অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন এবং ত্রুটিপূর্ণ পণ্য বা পরিষেবার বিরুদ্ধে উপভোক্তাদের জন্য আরও ভাল সুরক্ষা এবং অভিযোগ প্রতিকারের দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রদান করা ‘ভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন’ গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সেই উদ্দেশ্য সঠিক ভাবে পূরণ হচ্ছে না নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে। রাজ্যের উপভোক্তা বিষয়ক দফতরের ডাক— উপভোক্তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। অথচ, এই ডাকে সাড়া দিয়ে কমিশনে এসে তাঁরা হতাশ। আসলে প্রতিটি কমিশনে মামলার পাহাড়। সেই সব মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর লেগে যাচ্ছে। তাতে মূলত আইনজীবীদেরই লাভ হচ্ছে। তা ছাড়া, কমিশনগুলিতে প্রেসিডেন্ট থেকে মেম্বার— শূন্য পদগুলিতে নিয়োগ হচ্ছে না। ফলে সুরক্ষা চাইতে এসে উপভোক্তাদের নাকাল হতে হচ্ছে। কলকাতা উত্তর থেকে দক্ষিণ, মালদহ থেকে নদিয়া— সর্বত্র এক অবস্থা।
কমিশনের ওয়েবসাইট বলছে, কলকাতা দক্ষিণ (ইউনিট-৩) এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যিনি প্রেসিডেন্ট তিনি একই ব্যক্তি। এ ভাবেই একই ব্যক্তিকে কলকাতা উত্তর এবং কলকাতা-৪ নম্বর ইউনিটের প্রেসিডেন্ট পদে রাখা হয়েছে। বিধিমতে, উপভোক্তা কমিশনে মামলা পরিচালনার জন্য এক জন প্রেসিডেন্ট এবং দু’জন মেম্বার থাকার কথা। বাস্তবে সেখানে না আছে প্রেসিডেন্ট, না আছে দু’জন মেম্বার। কোথাও এক জন মেম্বার দিয়ে চলছে কমিশনের কাজ। আবার প্রেসিডেন্টের মতো এক জন মেম্বারকে দু’টি কমিশনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, এমন নজিরও রয়েছে। রাজ্যের উপভোক্তা কমিশনগুলির এই হালের মধ্যে আবার দুমদাম এজলাস বদল হয়ে যায়। আলিপুরে কলকাতা দক্ষিণে (ইউনিট-৩) কমিশনের কার্যালয়ে এসে উপভোক্তারা তা টের পাচ্ছেন। এখানে যে ঘরে কমিশনের এজলাসটি ছিল, সেটিকে এখন আলিপুর জজ কোর্টের এক বিচারকের এজলাস করা হয়েছে। পরিবর্তে এখানে কমিশন যে ঘরটি পেয়েছে, তার পরিসর খুবই ছোট। স্থানাভাবে এজলাসের বাইরের করিডরে উপভোক্তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কারণ মামলার তালিকা এতটাই দীর্ঘ যে দিনের শুনানি শেষ হতে বিকেল হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া, এজলাসের বাইরে বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ারের ব্যবস্থা নেই। নেই কোনও পাখার ব্যবস্থা। অন্য দিকে, দ্রুততার সঙ্গে তালিকায় থাকা মামলাগুলির শুনানি শেষ করতে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।
এই সব পদ্ধতিগত ব্যর্থতা শুধুমাত্র ন্যায়বিচারকেই ক্ষুণ্ণ করছে না, বরং এই প্রক্রিয়ার উপর সাধারণ মানুষের আস্থাও নষ্ট করছে। তাই রাজ্যের উপভোক্তা সুরক্ষা কমিশনের কাছে বিনীত অনুরোধ, মানুষের ভোগান্তি লাঘবের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করা হোক।
ধ্রুব বসু, কলকাতা-১৯
অপ্রতুল
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি বাস পরিষেবার অবস্থা অত্যন্ত করুণ। প্রতি দিনই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন রুট থেকে সরকারি বাস তুলে নেওয়া হচ্ছে, কিংবা বাস পাওয়া যাচ্ছে না। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সরকারি বাসগুলির অবস্থা দিন দিন করুণ হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে সরকারি বাসভাড়া সংশোধন করা হয়নি। কেন করা হয় না, তা স্পষ্ট নয়। এর ফলে তহবিলের ঘাটতি তৈরি হয়েছে এবং সেই কারণে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, বহু বাস ডিপোতেই সরকারি বাসের দেখা মেলে না। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এবং বিকল্প হিসেবে বেসরকারি বাস বা অতিরিক্ত খরচের পরিবহণ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অতএব সরকারের কাছে আবেদন, অবিলম্বে সরকারি বাস পরিষেবার মানোন্নয়ন, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ করা হোক।
রানা ঘোষ দস্তিদার, কলকাতা-১৪৯
প্রতারণা
অগস্ট মাসের শেষ দিকে অনলাইনে আমদাবাদ প্রিন্টের একটা বেডশিট কেনার পর সম্পূর্ণ অন্য ডিজ়াইনের একটা চাদর আমাকে দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকেই বিভিন্ন ভাবে ওই বেডশিট সংস্থার কাছে আবেদন করি যাতে আমার পূর্বমনোনীত চাদর পাঠানো হয় বর্তমান চাদরটির বদলে। বেশ কয়েক বার ওয়টস্যাপে মেসেজও পাঠাই। কিন্তু তারা সেটি বদলে দিতে বা মূল্য ফেরত দিতে রাজি হয় না। তারা জানায় আমার পছন্দের চাদরই তারা পাঠিয়েছে। এ ধরনের প্রতারণা অনলাইন কেনাকাটায় প্রায়ই হয়ে চলে। সরকার এ দিকে নজর দিক।
সুনীল চক্রবর্তী, কলকাতা-১০৯
রেলের সমস্যা
আইআরসিটিসি রেল কানেক্ট অ্যাপে টিকিট বুকিংয়ে মাঝেমধ্যেই ভীষণ সমস্যা হয়। বেশির ভাগ সময় পর্যাপ্ত আসন থাকলেও বুকিং করা যায় না। টাকার লেনদেন সম্পূর্ণ হতে অস্বাভাবিক বেশি সময় লাগে। অনেক সময় লেনদেন বাতিল বা ‘ফেল’ দেখায়, কিন্তু অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে যায়। অথচ, টিকিট বুক হয় না। টাকা ফেরতের উপায় বলতে অন্তত চার দিনের অপেক্ষা। এক সঙ্গে অনেকের টিকিট হলে তো মোটা টাকার ধাক্কা। এই সমস্যায় পাস-এর সুবিধাভোগীরাও ভোগেন। হয় টিকিট বুক করা যায় না অথবা বুকিং ‘ফেল’ দেখায়। দীর্ঘ সময় প্রসেসিং দেখানোর পর ‘নো রেসপন্স’ দেখানো স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে।
অথচ, এজেন্ট মারফত করলে সমস্যা অপেক্ষাকৃত কম হয়। পাঁচশোর উপর টিকিট থাকার পরেও প্রবীণদের জন্য লোয়ার বার্থ কমপক্ষে একটাও পাওয়া যায় না। এটাই এজেন্টকে দিলে প্রায় সব ক’টি বার্থই লোয়ার হয়ে যায়। রেলের ভাড়া নানা উপায়ে বেড়েছে। প্রবীণদের ছাড় উঠে গিয়েছে। নানা রকম উন্নয়নমূলক ঘোষণা রোজই হয়। অথচ, টিকিট কাটা থেকে যাতায়াত, সময়ানুবর্তিতা থেকে পরিচ্ছন্নতা— সবেতেই সমস্যা লেগে থাকে। প্রশ্ন হল, আর কত দিন এ ভাবে যাত্রীদের ভুগতে হবে?
অরিত্র মুখোপাধ্যায়, শ্রীরামপুর, হুগলি
অটোর দৌরাত্ম্য
যাদবপুর-সন্তোষপুর রুটে অটোওয়ালারা গাড়িতে হামেশাই চার জনের জায়গায় পাঁচ জন যাত্রী তোলেন, যা বেআইনি। একটু রাত হলে বা ঝড়বৃষ্টি হলেই পুরোটা বুক করা অটোর সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে মাঝপথের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। অনেক সময় দেখা যায় খালি অটো যাত্রী না তুলেই চলে যায়। জিজ্ঞাসা করলে উত্তরটুকুও দেয় না। এর কারণ বোধগম্য হয় না। সেই সঙ্গে কাটা রুটের ভোগান্তি তো আছেই। আর আছে খুচরো পয়সার ঝামেলা। সব মিলিয়ে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য শিকেয় ওঠে। যথাযথ ব্যবস্থার জন্য পরিবহণ দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
অসিত কর্মকার, কলকাতা-৭৫
প্রযুক্তির ফল
মোবাইল ফোন আসার আগে পর্যন্ত মানুষ চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ রাখত। যে মানুষটি সারা বছর চিঠি লেখার ধার-পাশ দিয়ে যেতেন না, তিনিও বিজয়া এলে পোস্ট কার্ডে শুভেচ্ছা-ভালবাসা জানিয়ে প্রিয়জনকে চিঠি পোস্ট করতেন। তখন পোস্ট অফিসে ভিড় জমে যেত পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ড, খাম কেনার জন্য। শুধু তা-ই নয়, পোস্টম্যান বাড়িতে চিঠি দিতে এলে তাঁকেও মিষ্টি মুখ করানো হত। এই ভাবেই গড়ে উঠত বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক।
কিন্তু সেই দিন চলে গেছে। এখন ফোনেই শুভেচ্ছা-ভালবাসা বিজয়ার প্রণাম জানানো হয়। কোথাও যেন প্রযুক্তি এসে সেই সামাজিক যোগাযোগ, বন্ধন ও আন্তরিকতাকে নষ্ট করে দিয়েছে।
সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)