Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: ‘‘ও ছেলের মতো’’

শম্ভুবাবু আমার সামনে এসে গম্ভীর গলায় বললেন, ‘‘আমাকে আবার এ সবের মধ্যে ডাকাডাকি কেন?’’ মুখোমুখি ওই কণ্ঠস্বর শুনে নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

শম্ভু মিত্র

শম্ভু মিত্র

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

সুদেষ্ণা বসুর ‘সত্যের সন্ধানে তিনি ডাক দিয়েছিলেন...’ (পত্রিকা, ৩০-৬) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কিছু কথা। ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি। আমি পার্ক সার্কাস অঞ্চলে নামকরা একটি স্কুলের প্রাতঃকালীন বিভাগে শিক্ষক তথা করণিক। বিদ্যালয়ে ছাত্র-ভর্তির পরীক্ষা চলছে। একটি মুসলিম বাচ্চা ছেলে (নামটা মনে পড়ছে না) তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পূরণ করা ফর্ম নিয়ে আমার কাছে এসেছে। ফর্মে ওর অভিভাবকের ঘরে নাম রয়েছে শম্ভু মিত্র, ঠিকানা— ১১এ, নাসিরুদ্দিন রোড, কলকাতা-১৭। আমার প্রিয় নাট্যব্যক্তিত্বের নাম দেখে চমকে উঠলাম। ছেলেটিকে পরের দিন ওর অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে আসতে বললাম। পরের দিনই ছেলেটির সঙ্গে শম্ভুবাবু আমার সামনে এসে গম্ভীর গলায় বললেন, ‘‘আমাকে আবার এ সবের মধ্যে ডাকাডাকি কেন?’’ মুখোমুখি ওই কণ্ঠস্বর শুনে নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। নিজেকে সামলে নিয়ে আমি ওঁকে এক জন মুসলিম ছেলের অভিভাবক হিসাবে এক জন হিন্দু মানুষের নাম থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলাম। জবাবে উনি জানিয়েছিলেন, ‘‘ও আমার ছেলের মতো।’’ এর পরে ভর্তি-সংক্রান্ত কিছু কথাবার্তা বলে উনি চলে গিয়েছিলেন। ওঁর সঙ্গে ওটাই আমার প্রথম ও শেষ সাক্ষাৎকার।

মানসকুমার রায়চৌধুরী

কলকাতা-২৬

অসমে বাঙালি

‘এনআরসি নিয়ে বৈঠক’ (৫-৭) সংবাদে দেখলাম, বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর এবং ডিজিপি জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অসমের বাঙালিরা যদি নিজেদের ন্যূনতম অধিকার রক্ষার জন্য সামান্য উদ্যোগী হন, পুলিশ যে তা স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।

এনআরসি প্রক্রিয়ায় বাংলাভাষীদের হয়রানির প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরেই বরাক উপত্যকায় নানা কর্মসূচি হচ্ছে। কোনও অশান্তি হয়নি। অথচ, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বেশির ভাগ বৈদ্যুতিন মাধ্যম, পত্রিকা, রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংস্থা ও বুদ্ধিজীবীদের একাংশ গত কয়েক মাস ধরে এনআরসি ও প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল নিয়ে বঙ্গভাষীদের বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষমূলক প্রচার বাধাহীন ভাবে চালাচ্ছেন, তা অকল্পনীয়। ‘বাংলাদেশি’রা নাকি স্থানীয় মানুষদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করছে। এটি বলার আগে তাঁরা স্বাধীনতা-পূর্ব জনগণনাগুলির তথ্য এবং ১৯৫১-র জনগণনার কৃত্রিম তথ্যগুলির কথা ভুলে যান।

এখন মহামান্য সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বা তার পরে আগত মানুষগুলিকে চিহ্নিত করে ‘বিদেশি’ নির্ধারণের কাজ চলছে। এনআরসি-র প্রথম তালিকা মাস ছয়েক আগে বেরিয়েছে। তাতে প্রায় এক কোটি উনচল্লিশ লক্ষ মানুষের নাম নেই। এঁদের প্রায় সবাই বঙ্গভাষী। দ্বিতীয় তালিকা ৩০ জুন বেরোনোর কথা ছিল। বন্যার জন্য তা পিছিয়ে প্রকাশিত হবে ৩০ জুলাই। অসমের বঙ্গভাষীরা (কিছু সংখ্যালঘু ভাষাগোষ্ঠীর মানুষও আছেন) এই দিনটির জন্য দুরুদুরু বক্ষে অপেক্ষা করছেন। কার নাম বাদ যাবে ঠিক নেই। বাদ গেলে তিনি রাষ্ট্রহীন।

বরাকের সাম্প্রতিক সংবাদপত্রগুলিতে চোখে পড়বে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য অসহায় বাঙালি নারী-পুরুষের দিশেহারা দৌড়ঝাঁপের খবর, ডিটেনশন ক্যাম্পের বর্ণনা, ‘বিদেশি’ নামক কাল্পনিক শত্রুদের শায়েস্তার জন্য নতুন প্যাঁচ উদ্ভাবনের সংবাদ। চোখে পড়বে বিচিত্র সব শব্দবন্ধ, লিগ্যাসি ডেটা, বংশবৃক্ষ, এনআরসি সেবাকেন্দ্র, রাজ্যিক ‘সমন্বয়ক’। অসমের ভাষাগত সংখ্যলঘুরা এখন দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন, বাইরের পৃথিবী এ সবের খবর বড় একটা পায় না বা রাখে না। এমনকি পশ্চিমবঙ্গও উদাসীন।

অরিজিৎ চৌধুরী

কলকাতা-৭৫

সন্তান, স্মার্টফোন

‘সন্তানের হাতে স্মার্টফোন দেওয়ার বদলে...’ (পত্রিকা, ৩০-৬) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন। স্মার্টফোন— ইঞ্চি ছয়েক লম্বা এই যন্ত্রটা এখন আমাদের জীবন জুড়ে রয়েছে। ছোটবেলায় স্কুলে আমাদের রচনা লেখার বিষয় ছিল ‘বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ’। স্মার্টফোনের অপব্যবহার দেখে মনে হয় বিজ্ঞানের এই আবিষ্কারটি অভিশাপ ডেকে এনেছে আমাদের জীবনে। আজ থেকে ২৫/৩০ বছর আগে, আমাদের ছেলেবেলাটা এখনকার মতো ছিল না। প্রতি দিন স্কুলের পর বাড়ির কাছের মাঠে কয়েক জন বন্ধু জড়ো হতাম। ফুটবল, ক্রিকেট, আর শীতকালে ব্যাডমিন্টন ছিল আমাদের সঙ্গী। খেলতে খেলতে মনে হত, সন্ধের আঁধার একটু দেরি করে নামলে ভাল হয়। সামনে কার্টুন না চললে খাবার খাব না— এ জাতীয় বায়নাক্কার সুযোগই ছিল না। মনে পড়ে, ছুটির দিনে দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় মায়ের কাছে গল্প শোনার আবদার করতাম। মা শোনাতেন আলিবাবা আর চল্লিশ চোরের গল্প, রূপকথার গল্প, ভূতের গল্প। গল্প শুনতে শুনতে কত কিছু কল্পনা করেছি। জানি, অত বছর আগের সময়ের সঙ্গে এখনকার তুলনা চলে না। সে সময় অধিকাংশ পরিবার ছিল যৌথ পরিবার, আমাদের মা, কাকিমা, জ্যাঠাইমারা কেউ চাকরি করতেন না, ছিলেন গৃহবধূ। তখন সন্তানের সঙ্গে মায়ের ‘বন্ডিং’ ছিল এখনকার চেয়ে শতগুণ বেশি। তখন স্মার্টফোন মায়ের সাহচর্যের বিকল্প ছিল না।

শুধু বাচ্চাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, সবার আগে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে আমাদের, বাবা-মায়েদের। সন্তান খেতে না চাইলে টেলিভিশনে কার্টুন চালিয়ে ঘুরপথে বোকা বানিয়ে খাওয়ানোর কুঅভ্যাসের বীজ তো আমরাই বপন করেছি। সারা দিন বাবা-মায়ের সাহচর্য থেকে বঞ্চিত হওয়া সন্তানকে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে সময় না দিয়ে, আমরা নিজেরাই ডুবে থেকেছি ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে। শিশুদের মন ভীষণ ভাবে অনুসন্ধিৎসু। ওই যন্ত্রটার মধ্যে দিনরাত বাবা-মা’কে নিমগ্ন হয়ে থাকতে দেখে প্রথমে ওদের মনে জেগে ওঠে প্রশ্ন: কী আছে ওতে? বাবা মা কী দেখে? সেই সূত্রপাত। যদি আমরা ফোন ব্যবহারে নিজেদের সংযম দেখাতে পারি, তা হলেই এই যন্ত্রটির ব্যবহারে ছোটরা সংযত হবে।

সুদীপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা-৭৩

সর্বনাশের পথ

চার বছরের নাতিটিকে যখন আমার মেয়ে স্কুলবাস থেকে নামাচ্ছে, এক শিশুর মা প্রশ্ন করেন, বাড়িতে ও কী করে খায়? বুঝতে না পেরে আমার মেয়ে প্রশ্নের মানে জিজ্ঞাসা করে। তিনি বলেন, ওঁর ছেলে খেতে বসার সময় হয় টিভি বা মোবাইল না চালালে খায় না। আশ্চর্য! এদের মায়েরা ছোটবেলায় কী ভাবে খেয়েছেন? কোন টিভি বা মোবাইলের সাহায্যে? নিজের হাতে বাচ্চাদের সর্বনাশের পথে ঠেলে দিচ্ছেন, তা কি বুঝতে পারছেন না?

বাবা-মায়েরা মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকের আগেই ছেলেমেয়েদের হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিচ্ছেন। কেন? না, তারা যেখানেই যাক ফোনে জানতে পারবেন যে কোথায় আছে। সত্যিই কি তাই? নিজে দেখেছি, একটি মেয়ে তার বন্ধুবান্ধব-সহ সিনেমা হলে ঢুকছে এবং মাকে ফোনে বলছে, এই টিউশনে ঢুকছি, আর ফোন কোরো না।

শর্মিষ্ঠা সেনগুপ্ত

কলকাতা-৪৫

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘দ্বিশতরান করে নজির ফখরের’ (পৃ ১৬, ২১-৭) শীর্ষক সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে, এক দিনের ক্রিকেটে সব চেয়ে বেশি রানের নজির শ্রীলঙ্কার। ৪৪৩ করেছিল নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে। আসলে সব চেয়ে বেশি রানের রেকর্ড ইংল্যান্ডের। ৪৮১-৬, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Muslim Hindu Child Father
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE