Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: আইনকে কাঁচকলা

‘আইনের অনাথ সন্তান’ শীর্ষক নিবন্ধে (২০-১২) আমজনতার মনের কথা সঠিক ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বাস্তব প্রাপ্য সুবিধা সম্বন্ধে আমরা সজাগ হলেও, অদৃশ্য প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ উদাসীন।

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:২৮

‘আইনের অনাথ সন্তান’ শীর্ষক নিবন্ধে (২০-১২) আমজনতার মনের কথা সঠিক ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বাস্তব প্রাপ্য সুবিধা সম্বন্ধে আমরা সজাগ হলেও, অদৃশ্য প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ উদাসীন। এই বিষয়টি যেন বায়বীয়, অধরা, তাই ভবিতব্যের ওপর সঁপে দিয়ে আমরা নির্ভার থাকতে অভ্যস্ত।
পরিবেশ সম্পর্কে রাষ্ট্রের অবহেলা ও উদাসীনতা এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। কাগজে-কলমে এর জন্য দফতর, মন্ত্রী, আমলা রয়েছে। অথচ শব্দবাজি নিয়ে ফি বছর দীপাবলির আগে লুকোচুরি খেলা হয়, ডিজে নামক শব্দদানব অন্তরাত্মায় কাঁপুনি ধরিয়ে ছাড়ে।
কালো ধোঁয়া বার করে সরকারি–বেসরকারি যান পরিবেশের তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়ায়, নজরদার নজরানা পকেটস্থ করে। ‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু’— আবৃত্তি করতে গিয়ে বালক বিষম খায়।
যে সংগঠনের শীর্ষে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিয়োগের রীতি, সেখানে এক জন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার নিযুক্ত হয়। রাষ্ট্রের অঙ্গুলিহেলনে তথাকথিত নিরপেক্ষ সংস্থাগুলির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।
‘ও সব মানবাধিকার-টানবাধিকার আমি বুঝে নেব’ অভয়বাণী দেন ভূতপূর্ব শাসক, ‘বেতন দিচ্ছে সরকার তাই নাক গলানোর অধিকার রয়েছে’ বলে টীকা-ভাষ্য অধুনা সুলভ। স্বাধীন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার আজ অনেক ক্ষেত্রে খর্ব হতে দেখি, নিজের ভোট নিজে দেওয়ার মতো অধিকারও অনেক সময় ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায়। চার পাশে শুধু আস্ফালন, যা কিছু আলোড়ন তার অনেকটাই মিডিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
‘‘দুনিয়ার সবচাইতে সহজ কাজ হল আইন ফাঁকি দেওয়া’’, মন্তব্য করেছিলেন জর্জ অরওয়েল। রাষ্ট্রপিতারা নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য আইন প্রস্তুত করেন, তার পর সর্বাগ্রে নিজেরাই তাকে কাঁচকলা দেখান।

রাজশেখর দাস
কলকাতা-১২২

বিশ্বভারতী


স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বিশ্বভারতী ১০০’ (রবিবাসরীয়, ২৩-১২) নিবন্ধটির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েকটি তথ্যপ্রমাদের কথা বলতে চাই।
১) ‘‘রবীন্দ্রনাথ ৭ই পৌষ ১৩০৮ ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রমের’ প্রতিষ্ঠা করেন’’— একেবারেই ভুল তথ্য। মহর্ষির শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ডিড (২৬ ফাল্গুন ১২৯৪/ ৮-৩-১৮৮৮) নথিভুক্ত হওয়ার পর ৪/৫ কার্তিক ১২৯৫ /১৯-১০-১৮৮৮ তারিখে শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রমের প্রতিষ্ঠা হয়। সেই সভায় রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মসঙ্গীত পরিবেশন করেন। শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ডিডের অনুমোদনক্রমে ও মহর্ষির অনুমতি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ৭ পৌষ ১৩০৮ যা প্রতিষ্ঠা করেন সেটি ‘শান্তিনিকেতন ব্রহ্মবিদ্যালয়’। এর জন্য মহর্ষির শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের অছি তাঁর ভাইপো দ্বিপেন্দ্রনাথের প্রচুর বাধা অতিক্রম করতে হয়েছিল রবীন্দ্রকে (কবির ‘আশ্রমের রূপ ও বিকাশ’ নিবন্ধ মালার ৩নং এ বিস্তারিত উল্লেখ পাওয়া যাবে)। ‘শান্তিনিকেতন ব্রহ্মবিদ্যালয়’ ও ‘শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ এক নয়। প্রথমটি দ্বিতীয়টির একটি অংশ, তখনও ছিল, এখনও আছে। প্রথমটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, দ্বিতীয়টি আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়।
২) ‘‘১৩২৫ সালের পৌষ মাসের অষ্টম প্রভাতে (২৩/২৪-১২-১৯১৮)’’ নানা সমারোহে শান্তিনিকেতন আশ্রম এলাকার বাইরে দক্ষিণ দিকে ‘বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর’ স্থাপন হয়। সেই স্থানে পরে টেনিস কোর্ট— আরও পরে স্কুলের ছাত্রাবাস তৈরি হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ‘প্রতিষ্ঠা’ এক নয়। সে দিন ও আজও বহু ‘ভিত্তিপ্রস্তর’ স্থাপন হয়, যা পরে পরিত্যক্ত বা পরিবর্তিত হয়। কাজেই ‘‘১৩২৫/২০১৮ বিশ্বভারতীর শতবর্ষ’’ এই কথাটি জোর করে প্রতিষ্ঠা করা।
৩) ১৯২১ সনের ৮ পৌষ বিশ্বভারতী পরিষদ গঠিত ও বিশ্বভারতী পরিচালনার খসড়া সংবিধান পেশ ও গৃহীত হয়। যে সংবিধান ১৬-৫-১৯২২ কলকাতায় রেজিস্ট্রি হয়। একটি উদাহরণ দিই। ১৫-৮-১৯৪৭ ভারতবর্ষ ব্রিটিশ গভর্নরের তত্ত্বাবধানে ‘ডোমিনিয়ন স্টেটাস’ পেয়েছিল। ২৬-১-১৯৫০ ভারত নামে একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্ম/প্রতিষ্ঠা হয়।
৪) শ্রীমতী স্বাতী রবীন্দ্রনাথের ‘বিশ্বভারতী নিবন্ধমালার’ ২নং নিবন্ধের (১৮ আষাঢ় ১৩২৬— ৩/৪-৭-১৯১৯) শেষ অনুচ্ছেদটি উল্লেখ করে বলেছেন, এটিই তাঁর প্রতিপাদ্যের প্রমাণ। ঠিক তার আগের অনুচ্ছেদেই কবি লিখছেন— ‘‘বিশ পঞ্চাশ লাখ টাকা কুড়িয়ে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পত্তন করার সাধ্য আমাদের নেই।... বীজের যদি প্রাণ থাকে তা হলে ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হয়ে আপনি বেড়ে উঠবে।’’
অর্থাৎ, কবির কাছে ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’ তখনও ‘বীজ’ অঙ্কুরিত হয়নি। শ্রীমতী স্বাতী অত পরিশ্রম করে সুবিশাল প্রশান্ত পাল, রথীন্দ্র ডায়েরি না ঘেঁটে, যদি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ১৪৭ পাতার ‘শান্তিনিকেতন-বিশ্বভারতী’ পুস্তিকাটি পড়তেন, তা হলে এত প্রমাদ ঘটত না। আর কে অস্বীকার করবে যে, প্রভাতকুমারের ‘রবীন্দ্র জীবনী’ ও ‘শান্তিনিকেতনের ইতিহাস’-এর প্রতিটি বাক্য কবির অনুমোদিত, তাই প্রামাণ্য।


স্বরাজ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৯৬

প্রতিবেদকের উত্তর: পত্রলেখক বলেছেন, প্রশান্ত পাল না পড়ে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘শান্তিনিকেতন-বিশ্বভারতী’ পড়লে লাভ হত। অনেক নথিপত্র ঘেঁটে, বহু পরিশ্রমে লেখা প্রশান্ত পালের ‘রবিজীবনী’কে নস্যাৎ করার যুক্তি কী, বোঝা মুশকিল, তবে স্বরাজবাবুর উক্তিতে মনে হয় তিনি ধরেই নিয়েছেন, ‘শান্তিনিকেতন-বিশ্বভারতী’ আমি পড়িনি।
অথচ, প্রভাতবাবু লিখেছেন, ‘‘১৯১৮ সনের ৮ পৌষ (১৩২৫) বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠা হইলেও ১৯১৯ সনের জুলাই মাসের পূর্বে ইহার অধ্যয়ন-অধ্যাপনা কার্য্য আরম্ভ হয় নাই’’ (পৃষ্ঠা ১২৯; বক্ররেখ আমার)। অর্থাৎ প্রভাতকুমার— যাঁর লেখাকে ‘কবির অনুমোদিত তাই প্রামাণ্য’ বলে মনে করছেন স্বরাজবাবু— সেই প্রভাতবাবুই লিখেছেন বাক্যটি। প্রশান্ত পালের লেখায় ঘটনাটির বিশদ বিবরণ রয়েছে, যা আমি ব্যবহার করেছি।
স্বরাজবাবুর দ্বিতীয় ‘বক্তব্য’, বিশ্বভারতী গ্রন্থের ২ নম্বর নিবন্ধটিতে টাকার অভাব বিষয়ে কবির বক্তব্য, যা উনি উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এর থেকে স্বরাজবাবু বুঝেছেন যে ‘‘কবির কাছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’’ তখনও বীজ অঙ্কুরিত হয়নি। সবিনয়ে জানাই, স্বরাজবাবু কবির লেখার মর্ম উদ্ধার করতে পারেননি— রবীন্দ্রনাথ অর্থের বলে বলীয়ান উপকরণে সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এমন একটি বিদ্যাচর্চা কেন্দ্রের কথা বলছেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা ‘‘বিদ্যার সাধকদের চারিদিকে সমবেত...।’’
(পৃ ১৭) এবং পণ্ডিত বিধুশেখরকে ঘিরে এই ‘‘বিশ্বভারতীর প্রথম বীজ বপন’’ হয়ে গিয়েছে বলেই তাঁর বিশ্বাস। (পৃ ১৭)।
এই বাক্যগুলি এবং নিবন্ধে রবীন্দ্রনাথের দেওয়া পণ্ডিত ও শিল্পীদের তালিকা, আমার লেখায় যার উল্লেখ অাছে, স্বরাজবাবুর চোখে পড়েনি। কেন? কারণ ১৯২১-এর ২৩ ডিসেম্বরকেই প্রথাগত ভাবে আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা দিবস বলে গণ্য করা হয়, যদিও তা বিশ্বভারতী পরিষদের প্রথম অধিবেশন, যেখানে প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বভারতীকে সর্বসাধারণের হাতে তুলে দেওয়ার অঙ্গীকার করছেন। এই উক্তি সম্ভব হত না যদি ১৯১৮-তে বিশ্বভারতীর সূচনা এবং ১৯১৯-এ প্রাচ্য বিদ্যা, কলা ও সঙ্গীত চর্চা শুরু না হত।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল:
letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘বঞ্চনার অভিযোগে’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে (রাজ্য, পৃ ৫, ৭-১) লেখা হয়েছে, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষকেরা এ রাজ্যে বঞ্চিত, এই অভিযোগে রবিবার মহম্মদ আলি পার্ক থেকে ধর্মতলা ওয়াই চ্যানেল পর্যন্ত মিছিল করল বিজেপি প্রভাবিত ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেন্ড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন।’’ কিন্তু আসলে ওই মিছিলটি করেছিল বিজেপির শিক্ষক সেল। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

Environment Court Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy