবীকে ক্রমশ যে এক অবশ্যম্ভাবী পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সে বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। স্পষ্ট প্রতীয়মান, পৃথিবীর চিন্তাশীল জগৎ এই মহাপতনের অসহায় দর্শকে পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবন্ধকারের প্রতিটি শব্দে সত্যের অনুরণন শুনতে পাওয়া যায়। তবে, এই প্রবন্ধে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে সদ্য অধিষ্ঠিত ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই প্রকারান্তরে দায়ী করা হয়েছে।

এখানে প্রশ্ন, এ-হেন পরিণতির কি আদৌ কোনও তারতম্যের সম্ভাবনা ছিল বা আছে, যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক শিবিরের অন্য কোনও ব্যক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদ পেতেন? অনুভব করি, সমগ্র পৃথিবী সমষ্টিগত ভাবে এক অপ্রতিরোধ্য ‘ডাইনামিক্স’-এর অধীনতা স্বীকার করে নিয়েছে, যা বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী একক ব্যক্তিত্বের বা সমষ্টিগত রাজনৈতিক শিবিরের উপর লেশমাত্র নির্ভরশীল নয়। প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের বিষয়টি ভেবে দেখা জরুরি।

অভিজিৎ সেন, নয়ডা, উত্তরপ্রদেশ

বার্ধক্যের সম্বল

‘হিমশৈলের তল’ (২০-১) সম্পাদকীয় প্রবন্ধে বর্তমান সময়ের একটি বহু আলোচিত সামাজিক সমস্যার বাস্তব চিত্র সঠিক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ষাটোর্ধ্ব প্রবীণদের অনেকেই এখন নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দিশাহারা অবস্থায় কোনও মতে দিন কাটাচ্ছেন। খুঁজছেন পরিত্রাণের পথ। কিন্তু কারও একার পক্ষে সমস্যায় জর্জরিত জীবন থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। স্বভাবতই এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা দরকার। দরকার সমাজ ও সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। আমি নিজে চুয়াত্তরে পা দিলাম। নানা সামাজিক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার সুবাদে, সমবয়সিদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করার সুযোগ পাই। তা ছাড়া, চার পাশে তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারছি প্রবীণ-প্রবীণাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সকলের এক নয়। কেউ হয়তো মানসিক-শারীরিক-অর্থনৈতিক নিপীড়নের শিকার, আবার কেউ হয়তো সাইবার-প্রতারণার শিকার। কিন্তু প্রতারক ও নিপীড়ক যখন ঘরের কেউ— আত্মীয়-পরিজন এমনকি সন্তানও, তখন দুশ্চিন্তার সীমা-পরিসীমা থাকে না। কেউ কেউ তো স্ত্রী কিংবা স্বামীকে হারিয়ে একা হয়ে যান। এঁদের একাকিত্বের মানসিক যন্ত্রণা কম-বয়সিদের অনেকেই অনুভব করতে পারেন না। উল্টে বয়স্কদের মানসিক ও শারীরিক অসহায়তাকে হাতিয়ার করে ভুলিয়েভালিয়ে বা চাপ দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে সম্পত্তির দলিল, হস্তান্তর করানো হচ্ছে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’, ঘরে থাকা টাকা চুরি, ব্যাঙ্কের পাসবই বা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের অপব্যবহার হচ্ছে আকছার। পেশাগত কারণে অনেকেরই ছেলে-মেয়ে বাবা-মা’র কাছ থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হন। সুযোগসন্ধানীরা বহু ক্ষেত্রে সে সুযোগটাও কাজে লাগায়। অন্য দিকে, সব বৃদ্ধাশ্রমকেও নিরাপদ আশ্রয় বলে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আর যে বয়স্করা কর্মজীবনে কোনও অর্থই সঞ্চয় করতে পারেননি, তাঁদের তো ট্রামে-বাসে ফেরি করা বা ভিক্ষা করে আয় করা ছাড়া উপায় থাকে না। তাই বয়স্কদের সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগেও স্বতন্ত্র ভাবনা প্রয়োজন।

আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, জৈবিক পরিবর্তনের সূত্র মেনেই প্রতিটি মানুষ শৈশব-কৈশোর-যৌবন-প্রৌঢ়ত্ব অতিক্রম করে বার্ধক্যে উপনীত হন। এটা মানুষের জীবনচক্রের এক অনিবার্য পরিণতি। একে এড়িয়ে যাওয়ার কোনও উপায় কারও নেই। পরিণত বয়সে পৌঁছনোর আগে থেকে বহু মানুষের কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে যেমন কমতে থাকে, শারীরিক অসুস্থতাও তেমনই বৃদ্ধি পায়। তখনই তো প্রয়োজন হয় নিরাপদ পরিবেশ, মানসিক পরিচর্যা ও সুচিকিৎসার। বয়স্কদের পরনির্ভরতা যত বৃদ্ধি পায়, ততই তিনি নিজেকে অসহায় মনে করেন। খুঁজে পেতে চান নির্ভরযোগ্য শারীরিক ও মানসিক আশ্রয়। সেই আশ্রয় যেমন পরিবার ও সমাজ দিতে পারে, তেমনই তা দিতে পারে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ। যে মানুষগুলি বার্ধক্যে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সেবা করে এলেন, তাঁদের সমস্যা সমাধানে আমরা আর কত বিলম্ব করব? সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সংবেদনশীল মানুষের যে মানবিক মুখ প্রায়শই খুঁজে পাওয়া যায়, তা কেন প্রবীণদের সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে না?

রতন রায়চৌধুরী, পানিহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump america

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}