E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: চারাগাছের অযত্ন

এখনকার শিশুরা বড় হতভাগ্য। চরম ব্যস্ততার এই যুগে তারা না পায় বড়দের আদর ভালবাসা, না পায় উপযুক্ত নৈতিক শিক্ষা। বহু সংখ্যক পরিবারে নিতান্ত অনাদরে অবহেলায় আগাছার মতো বেড়ে ওঠে শিশুরা।

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ০৬:০২

‘ছাত্রকে মার’ (৩০-৬) শীর্ষক এক কোণের ছোট খবরটি অনেকেরই হয়তো নজর এড়িয়ে গেছে। ঘটনা হল, মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের এক আবাসিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ৫০০ টাকা হারিয়ে ফেলেন। তিনি ওই স্কুলের হস্টেলের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্র সেটা চুরি করেছে ভেবে তাকে তিন দিন ধরে লাঠি, লোহার শিক দিয়ে বেধড়ক মারধর চালান। ছাত্রটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে এই রাজ্যেই দোকান থেকে চিপস চুরির অভিযোগে এক কিশোরকে দোকানদার প্রবল মারধর এবং অপমান করে। তার মা-ও এ কথা শুনে ছেলেটিকে শাসন করেন। পরের দিন সে একটি চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করে। চিঠিতে সে মাকে জানায়, আমি চিপস চুরি করিনি।

দু’টি ঘটনাতেই কোনও অনুসন্ধানের আগে অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তাদের চোর বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম ঘটনাটিতে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে, ছেলেটিই টাকা নিয়েছিল, সে ক্ষেত্রেও তাকে ‘মন্দ কাজ করতে নেই’ এ কথা কি বুঝিয়ে বলা যেত না? ছোটবেলায় তো শিক্ষক ও বাবা-মায়ের হাত ধরেই শিশুরা নীতিশিক্ষার পাঠ নেয়। পাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে ভাল-মন্দের তফাত বুঝতে শেখে। অন্তত আমরা শৈশবে তাই পেয়ে এসেছি।

এখনকার শিশুরা বড় হতভাগ্য। চরম ব্যস্ততার এই যুগে তারা না পায় বড়দের আদর ভালবাসা, না পায় উপযুক্ত নৈতিক শিক্ষা। বহু সংখ্যক পরিবারে নিতান্ত অনাদরে অবহেলায় আগাছার মতো বেড়ে ওঠে শিশুরা। খাওয়াদাওয়ার মতো সাধারণ চাহিদাগুলি মেটানো হলেও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া তেমন হয় না। অনেক পরিবারে আবার শিশুকে স্নেহ করার নামে তার যথেচ্ছ আবদার মেটানো হয়। সে ক্ষেত্রেও শিশুরা হয়ে ওঠে বেপরোয়া। চারাগাছকে প্রয়োজনমতো আলো, জল, মাটি না দিলে যেমন তার সুষম বৃদ্ধি হয় না, শিশুদেরও শুরু থেকেই যত্ন নিলে তবে তারা সুন্দর ভাবে বড় হয়ে ওঠে। এটা যেন আজকের অবক্ষয়ী সমাজ ভুলে যেতে বসেছে। আর কেউ ভুল করলেই তো ঠিক করার প্রশ্নটা আসে। অসহিষ্ণুতার কারণে আমরা কি সেই গোড়ার কথাটাই ভুলে যেতে বসেছি?

এক দিকে বর্তমান সমাজে তীব্র আর্থিক অনিশ্চয়তা, অন্য দিকে আত্মসর্বস্বতা একটা ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলেছে বেশিরভাগ মানুষকে। পরিবারের বাইরে, এমনকি নিজের বাইরে অন্য কিছু নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মানসিকতা কমে গিয়েছে ভয়ঙ্কর হারে। কমে গিয়েছে অপরের প্রতি ধৈর্য, সহনশীলতা। অন্য দিকে স্নেহ, ভালবাসা, ঔদার্য এ সব অনেকটাই উধাও।

সেই জন্য একটি শিশুর উপর নির্যাতন করতে, চোর অপবাদ দিতেও তাঁদের বিবেকে বাধে না।

সোমা নন্দী, কলকাতা-৯

শিক্ষার দাম

ঈশা দাশগুপ্তের ‘নগদ মূল্যে কিনে আনা শিক্ষা’ (১-৭) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। বেশি কিছু দিন আগেও এত রমরমা ছিল না প্রাইভেট বা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের। সরকারি স্কুলগুলিতেই প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক অবৈতনিক কিংবা স্বল্প বেতনের শিক্ষাঙ্গনে ছেলেমেয়েরা ভর্তি হত লাইন দিয়ে। আমার বেশ মনে আছে আমাদের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (পাঠশালা) শিশুশ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় শ্রেণিগত ভাবে বিভাগ তৈরি করতে হয়েছিল। বাংলায় ‘ক’ ও ‘খ’ বিভাগ, মানে ইংরেজিতে সেকশন ‘এ’ ও ‘বি’।

সহজ পাঠ, কিশলয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গণিত, ইতিহাস, ভূগোল— এই সব বই স্বল্পমূল্যে কিনতাম অথবা কেউ পাশ করে যাওয়ার পর তার কাছ থেকে অর্ধেক মূল্যে কিনতাম। পরবর্তী সময়ে বিনামূল্যে বই প্রদান করা শুরু হয় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে। ছাত্রছাত্রীদের বেতন কাঠামোরও পরিবর্তন করা হয়। বাজারে দিস্তা কাগজ (সাদা ও লাইন টানা) বিক্রি হত। সেই কাগজ কিনে বাড়িতে খাতা বানানো হত। বাড়িতে তৈরি খাতা কিংবা বইয়ে আমরা খবরের কাগজ অথবা ক্যালেন্ডারের মলাট দিতাম।

আস্তে আস্তে চোখের সামনে বদলে গেল শিক্ষার পরিবেশ। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠল ইংরেজি মাধ্যমের বেসরকারি স্কুল। বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করলে তার কৌলীন্য বজায় থাকে না। একটি ঘটনার কথা বলি। পাড়ায় রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত সন্ধ্যা হবে। আমার প্রতিবেশী এক বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার ছেলের নাম দিয়েছ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে? খুব গর্বের সঙ্গে ছেলেটির মা বলল, “না কাকু, ও তো বাংলায় কোনও কবিতা জানে না। ওদের স্কুলে সব ইংরেজি কবিতা শেখায়, তাই নাম দিইনি।” স্কুলে শেখায় না মানে বাড়িতেও শিখবে না? অদ্ভুত এক পরিস্থিতি। সকালে শিশুটি কোনও ক্রমে ঘুম থেকে উঠে পাড়ার মোড়ে গিয়ে স্কুলগাড়ির অপেক্ষা করে, আর বিকেলে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে এক দিকে স্কুল ব্যাগ আর এক দিকে জলের বোতল হাতে ফেরে। আমাদের বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়েছে, যে স্কুল বা কোচিং সেন্টার যত দামি, সেই স্কুল বা কোচিং সেন্টারের লেখাপড়া তত ভাল। সেই দিকে ছুটতে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে এক বড় সংখ্যক শিশুর শৈশব। এর বিপদ আমরা বুঝতে পারছি কি?

তমাল মুখোপাধ্যায়, ডানকুনি, হুগলি

বঞ্চনা

আমরা যারা সরকারি কর্মচারী, তারা জানি সরকারি কর্মচারীদের বেতনের বিভিন্ন অংশ হল— মূল বেতন মানে বেসিক পে, মহার্ঘ ভাতা বা ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স, ঘরভাড়া বা হাউস রেন্ট অ্যালাওয়েন্স, চিকিৎসা ভাতা বা মেডিক্যাল অ্যালাওয়েন্স। এইগুলো যোগ করেই মোট বেতন হয়ে থাকে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নিরিখে মূল্যসূচক নির্ধারিত হয়, তার উপর ভিত্তি করে মাঝেমধ্যে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ বাড়ানো হয়, ফলে বেতন কিছুটা করে বাড়ে। তাই ডিএ কখনও দয়ার দান নয়।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর থেকে এটা প্রশাসনিক শীর্ষ স্তরের দয়ার দানের মতোই হয়ে গিয়েছে। তাঁরা মনে করলে দেবেন, না মনে করলে দেবেন না, সে এই রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা যতই আন্দোলন করে মামলা জিতুন এবং হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট যতই বকেয়া ডিএ দিতে নির্দেশ দিক না কেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারিগণ বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারিগণ সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন, কখন তাঁদের সুমতি হয়। অথচ, রাজকোষের টাকায় বিভিন্ন রকম দান-খয়রাতি, মেলা-খেলার আয়োজন করতে সরকারের কোনও অসুবিধা হয় না। কিন্তু দিন-রাত প্রাণপাত করে যে সরকারি কর্মচারীরা প্রশাসনের চলার পথটি মসৃণ করতে সাহায্য করেন, বা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে শামিল হয়ে রাজ্যকে অন্য রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে যেতে সাহায্য করেন, তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা অবহেলিতই থেকে যায়।

বেতন থেকে ডিএ নামক বিষয়টি তুলে না দিলে বোধ হয় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বঞ্চনা থেকে মুক্তি নেই।

সঞ্জয় কুমার মিশ্র, কান্দি, মুর্শিদাবাদ

জমা জল

গোবরডাঙায় আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তা-সহ এলাকার অনেক রাস্তার অবস্থা বর্তমানে চরম খারাপ। সামান্য বৃষ্টিতে জল জমে যায় এবং প্রায় গোটা এলাকা কাদায় ভরে যায়। গঙ্গার জলের জন্য পাইপ বসানোর কারণে গর্ত হওয়ায় রাস্তাগুলি অনেকটাই চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। তার উপর এই জমে থাকা জলের সঙ্গে নর্দমার জল মিশে যাচ্ছে। ফলে রোগ সংক্রমণেরও আশঙ্কা থাকছে। আমি ছাত্র। জমা জলের জন্য স্কুলে যেতে, পড়তে যেতে রোজ অসুবিধায় পড়ছি। সামনে পরীক্ষা। তার প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটছে। এই দীর্ঘ সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই।

অভিনব বিশ্বাস,গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Parents Education

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy